জ্বালানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ‘আত্মঘাতী ও অযৌক্তিক’: যাত্রী কল্যাণ সমিতি
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। একই সাথে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা সম্ভব না হলে ‘ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্যভাবে’ ভাড়া সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিবহন খাত নিয়ে কাজ করা এই সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তকে ‘আত্মঘাতী, অযৌক্তিক ও হঠকারী’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম একলাফে ২৩% বাড়ায় মানুষের যাতায়াত, পণ্য পরিবহন, খাদ্য পণ্য ও কৃষিজ উৎপাদনসহ সামগ্রিক ব্যয় আরো কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে লঞ্চ-স্টিমারের মালিকরা শতভাগ ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। যদি জ্বালানি তেলের দাম কমানো একেবারে সম্ভব না হয়, তাহলে যেন পরিবহন মালিকরা ন্যায্য ও গ্রহণযোগ্য মাত্রায় ভাড়া বৃদ্ধি করেন, সেদিকে নজর রাখা উচিত।’
মোজাম্মেল হক চৌধুরী মনে করেন, যদি জ্বালানি তেলের দাম কমানো সম্ভব না হয়, তাহলে কিলোমিটার প্রতি বাস ভাড়া যেন সর্বোচ্চ ১৫ পয়সার বেশি না বাড়ানো হয়, তা নিশ্চিত করা উচিত।
অন্য দিকে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি বলছে জ্বালানি তেলের দাম ২৩% বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন তারা।
ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক-শ্রমিক সংগঠনের আহ্বায়ক রুস্তম আলী খান বলেন, ‘আমরা চাই তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক। আর যদি দেশের স্বার্থে দাম বাড়াতেই হয়, তাহলে যেন সহনীয় মাত্রার মধ্যে থেকে দাম কতটুকু বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, একবারে লিটারে ১৫ টাকা দাম বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক নয়, এরকম নজির আমরা কখনো দেখিনি।’
দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ গণপরিবহন
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের আহ্বানে দ্বিতীয় দিনের মতো সারাদেশে যাত্রী ও পণ্যবাহী গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ধর্মঘটের প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও গণপরিবহন না পেয়ে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে।
শনিবার সকালে ঢাকার বিভিন্ন বাস স্ট্যান্ড ও রাস্তার মোড়ে কর্মস্থলে যাওয়া মানুষের ভিড় দেখা যায়।
গণপরিবহন না থাকায় বেশি ভাড়া দিয়ে সিএনজি, মোটরসাইকেলে করে নিজ নিজ কর্মস্থলে যেতে দেখা যায় অনেককে।
শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় বেশিরভাগ অফিস, কল-কারখানা বন্ধ থাকলেও বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষাও ছিল শুক্রবার।
গণপরিবহন না থাকায় ভোগান্তির মধ্যে পড়েন অনেক পরীক্ষার্থী। শনিবারও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষা রয়েছে।
আন্তঃজেলা যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও কিছু কিছু এলাকায় অভ্যন্তরীনভাবে অল্প কিছু বাস চলছে বলে জানা যায়।
অন্যান্য গণপরিবহন বন্ধ থাকায় এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে মানুষ। গত দুদিন রেল স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের ব্যাপক চাপ দেখা গেছে।
বুধবার সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা এবং বৃহস্পতিবার এলপি গ্যাসের দাম প্রতি কেজির সিলিন্ডারে ৫৪ টাকা করে বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
কোনো আলোচনা ছাড়াই তেলের দাম একতরফা বাড়ানোর কারণে পরিবহন খরচ অনেক বাড়বে দাবি করে বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়ে পণ্য পরিবহন বন্ধ ঘোষণা করে ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি কেন্দ্রীয়ভাবে ধর্মঘটের কোনো ঘোষণা না দিলেও জেলা পর্যায় থেকে মালিক-শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় ঢাকাগামী যান চলাচল প্রায় বন্ধ রয়েছে শুক্রবার থেকে।
এরকম পরিস্থিতিতে শুক্রবার দুপুরে লঞ্চ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে তেলের দাম বাড়ার কারণে লঞ্চের ভাড়াও শতভাগ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। শনিবার দুপুরের মধ্যে এ বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে সময় বেঁধে দিয়েছে তারা।
সূত্র : বিবিসি