ট্রাম্প এখনো মনে করেন তিনি নির্বাচনে হারেননি
ক্ষমতা থেকে বিদায়ের শেষ সময়ে এসেও ট্রাম্প বলছেন, নির্বাচনে তিনিই জয়লাভ করেছেন। বিজয়ী প্রার্থী বাইডেনকে অভিনন্দন জানানোর কোনো লক্ষণ ট্রাম্পের মধ্যে নেই।
‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে থাকা লোকজনকে এখনো বলছেন, নির্বাচনে তিনিই জয়ী হয়েছেন। কংগ্রেসে যে ১০ জন রিপাবলিকান তাঁর অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়েছেন ট্রাম্প। রিপাবলিকান নেতৃত্ব তাঁর পক্ষে এগিয়ে না আসায় তিনি ক্ষুব্ধ।
ট্রাম্প এখনো নির্বাচনে তাঁর পরাজয় সরাসরি স্বীকার করেননি। ভোট কারচুপি ও জালিয়াতির ভুয়া দাবি থেকে তিনি এখনো সরে আসেননি। এই ভুয়া দাবি থেকে তিনি কখনো সরে আসবেন বলেও মনে হয় না।
ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার করুন আর না করুন, নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজন জোরেশোরে চলছে।
আর এ জন্য ওয়াশিংটন ডিসি গ্যারিসন নগরীতে পরিণত হয়েছে। বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন ডিসিতে নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে নগরীতে প্রায় কারফিউ অবস্থা বিরাজ করেছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে ২৫ হাজারের বেশি সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারপরও উৎকণ্ঠা কাটছে না। সেনাসদস্যদের মধ্যে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সহানুভূতিশীল পক্ষ নিয়ে এই উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প অবশ্য হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিয়েছেন। সোমবার ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া একটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তিনি জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, ফার্স্ট লেডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করাটি ছিল তাঁর জীবনের সর্বোচ্চ সম্মানের বিষয়।
৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের আহ্বানে ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হওয়া লোকজনের সহিংসতার কথা সরাসরি উল্লেখ করেননি মেলানিয়া। তবে তিনি বলেছেন, ‘আপনারা যা কিছুই করেন না কেন, তাঁর প্রতি অনুরাগী হতে পারেন, তবে সহিংসতা কোনো সমাধানের অংশ হতে পারে না।’
ওয়াশিংটন নগরীর পার্শ্ববর্তী ম্যারিল্যান্ডের রিচমন্ড এলাকায় সোমবার দুপুরের দিকে ট্রাম্পের শতাধিক সমর্থক সশস্ত্র মহড়া দিয়েছেন। তবে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-আতঙ্কে ওয়াশিংটন ডিসির সড়কগুলো প্রায় ফাঁকা। সড়ক দিয়ে মাঝেমধ্যে রোগীবাহী গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে যাচ্ছে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা। নিরাপত্তার বেড়াজালে অনেকটা অবরুদ্ধ ওয়াশিংটন ডিসি।নগরীতে সামরিক গাড়িতে করে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা চলাচল করছেন। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ঘিরে আছেন সামরিক বাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে, ওয়াশিংটন ডিসির নিরাপত্তায় নিয়োজিত লোকজনের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি সহানুভূতিশীল পক্ষ থাকতে পারে। এ অবস্থায় ওয়াশিংটন ডিসিতে পাহারায় নিয়োজিত সেনাসদস্যদের ওপর নজরদারির জন্য পাল্টা সেনা গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ নাশকতার ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে এফবিআই। বিশেষ করে ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের আহ্বানে ওয়াশিংটন ডিসিতে বেশ কিছু বর্তমান ও সাবেক সেনাসদস্য উপস্থিত হয়েছিলেন। এফবিআই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফার মিলার বলেছেন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ঝুঁকি সম্পর্কে তাঁদের কাছে নির্দিষ্ট কোনো গোয়েন্দা তথ্য নেই। তবে এ ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থায় যে ধরনের সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন, তার সবই গ্রহণ করা হয়েছে।
সোমবার ক্যাপিটল হিলের অদূরে এক গৃহহীন আশ্রয়কেন্দ্রে ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ক্যাপিটল হিলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের কাঠামোগত প্রস্তুতি ও মহড়া দেওয়া হচ্ছিল। জরুরি বিভাগ দ্রুততার সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্যাপিটল হিলের সব প্রস্তুতি ও মহড়া এদিনের জন্য বাতিল করা হয়।
২০ জানুয়ারি বুধবার বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকেরা বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে উপস্থিত থাকবেন। সংবাদ সংগ্রহে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তাদের সাংবাদিক ও কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়েছে। রেডিও, টেলিভিশন, ডিজিটাল নিউজ অ্যাসোসিয়েশন এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য অনলাইন পোর্টাল অবমুক্ত করেছে।
বাজফিড নিউজের সাংবাদিক ম্যাক লিওড বলেছেন, বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে তিনি দৌড় দেওয়ার উপযুক্ত জুতো পরবেন। মাথায় হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাস্ক ও কালো চশমা পরে তিনি সংবাদ সংগ্রহের জন্য উপস্থিত থাকবেন।
বুধবার সকাল আটটার দিকে ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ত্যাগ করবেন। সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে লাল কার্পেটে ২১ বার সামরিক তোপধ্বনিসহ তাঁর বিদায় অনুষ্ঠান হচ্ছে না।
ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থেকে উষ্ণ বিদায় জানানোর জন্য কোনো আয়োজন কেউ করছেন না। মেরিল্যান্ডের অ্যান্ড্রু বেসে বিদায়ী সামরিক অভিবাদন নিয়েই তিনি ফ্লোরিডার মার এ লাগো-তে চলে যাবেন বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে সহিংস ঘটনায় ট্রাম্পের উসকানি নিয়ে এখনো তদন্ত চলছে। এই ঘটনার জেরে তাঁকে প্রতিনিধি পরিষদে দ্বিতীয় দফা অভিশংসন করা হয়।
আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বিভক্ত সমাজ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাইডেন তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কী বক্তৃতা দেবেন, তা নিয়ে গোপনীয়তা অনুসরণ করা হচ্ছে। তবে তিনি ঐক্য ও সংহতির কথা বলবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারের সময় বলেছিলেন, আমেরিকার এখন ক্ষত থেকে বেরিয়ে এসে শান্ত হওয়ার সময়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ১০ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৪ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি করেছেন ট্রাম্প। এ অবস্থায় বাইডেন আমেরিকার জনগণকে প্রশান্তির বাণী শোনাবেন, এমন আভাসই দেওয়া হচ্ছে তাঁর শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি কমিটির পক্ষ থেকে।