চীনের সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ, পাকিস্তানের সামনে খুলছে সুযোগের দরজা

0

পাকিস্তান এখন দৃঢ়ভাবে চীনের কক্ষপথে অবস্থান করছে। ওয়াশিংটন ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামাবাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার পর এটি ঘটেছে। পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ওয়াশিংটনে বাইডেন প্রশাসনের দ্বারা গৃহীত সিদ্ধান্তের পরে, ইসলামাবাদের বেইজিংয়ের কাছাকাছি আসা অনিবার্য ছিল। ২০২১সালে আগস্টের শেষের দিকে আফগানিস্তান থেকে হঠাৎ আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের ফলে চীনের ভূ-রাজনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে, সেই সঙ্গে কিছুটা হলেও রাশিয়া – আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার কাছাকাছি এসেছে। আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের পরে কিছু পর্যবেক্ষক উল্লেখ করেছেন, তিনটি দেশ – রাশিয়া, চীন এবং পাকিস্তান – পরিবর্তিত আফগানিস্তান পরিস্থিতির ইতিবাচক দিকে অবতরণ করেছে যেখানে ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর বেশিরভাগ দেশ নিজেদেরকে নেতিবাচক দিকে নিয়ে গেছে। এই পরিবর্তনগুলির পরিপ্রেক্ষিতে, পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকদের জন্য চীনের কিছু অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

চীন ২০২২ সালে বেশ কয়েকটি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। যেমন চরম আবহাওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি শহরে বন্যা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারীর প্রত্যাবর্তনও সমস্যায় ফেলেছে , যদিও সেই সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত চীন।

দেশটি এখন যে উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছে তা জনগণের ওপর সরকারি নীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক উন্নয়নের ফলাফল। কোভিড -১৯ মহামারী আবহে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চীনে শুরু হচ্ছে শীতকালীন অলিম্পিক। যা নতুন একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যদিও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দাভোস ভার্চুয়াল বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন , বেইজিং যেকোনো জটিল সময় কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে। তাঁর স্পষ্টতই ইঙ্গিত ছিল চীন এবং আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর। শি আন্তর্জাতিক শ্রোতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন , আমেরিকা এখন রাষ্ট্রপতি বাইডেনের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক ও সামাজিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যাঁতাকলে পড়েছে। চীনা নেতা দাবি করেছেন যে তার দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমি দেশগুলির তুলনায় অনেক ভাল। প্রেসিডেন্ট জিনপিং দাবি করলেও চীন বর্তমানে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যার মধ্যে রয়েছে – জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে তীব্র পতন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক এবং শীতকালীন অলিম্পিকে যোগদাকারী বিপুল সংখ্যক লোককে সঠিকভাবে পরিচালনা করা।

২০২১ সালের শেষ মাসে চীনের অর্থনীতির অগ্রগতি উল্লেখযোগ্যভাবে মন্থর হয়েছে। পাবলিক পলিসি ছিল মন্দার প্রধান কারণ। বেইজিং রিয়েল-এস্টেটে বিনোয়োগ সীমিত করতে চলেছে , এটি এমন একটি সেক্টর যেখানে একটি বড় কোম্পানি এভারগ্রান্ড গ্রুপ ওভারলেভারেজ হয়ে রয়েছে। অন্যান্য বৃহৎ রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার যেমন কাইসা গ্রুপ এবং চায়না আওয়ুয়ান প্রপার্টি গ্রুপও করোন মহামারী ছড়িয়ে পড়ার জন্য আরোপিত লকডাউন এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিণতি ভোগ করেছে। চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস (সিএনবি) এর ১৭ জানুয়ারীর তথ্য অনুযায়ী , ২০২১ সালের ক্যালেন্ডারের চূড়ান্ত ত্রৈমাসিকের আউটপুট ২০২০ সালের একই সময়ের তুলনায় মাত্র ৪ শতাংশ বেশি ছিল। পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারত কিন্তু বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য রপ্তানির পরিমান বাড়ায় সেটি হয়নি। ভোক্তারা রেস্তোরাঁর খাবারের জন্য ব্যয় করতে বা ক্রীড়া ইভেন্ট এবং কনসার্টে যোগ দিতে অক্ষম ছিলেন মহামারীর কারণে। একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ লি ডাওকুই বলেছেন, এসবের জন্যই দেশের অর্থনীতির চাকা মন্থর গতিতে চলেছে। ৪০ বছরের মধ্যে এতো কঠিন সময় আসেনি বলে জানিয়েছেন তিনি। লক্ষ লক্ষ ছোট ব্যবসার চাহিদা কমে গেছে এবং সেগুলি ভেঙে পড়েছে। বেসরকারি কোম্পানিগুলি হল চীনা অর্থনীতির মেরুদণ্ড, দেশের মোট উৎপাদনের ৬০ শতাংশ এবং শহুরে কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশের জন্য এরা দায়ী৷ এর পাশাপাশি অপ্রত্যাশিত জনসংখ্যাগত পরিবর্তন দেশের অর্থনৈতিক অসুবিধা বাড়াচ্ছে। CNB-এর মতে, ২০২১ সালে চীনের জন্মহার দ্রুত হ্রাস পেয়েছে এবং এখন মৃত্যুর হারের চেয়ে জন্মহার সামান্য বেশি।চীনের এক-সন্তান নীতিকে জনসংখ্যার এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী করা হয়েছে।

বেইজিং বিদেশী দর্শকদের ওপর শীতকালীন অলিম্পিক দেখতে একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। চীনা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বেইজিংয়ে ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের প্রথম কেস ঘোষণা করার পর এবং অলিম্পিক সাইটের কাছাকাছি বড় শহরের একটি অংশে অবিলম্বে লকডাউন – গণ পরীক্ষার আদেশ দেওয়ার দুই দিন পরে এই সিদ্ধান্তটি সামনে এসেছে।শহরে প্রবেশের ক্ষেত্রে একাধিক নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা হয়েছে। এই ধরণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা তখনি আসছে যখন দেশ একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে। এই বছরের শুরুতে বিংশতম কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনে নতুন প্রজন্মের নেতাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চীন। সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে শীর্ষ পদে আরো পাঁচ বছরের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। রাজ্য কাউন্সিল এবং পলিটব্যুরোতে নতুন সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট শি পার্টির সাধারণ সম্পাদক, সরকারের প্রধান এবং সামরিক কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব সামলাবেন।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের উচিত চীনের সাথে কীভাবে সম্পর্ক গড়ে তুলবে সে বিষয়ে সঠিক কৌশল অবলম্বন করা। CPEC তে বিনিয়োগ কর্মসূচি দু দেশের মধ্যে সেতুর কাজ করছে। এছাড়াও, আরও দুটি ক্ষেত্রের দিকে নজর দেওয়া দরকার: পাকিস্তানের মানব সম্পদের উন্নয়ন যাতে এটি বেইজিংকে চীনের অবনতিশীল জনসংখ্যাগত পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করতে পারে। চীনের জনসংখ্যায় বার্ধক্যের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্ষতিপূরণের জন্য তরুণদের প্রয়োজন হবে। পাকিস্তানের জনসংখ্যায় তরুণদের হার বেশি। চীনের যা অভাব তা পাকিস্তান মেটাতে পারে।দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের উচিত তার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ ঘটানো , যাতে তারা চীনের সরবরাহ চেইনের উপাদান হয়ে উঠতে পারে। উৎপাদন সেক্টরে গোটা বিশ্বে বিপুল পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু পাকিস্তান এই উন্নয়নের শরিক হতে পারেনি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com