ইউক্রেনের পরিণতির পথে চীনের প্রতিবেশী দেশগুলো
ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানাতে গত সপ্তাহে এক হয়েছিলেন সামরিক জোট ন্যাটোর নেতারা। সেখানে তারা রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে নতুন উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এখন পর্যন্ত যদিও থামার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছেন না রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে তার কমান্ডাররা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, রাশিয়া কিয়েভের প্রতিরোধের মুখে তাদের অভিযানের লক্ষ্য বদলাচ্ছে।
তবে নিউ ইয়র্ক পোস্টে লেখা এক বিশ্লেষণে আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষক ব্রায়ান ক্লার্ক লিখেছেন, ইউক্রেনের মতো একই পরিণতি হতে যাচ্ছে চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোর। তাই পশ্চিমা মিত্রদের উচিৎ ইউক্রেন থেকে পাওয়া শিক্ষাকে চীনের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো। ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা চীনকে পশ্চিমাদের জন্য বড় হুমকি হিসেবে তুলে ধরেন তিনি। রাশিয়া ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ক্রাইমিয়া এবং ডনবাস অঞ্চলে জয় নিশ্চিত করার পথে রয়েছে। ক্রাইমিয়া রাশিয়া আগেই দখল করেছে এবং এখনও প্রায় সমগ্র ডনবাসই রুশপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এই দুই অঞ্চল রাশিয়া দখলে নিয়েছে ভাড়াটে যোদ্ধা এবং বিদ্রোহীদের উস্কে দেয়ার মাধ্যমে।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনও মস্কোর এই কৌশল অনুসরণ করছে বলে উল্লেখ করেন ব্রায়ান। সেখানে চীন কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করছে। তারা আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে নিজেদের বিস্তার অব্যাহত রেখেছে। সেখানে নিজের সামরিক বিভিন্ন অস্ত্র মোতায়েন করেছে চীন। এতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক প্রতিবেশি দেশ হুমকিতে পড়েছে। নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং এন্টি-শিপ মিসাইল প্রতিবেশীদের সীমান্তে মোতায়েনের মাধ্যমে চীন যে কোনো সংঘাতে নিজের জন্য সুবিধাজনক অবস্থান নিশ্চিত করে রেখেছে। পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার মতো চীনও তার দীর্ঘ পাল্লার অস্ত্রগুলো দিয়ে বিশাল সমুদ্রে তার বাহিনী ও কোস্ট গার্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। যদিও দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগরে চীনা বাহিনী প্রতিবেশি দেশগুলোর নৌবাহিনীকে অব্যাহতভাবে বিরক্ত করে চলেছে। প্রতিবেশি দেশগুলোর বাণিজ্য জাহাজ ও জেলেদের হেনস্থা করছে।
মার্কিন মিত্ররা চীনের এই আচরণ বন্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় ব্যর্থ হচ্ছে পশ্চিমারা। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে মহড়া বৃদ্ধি করলেও তাতে চীনের আচরণে কোনো পরিবর্তন আসছে না। মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ চলে গেলে এ অঞ্চলের মিত্ররা আবারও চীনের হুমকিতেই পড়ে যাচ্ছে। যদিও এই সপ্তাহে পেন্টাগন চীনকে থামাতে নতুন প্রতিরক্ষা কৌশল ঘোষণা করেছে। এর মধ্য দিয়ে চীনের হুমকিতে থাকা মার্কিন মিত্রদের প্রতিরক্ষা উন্নত করা হবে। তবে সেটি কেমন কার্যকরি হবে তা সময়ই বলে দেবে।
লেখায় চীনকে থামানোর কৌশলও বাতলে দেন ব্রায়ান। বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে ধারণা করা যাচ্ছে, চীন কোনো ধরণের হুমকিতে থামছে না। শক্তিশালী চীনা সেনাবাহিনীর হাতের মধ্যেই রয়েছে তাইওয়ানের মতো টার্গেটগুলো। তাই বেইজিং-এ থাকা নেতারা ভাবতেই পারেন তারা তাইওয়ান দখলে সফল হবেন। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে যতটুকু কাবু করেছে, চীনকে তাও করবে না। তাই চীনকে থামাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য এ অঞ্চলে টেকশই অপারেশন পরিচালনা করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের আগ্রাসী রূপকে থামাবে, তার ক্ষমতা বুঝার চেষ্টা করবে এবং সে অনুপাতে নিজের সামরিক কৌশল সাজাবে।
চীনের প্রভাবকে খর্ব করতে যুক্তরাষ্ট্রকে সেখানে ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধ ও সমুদ্রের নিচে যুদ্ধ করতে হতে পারে। দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপগুলোতে ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধ চালাতে যুক্তরাষ্ট্র এমকিউ-নাইনবি’র মতো এয়ারক্রাফটগুলো ব্যবহার করতে পারে। এগুলো দিয়ে সমুদ্রে থাকা চীনা যুদ্ধ জাহাজকে প্রতিহত করা যাবে। চীনের রাডার সিস্টেম জ্যাম করে দেয়া যাবে। রেডিও ও অন্যান্য যেসব তরঙ্গের মাধ্যমে চীন তথ্য সংগ্রহ করে তাও ঠেকিয়ে দিতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এতে করে মার্কিন যুদ্ধ বিমান টার্গেট করে হামলা চালাবে চীন। এর আগে মধ্যপ্রাচ্যেও শত্রুদের হামলায় একাধিক এমকিউ-নাইনএস ড্রোন হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
অপর দিকে সাগরের নিচে যুদ্ধের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই চীনের নৌবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যেতে হবে। তারপরেও দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্র চাইলে চীনা দ্বীপগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে। যেসব কমিউনিকেশন ক্যাবল দিয়ে চীনের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এসব দ্বীপ সংযুক্ত তা কেটে দিতে পারে মার্কিন আনম্যানড আন্ডারসি যান। এছাড়া কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর জাহাজের প্রোপুলশন সিস্টেম নষ্ট করে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। চাইলে মার্কিন নেতারা এই ধরণের অভিযানের দায় নিতেও পারে আবার অস্বীকারও করতে পারে। মোদ্দা কথা এই যে, ইউক্রেনে যা হচ্ছে তা পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে দেখতে না চাইলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অবশ্যই নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে।