‘দেশে রাজনীতির স্বাভাবিক গতিধারা ব্যাহত হওয়ায় গুমের মতো অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে’

0

বাংলাদেশে রাজনীতির স্বাভাবিক গতিধারা ব্যাহত হওয়ার কারণেই গুমের মতো অস্বাভাবিক ঘটনাগুলো ঘটছে। তাই গুম-খুনের ঘটনা বন্ধে রাজনীতির স্বাভাবিক গতিধারা ফিরিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি অতীতে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনাও জরুরি। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘জোরপূর্বক নিখোঁজ এবং রাষ্ট্রের দায়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এ মত দেন।

বিএনপির সংসদ-সদস্য হারুনুর রশিদ বলেন, গুমের মতো ঘটনার জন্য রাজনীতিতে ছন্দপতন, সুশাসনের অভাব, জবাবদিহিতার অভাব, ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার প্রবণতা, ব্যক্তিস্বার্থ ও দলীয় স্বার্থকে দায়ী করেন। গুম বিষয়ে দুজন মন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এদেশের মানুষ সাংবিধানিকভাবে প্রাপ্ত আইনের অধিকার, আশ্রয়লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গুমের মতো সব অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে কি না; ঘটলে কেন ঘটছে, তা দায়িত্বপ্রাপ্তদের তদন্ত করে বের করতে হবে। এসব ঘটনার সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পৃক্ততা সবচেয়ে বেশি বলে তিনি মনে করেন।

সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে হারুনুর রশিদ বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো যখন গুমের ঘটনাগুলোর তদন্ত করতে চেয়েছে, সরকার তাদের অনুমতি দেয়নি। উপরন্তু সরকার দায়সারা বক্তব্য দিয়েছে। তিনি মনে করেন, গুমের মতো ঘটনাগুলো প্রতিরোধে রাজনীতিবিদদেরই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যার পেছনে জড়িত যারা বেঁচে আছে, আজ না হোক ৩০ বছর পর তাদের বিচার হবে। লাতিন আমেরিকার ৭০ দশকের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর বিচার হচ্ছে। বাংলাদেশেও এগুলোর বিচার হবে। কতগুলো জিনিসের বিচার না হলে সমাজ টিকে থাকতে পারে না। আজ হোক দশ বছর পরে হোক, যারা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তারা হুকুমের আসামি বলে কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন। এত বড় অন্যায় করে, যারা গুমের মতো বড় অপরাধ করে বুক ফুলিয়ে আছেন-এই সমাজকে টিকে থাকতে হলে এদের বিচার হতেই হবে।

তিনি বলেন, লিবিয়া বা সিরিয়ার মতো রাষ্ট্র না চাইলে গুমের মতো ঘটনার বিচার একদিন না একদিন হতেই হবে। কারণ বিচার ছাড়া কোনো সমাজ টিকে থাকতে পারে না। আর যতদিন কর্তৃত্ববাদ সরকার থাকবে, ততদিন গুমের মতো ঘটনাগুলো ঘটবে এবং তারা সেটা অস্বীকার করেই যাবে, অন্যের ওপর দোষ চাপাবে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব মো. নূর খান বলেন, গুমের মতো ঘটনাগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্র বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে বিরোধী দল-মত, অপরাধী, জঙ্গি দমনের জন্য। এর পেছনে কারণ হিসাবে তিনি জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, দেশে এখন এমন সংস্কৃতি চলে এসেছে, যেখানে দেশ পরিচালনার জন্য সরকারকে জনসমর্থনের প্রয়োজন নেই। রাজনীতিবিদদের সস্তা জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টাকেও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী করেন তিনি।

নূর খান আরও বলেন, মেজর সিনহা হত্যা এবং র‌্যাবের ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। এতেই প্রমাণিত হয়, ঘটনাগুলো পরিকল্পিত। তিনি বলেন, গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তির স্বজনরা জিডি বা মামলা করতে গেলেও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। তিনি মনে করেন, একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে গুম হতে পারে না। তাছাড়া অতীতে ঘটে যাওয়া সব ঘটনার বিচার দাবি করেন নূর খান।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নাগরিক সমাজ রাজনৈতিক দলের আদলে দুটি ভাগে বিভক্ত হওয়ার কারণে নাগরিক অধিকার রক্ষার আন্দোলনকে সচল রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, আইনগুলো শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। এছাড়া বিচারকার্যে ভয়ের সংস্কৃতির একটা অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ফলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ও বিচার প্রক্রিয়া ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবমুক্ত নয় বলে নাগরিক সুবিধা ব্যাহত হচ্ছে, গুমের মতো ঘটনাগুলো ঘটছে।

সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, গুম বাংলাদেশের মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার সংস্কৃতির ফলস্বরূপ বাংলাদেশে গুমের মতো নির্মম মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় ঘটছে। রাষ্ট্রীয় মদদে গুম, হত্যা, মামলা প্রভৃতির মাধ্যমে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com