জ্বালানির উত্তাপে পুড়বে সাধারণ মানুষ

0

দেশের অর্থনীতি যখন করোনার প্রভাব থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছে তখর তেলের দাম বৃদ্ধি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশংকা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে রাজস্ব আহরণে ভাটা পড়বে। কারণ, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে ভোগ ব্যয় হ্রাস পায়।

এতে করে অর্থনীতি সংকুচিত হয়। আর অর্থনীতি সংকুচিত হলে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ও আয়কর আহরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দুই দফা করোনার ধাক্কা সামলে দেশের অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি তখন অর্থনীতিতে নতুন চাপ তৈরি করবে।

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা চাঙা হয়ে উঠেছে। সেই সুবাদে সচল হচ্ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে তা ব্যহত হতে পারে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জ্বালানি একটি স্পর্শকাতর পণ্য। যার মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব অর্থনীতিতে সূদরপ্রসারী। জীবনযাত্রাকে এটি নানাভাবে প্রভাবিত করে। এরই মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ সব কিছুর দাম বেড়ে গেছে। বেড়েছে পরিবহণ ভাড়া।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন ডিজেল, কোরোসিনের মূল্যবৃদ্ধিতে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়, যেহেতু তাদের আয় বাড়েনি। তখন বাধ্য হয়ে তারা ব্যয় সংকোচন করে। ফলে মানুষের ভোগ ব্যয় হ্রাস পায়। সংকুচিত হয় অর্থনীতি। ব্যহত হয় জিডিপির প্রবৃদ্ধি।

গত বুধবার মধ্যরাতে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য লিটার প্রতি ১৫ টাকা বা ২৩ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। প্রতি লিটার ডিজেল এবং কেরোসিনের দাম নির্ধারণ করা হয় ৮০ টাকা, যা আগে ছিল ৬৫ টাকা। বর্তমানে কৃষিখাতে ডিজেলের ব্যবহার ১৬ শতাংশ। ডিজেলের দাম বাড়ায় সেচের খরচ বাড়বে। এতে করে বাড়বে কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ। বিদ্যুতে ডিজেলের ব্যবহার ২৬ শতাংশ। দেশের অধিকাংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ডিজেল ও ফার্নেস তেলচালিত। ফলে বিদ্যুতের দাম ও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে রাজস্ব আহরণে ভাটা পড়বে। কারণ, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে ভোগ ব্যয় হ্রাস পায়। এতে করে অর্থনীতি সংকুচিত হয়। আর অর্থনীতি সংকুচিত হলে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট ও আয়কর আহরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এবার বাজেটে যে পরিমাণ রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে, তা পূরণ হবে না। ফলে বাজেট ঘাটতি বাড়বে। ঘাটতি পূরণে সরকারের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ বাড়বে। ব্যহত হবে বেসরকারি খাত। করোনাকালে দেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য হয়েছে, প্রবৃদ্ধির চাকা অব্যাহত রয়েছে। অথচ প্রতিবেশি দেশ ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হয়েছে।

ভারতের অর্থনীতির বিপর্যয়ের জন্য করোনা পরিস্থিতি যতটা না দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী করা হয় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে। ব্যাপক সমালোচনার পর ভারত সরকার তেলের দাম সংশোধন করেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে তেলের দাম না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন জ্বালানির সঙ্গে যুক্ত। এতে পণ্য মূলের ক্রয়ক্ষমতার হিসেবে মানুষের বেতনের অবমূল্যায়ন ঘটবে। অর্থাৎ করোনার পর মানুষের আয় আরেক দফা কমে যাবে। এমনিতেই বেকারত্ব, নতুন দারিদ্র্যে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। নিম্নবিত্ত এবং প্রান্তিক মানুষের ক্ষুধার কষ্টও শুরু হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানোর ফলে তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক ঊর্ধ্বতন পরিচালক বর্তমানে সরকারি মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘এমনিতেই অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির চাপ রয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে এই চাপ আরও বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে যাচ্ছিল। তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে এটি ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’অর্থনীতির ঝুঁকি এড়াতে এই সময় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

জ্বালানি বিশেষেজ্ঞ ও ক্যাবের উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ার ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাবে। কমবে ভোগ ব্যয়। সংকুচিত হবে অর্থনীতি। এর ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি ঝুঁকির মধ্যে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, নিত্যপণ্যসহ সব কিছুর দাম যখন আকাশছোঁয়া, তখন কোন যুক্তিতে এ সময়ে তেলের দাম বাড়ানো হলো তা বোধগাম্য নয়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com