নির্বাচনী আইনের ফাঁক দিয়ে গাদ্দাফি ও হাফতারকে অংশগ্রহণের প্রতিবাদে লিবিয়ায় বিক্ষোভ
লিবিয়া অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশটির সাবেক একনায়ক মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল-ইসলাম আল-গাদ্দাফি ও পূর্বাঞ্চলীয় যুদ্ধবাজ নেতা জেনারেল খলিফা হাফতারের অংশগ্রহণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করা হয়েছে।
শুক্রবার লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভকারীরা নির্বাচনী আইনের ফাঁক দিয়ে গাদ্দাফি ও হাফতারকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়ার জন্য তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিক্ষোভে বক্তারা লিবিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ করা ব্যক্তিদের নির্বাচনে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করার দাবি করেন।
বক্তারা বলেন, ‘আমাদের শহীদদের রক্ত বৃথাই ঝড়েনি।’
বিক্ষোভকারীরা ‘সাংবিধানিক ভিত্তি ছাড়া নির্বাচন নয়’ লিখিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন।
এদিকে বন্দর নগরী মিসরাতায় একই ধরনের এক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভকারীরা ‘নির্বাচনে হ্যা, অপরাধীদের না’ বলে স্লোগান দেন।
এদিকে ত্রিপোলিভিত্তিক লিবিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাই কাউন্সিল অব স্টেটের প্রধান খালেদ আল মিশরি ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় সকলপক্ষের সম্মতিতে কোনো আইনি কাঠামো ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন এবং এই ধরনের নির্বাচন হলে তা বয়কটের ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ‘লিবিয়ায় বর্তমানে আমরা যে প্রক্রিয়া দেখছি, তা উদ্ভট। কোনো প্রকার সাংবিধানিক ভিত্তি নেই বা পরিষ্কার কোনো প্রার্থী তালিকা নেই।’
খালেদ আল মিশরি বলেন, ‘পরিবর্তনের জন্য সকল লিবীয় নাগরিকের শক্তিশালী আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে আমরা সচেতন আছি। আমরা চাই সংবিধান বা সাংবিধানিক কোনো ভিত্তির ওপর নির্বাচন অনুষ্ঠান।’
এর আগে গত সপ্তাহে লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেন সাইফ আল-ইসলাম আল-গাদ্দাফি ও খলিফা হাফতার।
আগামী ২৪ ডিসেম্বর লিবিয়ায় প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের কথা রয়েছে। গত বছর ২৪ ডিসেম্বর জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসে প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন গোষ্ঠীর মাধ্যমে আলোচনায় স্থির হওয়া শর্ত অনুসারে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এর আগে গত ৮ নভেম্বর লিবিয়ায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রার্থীদের নিবন্ধন শুরু হয়।
জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ লিবিয়ায় ২০১১ সালে আরব বসন্তের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষ চার দশক দেশটি শাসন করা একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। গাদ্দাফি সামরিক পন্থায় বিক্ষোভকারীদের দমন করতে চাইলে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে। গৃহযুদ্ধের এক পর্যায়ে বিদ্রোহীদের হাতে গাদ্দাফি নিহত হলেও দেশটিতে বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ থেকে নতুন করে দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৪ থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে দেশটি ত্রিপোলিকেন্দ্রীক পশ্চিম ও তবরুককেন্দ্রীক পূর্বাঞ্চলীয় সরকারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
গত বছরের অক্টোবরে জাতিসঙ্ঘ উভয়পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত করে এবং দেশটির সংকট সমাধানে বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের সূচনা করে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ সংলাপের পর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিবাদমান পক্ষগুলো দেশটিতে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সম্মত হয়। বিবাদমান পক্ষগুলো অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে পূর্বাঞ্চলের প্রতিনিধি দেশটির সাবেক কূটনীতিক মোহাম্মদ ইউনুস মানফি এবং প্রধানমন্ত্রী পদে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিনিধি আবদুল হামিদ আল-দাবিবাহকে নির্বাচিত করে।
পরে লিবিয়ার পার্লামেন্টে আলোচনার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার ২৪ ডিসেম্বরের নির্বাচন পরিচালনা করবে।
সূত্র : টিআরটি ওয়ার্ল্ড