খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে ভাষা সৈনিক জালাল উদ্দিনের সন্তানদের
অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে ভাষা সৈনিক মো. জালাল উদ্দিন আহম্মেদের পরিবারের সদস্যদের। একমাত্র ছেলে হেলাল উদ্দিন রিকশা চালিয়ে কোনো রকম দিন কাটান।
পিরোজপুর শহরের মুচিপাড়া নামক স্থানে রয়েছে সামান্য একটু জমি। সেই জমিতেই ছোট একটি ঘরে বাস করেন তার রিকশাচালক একমাত্র ছেলে। তবে বাবাকে নিয়ে গর্ব করেন তিনি।
তিনি জানান, তার বাবা ভাষা সৈনিক জালাল উদ্দিন গত ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি এক ছেলে ও কামরুন্নাহার নিলু, নাজমুন নাহার ডলি এবং তানিয়া সুলতানা পলি নামে তিন মেয়ে রেখে গেছেন। এদের মধ্যে ডলি অত্যন্ত গরিব ও অসহায়। আর পলি স্বামী পরিত্যক্তা ও মানসিক প্রতিবন্ধী।
তিনি আরও জানান, বাবা রেড ক্রিসেন্টে চাকরি করতেন। ভাষা আন্দোলনে গিয়ে তিনি জেল খেটেছেন, চাকরি হারিয়েছেন। পরে অত্যন্ত কষ্টে অর্ধাহারে ও অনাহারে দিন কাটিয়েছেন। প্রায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। এটাই ছিল বাবার একমাত্র কষ্টের বিষয়। বাবা তার চাকরি হারিয়ে কষ্টে দিন কাটাতেন। আর এ কারণে স্থানীয়রা তাকে সর্বহারা জালাল বলে ডাকতেন।
জানা গেছে, ভাষা সৈনিক জালাল উদ্দিন আহম্মদের ওই জমিতে বসবাস করেন তার একমাত্র ভ্যানচালক ছেলে হেলাল উদ্দিন। পাশেই দুই বোন ডলি ও পলির বসবাস। এদের মধ্যে স্বামী পরিত্যক্তা মানসিক প্রতিবন্ধী বোন পলি একটি ভাঙাচোরা ঘরে বাস করেন। সে ঘরে নেই চালা। চালার প্রতিটি টিন ভেঙে আকাশ দেখা যাচ্ছে। সামনেই মেয়ে তানিয়া সুলতানা পলির কাঠ ও টিনের তৈরি ঘর। তার স্বামীও একজন রিকশাচালক। তবে বাড়ির সামনে হেলাল স্থাপন করেছেন বাংলা ভাষা শেখার একটি কেন্দ্র।
হেলাল উদ্দিন বলেন, তিনি যে রিকশাটি চালান তার ব্যাটারি ভালো নেই। ব্যাটারি কেনার সামর্থ্য নেই তার। ওই রিকশা চালিয়ে তার (হেলাল) যে আয় হয় তা দিয়ে দুই ছেলে, এক মেয়েসহ পাঁচ সদস্যের পরিবারের খরচ জোগাতে হয়। দেখাশুনা করতে হয় অসুস্থ বোনকেও। ছোট বোন পলির ঘরটি ভাঙাচোরা। এই শীতে বাস করার জন্য কোনো পরিবেশ নাই। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানিতে ভিজে যায়। বোনকে মাঝেমধ্যে না খেয়ে দিন কাটাতে হয়। আমি রিকশা চালিয়ে যে টাকা আয় করি তা দিয়ে তাকেও সামান্য সহযোগিতা করি।
হেলাল উদ্দিনের মেঝো বোন ডলি বলেন, আমার স্বামী পেশায় একজন রিকশাচালক। এক মেয়ে প্রতিবন্ধী, আর স্বামীও প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। পৈত্রিক (জালাল উদ্দিন) স্মৃতি ধরে রাখতে স্বামীর গ্রামের বাড়ির জমি বিক্রি করে এখানে একটি কাঠের ঘর তৈরি করেছি। সেখানে সন্তানদের নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি। এ পর্যন্ত সরকারি কোনো সাহায্য পাইনি।