সংবিধানবিহীন দেশ চালানোর কারণেই আ.লীগ সরকার ‘যা খুশি তা’ করার সাহস পাচ্ছে: আলাল

0

বর্তমান সরকার সংবিধানবিহীন দেশ চালাচ্ছে এবং সংবিধানবিহীন দেশ চালানোর কারণেই সরকার ‘যা খুশি তাই’ করার সাহস পাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও যুবদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

উপস্থিত নেতাকর্মী এবং গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছেন, ‘আপনাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই, গত ৫ বছর ধরে বাংলাদেশে কিন্তু কোনও ছাপানো সংবিধান নাই। বাংলাদেশে এখন সংবিধান আছে কিনা এটা একটা বড় প্রশ্ন। কারণ প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ষোড়শ সংশোধনীর যে রায় দিয়েছিলেন সেই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করেছে। কিন্তু তার শুনানি এখন পর্যন্ত হয় নাই। সে কারণে সংবিধানের পরিবর্তন আনা যাচ্ছে না, সংবিধান ছাপানো যাচ্ছে না। অর্থাৎ সংবিধানবিহীন দেশ চালাচ্ছে এই সরকার এবং এই সংবিধানবিহীন দেশ চালানোর কারণেই ‘যা খুশি তাই’ করার সাহস তারা পাচ্ছে। যে দেশে ছাপানো সংবিধান নাই যে দেশ সংবিধান অনুযায়ী চলে না যে দেশে দিনের ভোট রাতে হয়ে যায়, সেই দেশে তো এমনটাই হবে।’

রবিবার (০৮ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ছাত্র-যুব ফ্রন্ট ঢাকা মহানগর আয়োজিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

আলাল বলেন, ‘আজকে সারা বাংলাদেশে ২০০৯ থেকে এখন অব্দি যে কীর্তিকলাপ চলছে এগুলোর মধ্যে সরকারের সরাসরি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত রয়েছে। যার হাজারো প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। যে কথাগুলো আমরা বিভিন্ন সময়ে বলে আসছি সেগুলো আজকে বাংলাদেশের মানুষ হারে হারে প্রমাণ পাচ্ছে। সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি ধর্মের দিক থেকে যারা সংখ্যাগুরু তাদের বিষয়েও সরকার উদাসীন। আজ থেকে তিন-চার বছর আগে পুরান ঢাকায় মহরম উপলক্ষে তাজিয়া মিছিল বের হয়েছিল, সেই মিছিলে হামলা করে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। আজ অব্দি সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। সেই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কয়েক বছর আগে চ্যানেল আইয়ের একজন আলোচক মাওলানাকে হত্যা করা হয়েছিল, সেই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এখন পর্যন্ত জমা হয়নি। আজকে শুধু সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরু নয়, সব একাকার হয়ে গেছে এই সরকারের কাছে।’

যুবদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘তারা ছাড়া অর্থাৎ আওয়ামী লীগ এবং তাদের দালালরা ছাড়া কোনও মানুষের জীবনের সামান্যতম নিরাপত্তা নেই এবং নিরাপত্তা দেয়ারও প্রয়োজন অনুভব করে না এই সরকার। রামুতে কী হয়েছিল সবার মনে আছে? শেখ হাসিনার নির্দেশে সেখানে কাঁচের মন্দিরকে কনক্রিটের মন্দিরে পরিণত করা হয়েছে, সেই মন্দিরে যিনি দায়িত্বে রয়েছেন তিনি বলেছেন, ‘অনেক সুন্দর হয়েছে বহু আরাম লাগছে, কিন্তু মনে কোনও শান্তি নেই। কারণ যারা এই মন্দিরে আগুন দিয়েছিল তারা আমার চোখের সামনে দিয়ে ঘোরাফেরা করছে’। এই প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে রানা দাশগুপ্তের সামনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাবেক শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল দুঃখ করে বলেছিলেন- ‘আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়েদের সম্ভ্রমহানি করা আওয়ামী লীগের সাংবিধানিক অধিকারে পরিণত হয়েছে। এগুলো কিন্তু তাদের লোকদেরই কথা, আমাদের কথা নয়।’

আলাল বলেন, ‘এই সরকার রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে সকলকে ব্যবহার করেন। যখন যাকে প্রয়োজন তখন তাকেই ব্যবহার করেন।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বয়স্ক-প্রবীণরা এখন দেখতে পাচ্ছেন চোখের সামনে স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা। আমি বরিশালের কথা অন্তত বলতে পারি। শতকরা ৭৫ ভাগ হিন্দুদের বাড়িঘর দখল করেছে আওয়ামী লীগের নামে সিক্সটিন ডিভিশনের মুক্তিযোদ্ধারা। নাম ধরে ধরে বলতে পারি, আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা দখল করেছেন। এদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনরাও রয়েছেন। এর পরবর্তীতে শেখ হাসিনার নিজের নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ৭০০ একরের মত জায়গা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকের কাছে থেকে দখল করেছে আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলেছেন-‘কোন কাজ হয় নাই’।’

সরকারের উদ্দেশ্যে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘আপনাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোনও অভিযোগ নাই, কিন্তু মনে কষ্ট আছে এইজন্য যে, আমরা তো একসময় গান গাইতাম গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম, এখন সেই সুন্দর দিনগুলো আর নেই, সেই সুন্দর দিনগুলো আওয়ামী লীগ হজম করে ফেলেছে। সেই সুন্দর দিনগুলো এখন শুধু তাদের জন্য অন্যদের জন্য নয়।’

যুবদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘এই সরকারকে বাধ্য করতে হবে গণতান্ত্রিক অধিকার ফেরত দেয়ার জন্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উগ্র আচারণের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যদি সে দেশের জনগণ বিদায় করে দিতে পারে গণতান্ত্রিক রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণও পারবে  অগণতান্ত্রিক এই সরকারকে বিদায় করতে। যাদের ঐতিহ্য রয়েছে মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধ বিজয়ের গৌরব ছিনিয়ে আনার।’ 

তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাচন আমাদের জন্য একটি শিক্ষা। এই নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আমাদের অধিকার আদায় করার জন্য গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য যা যা প্রয়োজন সবকিছু করার প্রস্ততি নেবো।’

আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক সঞ্জয় গুপ্তের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী ও নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com