গুম বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের কমিটিতে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদের আলোচনায় আবারো বাংলাদেশের গুম প্রসঙ্গ এসেছে। গত ১৫ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি জেনেভায় অনুষ্ঠিত গুম বিষয়ক জাতিসঙ্ঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বাংলাদেশসহ ৩৬টি দেশের ছয় শতাধিক ঘটনা পর্যালোচনা করা হয়েছে। তবে রুদ্ধদ্বার এই বৈঠকের কঠোর গোপনীয়তার কারণে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়নি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে গ্রুপের তথ্য ও মিডিয়া বিষয়ক ফোকাল পয়েন্ট উগো সিডরেনগোলোর সাথে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হয়। উত্তরে তিনি বলেন, ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকটি গোপনীয়। এ ব্যাপারে পরে জানানো হবে।
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে বাংলাদেশের দু’টি ঘটনা পর্যালোচনা করা হয়েছে। এর একটি হচ্ছে আনসার আলী নামের এক ব্যক্তিকে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ঢাকায় ‘অস্ত্রধারী সরকারি বাহিনী’ অপহরণ করে নিয়ে গেছে। আর ২০১৭ সালের ৫ এপ্রিল যশোর মিউনিসিপ্যালটি পার্ক থেকে সাইদুর রহমান কাজী নামের এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। এই দু’জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কমিটি এই দুই গুমের অভিযোগ সম্পর্কে বাংলাদেশ সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে।
গুমবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ার হিসাবে র্যাপোর্টিয়ার তায়-উং বাইক (দক্ষিণ কোরিয়ার), ভাইস চেয়ার হেনরিকাস মিকেভিশাস (লিথুনিয়া) এবং সদস্য হিসেবে আওয়া বালদে (গিনি বিসাও), বের্নার্ড দুহাইম (কানাডা) ও লুসিয়ানো হাজান (আর্জেন্টিনা) পর্যালোচনা বৈঠকে অংশ নেন।
জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদের আগামী জুনের অধিবেশনে গুম বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিবেদন জমা দেবে।
২০১৩ সাল থেকে গুমবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ সফরের অনুমতি দিতে বেশ সরকারকে বেশ কয়েকবার অনুরোধ জানিয়েছে। কিন্তু এসব অনুরোধের ইতিবাচক সাড়া দেয়নি সরকার।
গতবছর জাতিসঙ্ঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রুপের বৈঠকে বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের গুমের অভিযোগ পর্যালোচনা করা হয়েছে। এরপর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারকে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ নিয়ে পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে গুমের অব্যাহত অভিযোগ নিয়ে জাতিসঙ্ঘের গুমবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ উদ্বিগ্ন। গ্রুপ ক্রমাগতভাবে গুমের অভিযোগ পাচ্ছে। এসব অভিযোগের অনেকগুলোই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সম্পর্কিত। এ ধরনের অভিযোগের ব্যাপারে দৃশ্যত দায়মুক্তির চর্চা করা হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। এতে বলা হয়েছে, ওয়ার্কিং গ্রুপের সাথে বাংলাদেশের সীমিত সম্পৃক্ততা খুবই দুঃখজনক। ২০১৯ সালে ওয়ার্কিং গ্রুপ অভিযোগগুলোর বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইলেও বাংলাদেশ কোনো সাড়া দেয়নি। ১৯৯৬ সালে ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশের কাছে প্রথমবারের মতো একটি অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়েছিল। কিন্তু এত বছরে মাত্র একটি ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ।
ওয়ার্কিং গ্রুপ গত সেপ্টেম্বর মাসের বৈঠকে ব্লগার আসাদুজ্জামান নূরের (আসাদ নূর) আইনজীবীকে হুমকি, হয়রানি করা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়েছিল।
জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিটিগুলোর বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময় বলে আসছেন, বাংলাদেশের আইনে ‘গুম’ বলে কিছু নেই। ২০১২ সালে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদের ইউপিআর পর্যালোচনায় বাংলাদেশে ‘গুম’ আর ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা’কে দুঃখজনক হিসাবে অভিহিত করা হয়েছিল।