‘নির্মম ভবিষ্যত থেকে বাঁচার পথ খুঁজছে রাশিয়া’
মস্কো থেকে সাইবেরিয়ার তেলের রাজধানী খ্যাত নভোসিবির্স্ক এবং সেন্ট পিটার্সবার্গের বুদ্ধিজীবী কেন্দ্র থেকে মুরমানস্কের পারমাণবিক সাবমেরিন ঘাঁটি পর্যন্ত–বিচ্ছিন্নতা, সেন্সরশিপ এবং যুদ্ধের কারণে অবরোধ আরোপের ফলে একটি নির্মম ভবিষ্যত থেকে বাঁচার পথ খুঁজছে রাশিয়া। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
মস্কোতে বসবাসরত ডিজিটাল মার্কেটার ২৬ বছর বয়সী ভেরোনিকা (ছদ্মনাম) এ ব্যাপারে বলেন, ২৪ ফেব্রুয়ারির পর সবকিছু বদলে গেছে। আমাদের জীবন এর আগে এবং পড়ে, এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে।
রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছে জানতে পারার কয়েকদিন পর তার কয়েকজন বন্ধু এবং পরিচিতদের হঠাৎ করে ব্যাগ গুছিয়ে এবং ভাড়া চুক্তি ভঙ্গ করে বাড়ি ছেড়ে দিতে দেখেছিলেন তিনি। তবে তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চাননি। এর বদলে রাজধানীতে থেকেই যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
রাশিয়ায় মার্চের শুরুতে নতুন আইন পাস করা হয়। নতুন আইনে যুদ্ধ সম্পর্কিত শেয়ার করা কোনো খবর কর্তৃপক্ষের কাছে মিথ্যা প্রমাণিত হলে ১৫বছর পর্যন্ত সাজার বিধান রাখা হয়। এমনকি রুশ কর্তৃপক্ষ ‘যুদ্ধ’ শব্দটি ব্যবহার করাও বেআইনি করেছে বলে ভেরোনিকা জানান।
তবে ভেরোনিকারে আশার শেষ সুতাও ছিঁড়ে যায় রাশিয়ার জনগণের প্রতিক্রিয়ায়। কারণ বিপুল সংখ্যক রুশ জনগণ ‘টিভিতে দেখানো প্রপাগান্ডাতেই’ বিশ্বাস করে’ বলে ভেরোনিকার ধারণা।
এ ব্যাপারে ভেরোনিকা বলেন, আমি যে সময় যুদ্ধের প্রতিবাদে চিৎকার করেছি, বিক্ষোভ মিছিলে গেছি, প্রতিবাদ লিপি জমা দিয়েছি– সে সময় মানুষ কেনাকাটা করেছে। আমি এ রকম মানুষের সঙ্গে থাকতে চাই না। তারা আমার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে।
এদিকে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ধারাবাহিকতায় আর্থিক লেনদেনের বার্তা প্রেরণের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুইফট পেমেন্ট নেটওয়ার্ক থেকে বেশকিছু রাশিয়ান ব্যাংকগুলোকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মিত্ররা।
এতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদগুলো জব্দ করা হবে। সেই সঙ্গে বৈদেশিক রিজার্ভে রাশিয়ার প্রবেশাধিকার সীমিত করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধের মূল টার্গেট রাশিয়ার আর্থিক খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর। রাশিয়ার ৮০ ভাগ ব্যাকিং সম্পদের নিয়ন্ত্রক এই ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলো।
ইউক্রেন অভিযানের দিনই রাশিয়ার প্রধান দুই ব্যাংক এসবার ও ভিটিবির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। রাশিয়ার মোট ব্যাংকিং সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ এসবার ব্যাংকের অধীন। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে ব্যাংক ওতক্রিটি, সোভকম ব্যাংক ওজেএসসি, নোভিকম ব্যাংক এবং অন্যান্য ৩৪টি সাবসিডিয়ারির ওপর।
ভিটিবি রাশিয়ার ব্যাংকিং খাতের এক-পঞ্চমাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের শিকার হয়েছে এরকম মাত্র ১৩টি প্রতিষ্ঠানেরই মোট সম্পদের মূল্য এক লাখ চল্লিশ হাজার কোটি ডলার।