সুদানের ক্ষমতায় হামদুককে ফেরানোর দিনেই সুদানে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে নিহত কিশোর
সুদানের ক্ষমতায় আবদুল্লাহ হামদুককে ফেরানোর দিনেই দেশটিতে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর নিহত হয়েছে।
রোববার সুদানের উম্ম দুরমান শহরে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে এক বিক্ষোভে এই ঘটনা ঘটে বলে জানায় সেন্ট্রাল কমিটি অব সুদানিজ ডক্টরস।
এর মধ্য দিয়ে সুদানে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪১ জন।
রোববার সামরিক প্রধান জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল-বুরহান গত ২৫ অক্টোবর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ হামদুককে পুনরায় দায়িত্বে ফেরাতে এক চুক্তি করেন।
চুক্তি অনুযায়ী, আবদুল্লাহ হামদুক আবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য টেকনোক্রেট মন্ত্রিসভা গঠনের মাধ্যমে বেসামরিক সরকার পরিচালনা করবেন।
চুক্তিতে একইসাথে সকল রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেয়ার প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করা হয়।
এদিকে সামরিক প্রধানের সাথে আবদুল্লাহ হামদুকের এই চুক্তিতে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিশাল একটি দল। তারা সামরিক শাসনের পরিবর্তে পূর্ণমাত্রায় বেসামরিক প্রশাসন গঠনের দাবি জানান।
সুদানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের অন্যতম বৃহত্তম সংগঠক সুদানিজ প্রফেশনালস অ্যাসোসিয়েশন (এসপিএ) এই চুক্তিকে ‘বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছে।
অপরদিকে অভ্যুত্থানের আগে সামরিক-বেসামরিক যৌথ নেতৃত্বের অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ থাকা বেসামরিক জোট ফোর্সেস অব ফ্রিডম অ্যান্ড চেইঞ্জ (এফএফসি) জানিয়েছে, তারা সামরিক বাহিনীর সাথে কোনো চুক্তির স্বীকৃতি দেবে না।
এক বিবৃতিতে জোটটি জানায়, ‘আমরা আমাদের স্পষ্ট ও পূর্বে ঘোষিত অবস্থান নিশ্চিত করছি : ক্ষমতা দখলকারীদের সাথে কোনো আপস, অংশীদারি ও বৈধতা নয়।’
এদিকে রোববার পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারেই রাজধানী খার্তুমসহ বিভিন্ন শহরে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা ‘হামদুক বিপ্লবকে বিক্রি করেছে’ বলে স্লোগান দেয়।
নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলিবর্ষণ ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এদিকে আবদুল্লাহ হামদুক জানিয়েছেন, রক্তপাত বন্ধ করার জন্যই তিনি এই চুক্তি করেছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সুদানিদের রক্ত মূল্যবান। আসুন আমরা রক্তপাত বন্ধ করি এবং তারুণ্যের শক্তিকে গঠন ও উন্নয়নের দিকে পরিচালিত করি।’
সুদানের সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্বের অংশীদারমূলক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সভরেইন কাউন্সিলের উভয়পক্ষের মতবিরোধের জেরে প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ হামদুকসহ বিপুল বেসামরিক নেতৃত্বকে ২৫ অক্টোবর সামরিক বাহিনী গ্রেফতার করে এবং সামরিক প্রধান জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল-বুরহান পূর্ণ ক্ষমতা দখল করেন।
সামরিক বাহিনীর এই পদক্ষেপকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে উল্লেখ করে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সুদানজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়।
তবে জেনারেল বুরহান তার এই পদক্ষেপকে অভ্যুত্থানের বদলে ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণকে শোধরানোর’ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে বিশ্বজুড়ে সুদানে সামরিক বাহিনীর নিন্দা জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বব্যাংক দেশটিতে প্রদত্ত সহায়তা স্থগিত করে। এছাড়া আফ্রিকান ইউনিয়ন সুদানের সংস্থাটিতে সদস্য পদ স্থগিত করে।
পরে ১১ নভেম্বর সুদানের অন্তর্বর্তীকালীন শাসন পরিচালনায় নিজের নেতৃত্বে নতুন সভরেইন কাউন্সিল গঠনের ঘোষণা দেন জেনারেল বুরহান।
এর আগে সেপ্টেম্বরে সুদানে এক সামরিক অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়। ২০১৯ সালে সুদানের সাধারণ জনতার বিক্ষোভের জের ধরে সামরিক বাহিনী দেশটির দীর্ঘকালীন শাসক ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
তখন থেকে সামরিক ও বেসামরিক যৌথ নেতৃত্বের অন্তর্বর্তীকালীন সভরেইন কাউন্সিল সুদানের শাসন পরিচালনা করে আসছিলো। ২০২৩ সালে দেশটির সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
সূত্র : আলজাজিরা