চীন-রাশিয়ার বাণিজ্যেও যুদ্ধের প্রভাব

0

ইউক্রেনে রুশ সামরিক হামলার কারণে বিশ্বের বহু দেশ রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ত্যাগ করলেও চীন পাশে রয়েছে। কিন্তু রুবলের মানের পরিবর্তনের কারণে রাশিয়ায় চীনা রফতানি খাতটি বেশ সমস্যার মধ্যে পড়েছে। অর্থাৎ এটা বলা যায় যে ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তার ঢেউ চীনে গিয়েও লেগেছে।

ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর রাশিয়া থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু সে পথে যায়নি চীনের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা সেখানে থেকে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে রুবলের বিনিময় মূল্য পতনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়ে গেছে চীনের ছোট কোম্পানিগুলো। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে উভয় পক্ষই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি স্পেশাল অপারেশন নাম দিয়ে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এর পর থেকেই পড়তে শুরু করে রুবলের দাম। বিশেষ করে ডলার ও ইউয়ানের বিপরীতে রুবলের দাম অনেক পড়ে যায়।

রাশিয়ায় ভ্যাকুয়াম ফ্লাক্স রফতানি করেন এমন একজন ব্যবসায়ী ডেং জিনলিং বলেন, যেসব পণ্য রাশিয়ায় পাঠানোর কথা ছিল সেগুলো এখন তার গুদামে পড়ে রয়েছে। অথচ গত বছর তার ব্যবসার ৩০ শতাংশই এসেছিল রাশিয়া থেকে। তিনি বলেন, রুবলের বিনিময় মূল্য আরেকটু ভালো হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনিসহ আরো অনেক ব্যবসায়ী।

আরেক চীনা ব্যবসায়ী গুও জানান, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে বিছানার চাদর ও রান্নাঘরের সামগ্রী বিক্রিতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে তার প্রতিষ্ঠান। সাধারণত যে পরিমাণ সামগ্রী তারা বিক্রি করেন বা রাশিয়ায় পাঠান, এবার তার পরিমাণ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।

চীন হলো রাশিয়ার সবচেয়ে বড় আমদানির উৎস। কেবল গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসেই রাশিয়ার কাছে প্রায় ১ হাজার ২৬০ কোটি ডলারের পণ্য সরবরাহ করেছে চীন। কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার, গাড়ি, জুতা ও খেলনা। তবে এ মুহূর্তে রাশিয়ার আমদানিকারক ও চীনের রফতানিকারক উভয় পক্ষই ব্যবসা বন্ধ করে রেখেছেন। এ যুদ্ধ আর উত্থান-পতনের শেষ কোথায় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন তারা।

রাশিয়ায় পণ্য রফতানি করে এমন ২০ হাজার ছোট চীনা প্রতিষ্ঠানের জোটের প্রধান শেন মুহুই বলেন, রুবলের অবনমনের অর্থ হলো প্রতিবার আপনি রাশিয়ায় পণ্য বিক্রি করার পর ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ খুব কম রুশ গ্রাহকই স্বেচ্ছায় চীনা ইউয়ানে মূল্য পরিশোধ করতে রাজি হচ্ছেন। এ যুদ্ধ শুরুর পর তাদের জোটের ৯০ শতাংশ সদস্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলেও জানান তিনি। এ ব্যবসায়ী নেতা আরো বলেন, আমরা চাইলেই দাম বাড়িয়ে দিতে পারি না। কারণ সেটা রাশিয়ার মানুষের জন্য অতিরিক্ত হয়ে যাবে। ফলে রাশিয়ায় এখন পণ্য রফতানি করার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণকে আগ্রাসন বলতে বা এ ব্যাপারে নিন্দা জানাতে অস্বীকার করেছে চীন। শাওমি বা গ্রেট ওয়াল মোটরের মতো বড় চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো রাশিয়ায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চুপই ছিল। তবে সরাসরি কিছু না বললেও রাশিয়ায় বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে ব্যবসা করছে এমন চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাবধানতার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আপাতত নতুন কোনো বিনিয়োগেও যাচ্ছে না চীন। যেমন চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান সিনওপেকের সঙ্গে রাশিয়ার পেট্রোকেমিক্যাল খাতে বিনিয়োগ সংক্রান্ত আলোচনা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটি দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com