পাইকারির আনুপাতিক হারে খুচরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব
পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ার প্রস্তাবের পর এবার তার প্রভাবে বিদ্যুতের খুচরা দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিয়েছে বিদ্যুত্ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। একইসঙ্গে বিতরণ মাশুলও বাড়ার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। গতকাল রবিবার কাওরান বাজারে টিসিবি মিলনায়তনে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম নিয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানিতে এ প্রস্তাব ও যুক্তি তুলে ধরেন পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী খালেদ মাহমুদ।
বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য রহমান মুর্শেদ, সদস্য মিজানুর রহমান, সদস্য মাহমুদউল হক ভুঁইয়া শুনানি গ্রহণ করেন। শুনানিতে পিডিবির পক্ষ থেকে দাম বাড়ার প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার কাউসার আমীর আলী। অন্যদিকে মূল্যায়ন কমিটির পক্ষে তথ্য-বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন কমিশনের উপপরিচালক (ট্যারিফ) মো. কামরুজ্জামান।
গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুতের পাইকারি দামের বিষয়ে পিডিবির প্রস্তাবিত ২৩ দশমিক ২৭ ভাগ দাম বাড়ার প্রস্তাবের বিপরীতে কমিশনের মূল্যায়ন কমিটি ১৯ দশমিক ৫০ ভাগ দাম বাড়ার সুপারিশ করে। এতে পিডিবির প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের পাইকারি দাম ৯৩ পয়সা বৃদ্ধি পাবে। গতকাল ঐ প্রস্তাবের সূত্র ধরে পাইকারির আনুপাতিক হারে খুচরা দাম বাড়ার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। পাশাপাশি পিডিবি খুচরা গ্রাহকদের জন্য ইউনিট প্রতি বিদ্যুত্ বিতরণের মাশুল ২১ শতাংশ বাড়াতে বলেছে।
বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৮৫ পয়সা বিতরণ মাশুল আদায় করে পিডিবি। ২১ শতাংশ বাড়ালে তা এক টাকা পাঁচ পয়সা হবে। প্রস্তাবনায় বলা হয়, পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ও সঞ্চালন মাশুল (হুইলিং চার্জ) বাড়লে তা ‘পাস থ্রো’ পদ্ধতিতে সমন্বয় করতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যুতের ডিমান্ড চার্জও বাড়াতে হবে।
পিডিবি বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ইউনিট প্রতি বিদ্যুত্ বিতরণে ১ টাকা ৩১ পয়সা ব্যয় হয়। ২০২০ সালে বিতরণ ব্যয় ১ টাকা ১৮ পয়সা ধরা হয়েছে। বিইআরসির মূল্যায়নেও এই একই মূল্যহার নির্ধারণ করেছে। তবে আয় হিসেবে অন্য খাত থেকে ইউনিট প্রতি ১৩ পয়সা আসার হিসেব দিয়েছে পিডিবি। কিন্তু বিইআরসির হিসেবে তা ১৫ পয়সা, যা বিতরণ ব্যয় থেকে বাদ যাচ্ছে। সে হিসেবে দুই পক্ষের মূল্যায়নের পার্থক্য তিন পয়সা।
শুনানিতে ভোক্তা-অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর অযৌক্তিকতা আমরা উপস্থাপন করেছি। কিন্তু বিইআরসি এসব যুক্তিকে আমলে নেয় না বলেই আমাদের আদালতে যেতে হয়। আদালতেই যদি যেতে হয় তাহলে এখানে শুনানি করার দরকার কী ? বিইআরসিকে জনবান্ধব ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
শুনানিতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিজিএমইএর প্রতিনিধি আনোয়ার হোসাইন। এদিকে গতকাল বিকালে শুনানিতে অংশ নিয়ে প্রতি ইউনিট খুচরা বিদ্যুতের দাম ১ টাকা ৩১ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। তবে বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি এটি ১ টাকা ১৫ পয়সা বাড়ানো যায় বলে মন্তব্য করেছে। আজ সোমবার ঢাকার দুই বিতরণ সংস্থা ডিপিডিসি ও ডেসকোর প্রস্তাবের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।