নিত্যপণের বাজারে ‘আগুন’ চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ
আমন মৌসুম শেষে বাজারে নতুন চাল আসায় দাম কমার কথা। কিন্তু কমেনি। মিলপর্যায় থেকে শুরু করে পাইকারি আড়ত ও খুচরা বাজারে চালের মজুত পর্যাপ্ত। থরেবিথরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বস্তা। তবুও কয়েক মাস ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম।
সর্বশেষ এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে ৩-৫ টাকা বেড়ে ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। পাশাপাশি সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ১৫ টাকা বেড়েছে। এছাড়া ভোজ্য তেল, আটা-ময়দা, চিনি, মুরগি ও গরুর মাংস এবং ডিমের দাম আরেক দফা বেড়েছে। এসব পণ্য কিনতে সব শ্রেণির ক্রেতার নাভিশ্বাস উঠছে।
পুরান ঢাকার নয়াবাজার, কাওরান বাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর নিম্ন আয়ের মানুষ মোটা চালের ক্রেতা। আর এই চাল রাজধানীর সব বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়, যা এক মাস আগে ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
আর গত বছর একই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৪৩-৪৫ টাকা। খুচরা বাজারে মাঝারি আকারের চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৪-৫৭ টাকা, যা এক মাস আগে ৫২-৫৫ টাকা ছিল। আর গত বছর একই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকায়। সরু চাল মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৬২-৭০ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকায়। আর গত বছর একই সময়ে ৫৮-৬৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিন সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের মূল্যতালিকায়ও চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী দেখা গেছে। সেখানে বলা হয়েছে, সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চাল ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি এই একই চাল গত বছর একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি সরু চাল গত বছর একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর কাওরান বাজারের চালের পাইকারি আড়তদার আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা চালকল মালিকদের দিকেই তাকিয়ে থাকি। তারা চালের যে দাম ঠিক করে, আমরা সে দামেই কিনে বিক্রি করি। যদি মিল মালিকরা দাম বাড়ায় বা কমায়, পাইকারি ব্যবসায়ীরা সে দামে কিনে বিক্রি করেন। চালের দাম বাড়া বা কমার ক্ষেত্রে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দায়ী নন। সংশ্লিষ্টদের এদিকে নজর দিতে হবে।
অন্যদিকে বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজ, ভোজ্য তেল, আটা-ময়দা, চিনি, মুরগি ও গরুর মাংস এবং ডিমের দাম বেড়েছে। ফলে এসব পণ্য কিনতে সব শ্রেণির মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৬৫ টাকা, যা সাত দিন আগে ১৫৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৬৮ টাকা, যা সাত দিন আগে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া খোলা পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১৪৫ টাকা, যা আগে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপার বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা, যা সাত দিন আগে ১৪২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তাছাড়া বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা, যা সপ্তাহ আগে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা। প্রতিকেজি চিনি সপ্তাহের ব্যবধানে ২ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর কাওরান বাজারে পণ্য কিনতে আসা মো. সালাউদ্দিন বলেন, বাজারে এলে কান্না পায়। কারণ আয় বাড়ে না, ব্যয় বাড়ে। তিনি জানান, বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে প্রতিমাসে ২৫ হাজার টাকা বেতন পান। কিন্তু পণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে, তাতে দুই ছেলে, মা ও স্ত্রীকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।