বিক্ষোভকারীদের হত্যার প্রস্তুতি আগেই নেয় মিয়ানমার জান্তা

0

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতা দখলের পরের দিনেই একটি ‘বিশেষ বাহিনী’ গঠন করেছিলেন মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লেইং। দেশটির নগরাঞ্চলে অভিযান চালানো এবং প্রয়োজনে বেসামরিক লোকজনকে হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এই বাহিনীকে। মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে স্নাইপার শুটারও নিয়োগ করেছিল জান্তা। এ ছাড়া সেনাসদস্যদের কোনো প্রকার নির্দেশনা সরবরাহ না করার মাধ্যমে তাদেরকে পরোক্ষভাবে ‘যে কোনো অপরাধ’ করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন দেশটির ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা। রয়টার্স।

দক্ষিণ এশিয়াভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটস এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইয়েল ল স্কুলের এক যৌথ অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার ১৯৩ পৃষ্ঠার সেই অনুসন্ধানী পৃতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। প্রতিবেদনটির নাম দেয়া হয়েছে ‘কোথাও নিরাপদ নয়’ (নোহোয়্যার ইস সেফ)।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ফাঁস হওয়া একাধিক নথি এবং ১২৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে ফর্টিফাই রাইটস ও ইয়েল ল স্কুলের ‘নোহোয়্যার ইজ সেফ’। সাক্ষীদের মধ্যে সেনাসদস্যদের হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষজন, চিকিৎসাকর্মী, অভ্যুত্থানের পর থেকে ঘটা বিভিন্ন ঘটনার প্রত্যক্ষ্যদর্শী ও মিয়ানমারের বেশ কয়েকজন বর্তমান এবং সাবেক সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তা আছেন।

কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ফর্টিফাই রাইটস ও ইয়েল ল স্কুলকে বলেছেন, অভ্যুত্থানের পরপরই দেশজুড়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে একটি গোপন নির্দেশনামা পাঠিয়েছিল মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সেখানে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভকারী, রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মী ও দেশটির গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার এবং কারাগারে নির্যাতন ও নিপীড়ন করতে আদেশ দেয়া হয়েছিল।

রয়টার্সকে ফর্টিফাই রাইটসের শীর্ষ নির্বাহী ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, ‘নিজ দেশের সাধারণ জনগণকে হত্যা ও নির্যাতন-নিপীড়নের নির্দেশ দেয়া সেনা কর্মকর্তাদের ওপর অবিলম্বে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।’ ২০২১ সালের ১ নভেম্বর সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের নেতৃত্বে দেশটির গণতন্ত্রপন্থী সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। বন্দী করা হয় দেশটির নেত্রী অং সান সু চি ও তার দল এনএলডির নেতাকর্মীদের। অভ্যুত্থানের পরপরই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী জনগণ।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে দেড় হাজারেরও বেশি বেসামরিকের মৃত্যু হয়েছে মিয়ানমারে। সম্প্রতি জাতিসঙ্ঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তার এক সপ্তাহ পরেই প্রকাশিত হলো ‘নোহোয়্যার ইজ সেফ’।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com