রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্কের ভূমিকা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

0

ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধে উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান সংঘাতের সমাধানের পথ তৈরি করতে তুরস্ক জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এই যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ২০ দেশের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চলা যুদ্ধে এরই মধ্যে বিধ্বস্ত হয়েছে ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থাপনা। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২০ লক্ষাধিক মানুষ।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে চেয়েছে তুরস্ক। রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রয়েছে আঙ্কারার।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধের ১৫তম দিনে গত বৃহস্পতিবার তুরস্কের আন্তালিয়া শহরে বৈঠকে বসেছিলেন যুদ্ধরত দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

বৈঠক থেকে কোন সিদ্ধান্ত না এলেও তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসগলু এই বৈঠকটিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ সূচনা’ বলে উল্লেখ করেছেন।

গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর এই প্রথম দুই দেশের মধ্যে এতো উচ্চ পর্যায়ের কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। এই যুদ্ধে তুরস্ক নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখতে চেষ্টা করছে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন যে তুরস্ক একই সঙ্গে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য আবার অন্যদিকে দেশটির সঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেনেরও সম্পর্ক ভালো থাকায় যুদ্ধকে সমাপ্তির দিকে নিয়ে যেতে তাদের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে।

ইউক্রেনের কিয়েভভিত্তিক ইস্ট ইউরোপিয়ান ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউটের চেয়ারপার্সন ড. মৃদুলা ঘোষ বলছেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে তুরস্কের একটি ঐতিহাসিক যোগসূত্র আছে। আবার ন্যাটোর সদস্য হলেও দেশটি রাশিয়ারও ঘনিষ্ঠ মিত্র।

তিনি বলেন, আমরা মনে হয় এ কারণেই ভ্লাদিমির পুতিন চাইছেন যে কাউকে যদি মধ্যস্থতা করতে হয় সেটা তুরস্কই করুক।

যুদ্ধ শুরুর পরপরই রাশিয়ার ওপর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব, যার ফলে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে রাশিয়া ও দেশটির প্রেসিডেন্ট।

কিন্তু ৬ই মার্চ তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ফোনে কথা বলেন ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে। এক ঘণ্টার ফোনালাপে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। তবে একই সঙ্গে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সেনা প্রত্যাহার এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের প্রতিও তিনি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন।

তুরস্কের পত্রিকাগুলো তখন থেকেই তুরস্কের পরিকল্পনাকে ‘পিস টেবিল’ বা ‘হোপ ফর পিস’ হিসেবে আখ্যায়িত করতে শুরু করে।

মূলত এখান থেকেই রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্কের ভূমিকা রাখার সুযোগ নিয়ে নানা খবর আসতে থাকে সেখানকার পত্রপত্রিকায়।

এসব খবরে একটি বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হয় যে ‘তুরস্ক উভয় পক্ষের সঙ্গেই সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে’ অর্থাৎ নিরপেক্ষ একটি ভূমিকার বিষয়ে দেশটির নেতৃত্ব সচেষ্ট।

অবশ্য ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলার আগে থেকেই এ সংকট নিরসনের মধ্যস্থতার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন এরদোগান।

ড. মৃদুলা ঘোষ বলছেন, তুরস্ক ও ইসরাইলের দিক থেকে তৎপরতা দেখা গেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হয়েছে তুরস্কে।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্রভাব প্রতিপত্তি ও সক্ষমতার কথা বিবেচনায় নিলে তুরস্কেরই এ সুযোগ আছে উভয় দেশকে আলোচনায় আনার। আর পশ্চিমারাও তাতে বাধা দেবে না। কারণ তুরস্ক ন্যাটোর সদস্য এবং ওয়াশিংটনেরও মিত্রতা আছে তাদের সঙ্গে।

তুরস্কের সরকারপন্থী ডেইলি সাবাহ পত্রিকার কলামিস্ট ওকান মুদেরিসগুলো ৩ মার্চ তার লেখায় এরদোগানের সম্ভাব্য মধ্যস্থতার বিষয়টি তুলে ধরে বলেছেন, যে কৌশল আঙ্কারা নিয়েছে সেটি ‘সক্রিয় নিরপেক্ষতা।’

অর্থাৎ যুদ্ধবিরতি ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে আঙ্কারা ভূমিকা রাখবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্ক একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে (অর্থাৎ কখনো রাশিয়া আবার কখনো ইউরোপ আমেরিকার সঙ্গে কাজ করা) ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

রাশিয়া থেকে এস-৪০০ কেনা নিয়ে ন্যাটোর সঙ্গে বিবাদে জড়ালেও সিরিয়া, লিবিয়া ও নাগার্নো কারাবাখে রাশিয়ার উল্টো দিকেও অবস্থান নিয়েছে দেশটি।

তবে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান ও ভ্লাদিমির পুতিন যে কোন পরিস্থিতিতে নিজেদের মধ্যে কথা বলেছেন।

আবার তুরস্ক রাশিয়া ও ইউক্রেনে ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারণে নজর দিয়েছিলো। এছাড়াও রুশ পর্যটকদের জন্য তুরস্ক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছিলো। রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাসও আমদানি করে তুরস্ক।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তুরস্কের অর্থনীতি- সেটিও বিবেচনায় নিয়েছেন এরদোগান।এসব কারণে মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেওয়াকেই হয়তো জরুরি বলে বিবেচনা করেছেন তিনি।

সব মিলিয়ে একটি কার্যকর যুদ্ধবিরতি আর রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে আলোচনায় বসানোর সুযোগ তুরস্কের আছে এবং সেটি করতে পারলে বিশ্ব রাজনীতিতে দেশটির অবস্থান যে আরও সংহত হবে তা নিয়ে কোন সংশয় নেই কারও মধ্যেই।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com