বিমানের ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে সরকারের ১১৮ কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগে একজন জিএমসহ ১৬ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার মামলা করেছে দুদক।
এদিন বিকালে দুই আসামি- বিমানের সাবেক পরিচালক আলী আহসান বাবু ও সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক (রফতানি) ইফতেখার হোসেন চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে দুদক। এরপর আদালতে হাজির করা হলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে নিজ দফতরে মামলাটি রুজু করেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য যুগান্তরকে বলেন, কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ বাবদ ১১৮ কোটা টাকা আদায় না করে সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলা দায়ের করা হয়। এজাহারে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারের ক্ষতিসাধন করে আসামিরা।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (কার্গো) ম. হাবিবুল্লাহ আকন্দ, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক ও বর্তমানে সৌদি আরবে কান্ট্রি ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলাম, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক ও বর্তমানে সৌদি আরবের রিয়াদে রিজিওনাল ম্যানেজার আমিনুল হক ভূঁইয়া, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক মো. লুতফে জামাল, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন তালুকদার, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক রাজীব হাসান, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দীন তালুকদার, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক অনুপ কুমার বড়ুয়া, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক কেএন আলম, কার্গো আমদানি শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক মো. ফজলুল হক, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক সৈয়দ আহমেদ পাটোয়ারী, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক মনির আহমেদ মজুমদার, সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক একেএম মনজুরুল হক ও সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক মো. শাহজাহান।
এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে পারস্পরিক যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেরা লাভবান হন। তারা ননসিডিউল ফ্রেইটারদের লাভবান করার কুমতলবে ৪১১৫টি ননসিডিউল ফ্রেইটার কর্তৃক পরিবহনকৃত ১৩ কোটি ৯৮ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কেজি কার্গো ও মেইলের বিপরীতে জিএইচসি (গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কমিটি) চার্জ বাবদ ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৫০ লাখ ৯৩ হাজার ৭৪ মার্কিন ডলার ক্ষতি করেন, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৮ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৮ টাকা। ওই টাকা আদায় না করে তারা সরকারের আর্থিক ক্ষতি করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, ২০১২ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ননসিডিউল ফ্রেইটারের মাধ্যমে কার্গো ও মেইল পরিবহনের ক্ষেত্রে সিডিউল ফ্রেইটারের কাছ থেকে আদায়যোগ্য চার্জের অতিরিক্ত হিসেবে প্রতি কেজির জন্য নির্ধারিত হারে কার্গো ও মেইল হ্যান্ডলিং চার্জ আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়।
৪ হাজার ১১৫টি ননসিডিউল ফ্রেইটার কর্তৃক মোট ১৩ কোটি ৯৮ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কেজি কার্গো ও মেইল পরিবহন করে, যার মোট অনাদায়ী কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ ১ কোটি ৫০ লাখ ৯৩ হাজার ৭৪ মার্কিন ডলার বা ১১৮ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
বিমানের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ কর্তৃক চার্জ আদায় না হওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের দায়ী করা হয়। পরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকারের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকির জন্য বিমানের কার্গো শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়ী করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলা করে দুদক।
এদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের সাবেক পরিচালক আলী আহসান বাবুসহ দুই কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম মো. ইলিয়াস মিয়া আসামিদের কারাগারে পাঠানোর এ আদেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া অপর আসামি হলেন একই বিভাগের সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ইফতেখার হোসেন চৌধুরী।
এদিন দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আসামিপক্ষে সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান জামিন আবেদন করেন।
অপরদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর আসামিদের জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠানোর ওই আদেশ দেন।