ধানমণ্ডিতে জোড়া খুনের স্বীকারোক্তি সুরভীর
ধানমণ্ডিতে দুই নারীকে হত্যা মামলায় বাসায় নতুন কাজের মেয়ে সুরভী আক্তার নাহিদা (২২) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
পাঁচদিনের রিমান্ড চলাকালে দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার সুরভী স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়। এ জন্য তাকে আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তি রেকর্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. রবিউল আলম।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. সারাফুজ্জামান আনছারী আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ৫ নভেম্বর সুরভীসহ পাঁচ আসামির পাঁচদিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। রিমান্ডে থাকা বাকি আসামিরা হল- বাসার ম্যানেজার মো. গাউসুল আযম প্রিন্স (৪২), সিকিউরিটি গার্ড মো. নুরুজ্জামান (৪২) ও রুবার স্বামীর বডিগার্ড বাচ্চু (৩৪) ও ইলেক্ট্রিশিয়ান মো. বেলায়েত হোসেন (৩২)।
আদালত সূত্র জানায়, গত ৩ নভেম্বর নিহত আফরোজা বেগমের মেয়ে দিলরুবা সুলতানা রুবা (৪২) বাদী হয়ে রাজধানীর ধানমণ্ডি থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ধানমণ্ডি ২৮ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাসার ই-৫ নম্বর ফ্ল্যাটে স্বামী-সন্তানসহ রুবা বাস করেন। রুবার বৃদ্ধা মা আফরোজা বেগম (৬০) তার কাজের মেয়ে দিতিকে (১৮) নিয়ে একই বাসার ফ্ল্যাট নম্বর ডি-৪-এ স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন।
গত ১ নভেম্বর বাসার পুরনো কাজের লোক মো. আতিকুল হক বাচ্চু একজন নতুন কাজের মেয়েকে (সুরভী আক্তার নাহিদা) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে রুবার বাসায় নিয়ে আসে। নতুন কাজের মেয়েটিকে বাচ্চুর সঙ্গে রুবা তার মায়ের ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দেন। এরপর বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে ৫টার দিকে রুবার মা আফরোজা বেগম পুরনো কাজের মেয়ে দিতিকে নিয়ে রুবার পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট থেকে চতুর্থ তলায় তার ফ্ল্যাটে চলে যান।
ওইদিনই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রুবা তার মাকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ জন্য রুবার বাসার কাজের ছেলে মো. রিয়াজকে তার মায়ের ফ্ল্যাটে পাঠান। রিয়াজ রুবার মায়ের ফ্ল্যাটে গিয়ে কলিং বেল ও ডাকাডাকি করলে কেউ জবাব দেননি। রিয়াজ দরজায় ধাক্কা দিয়ে দেখে দরজা খোলা এবং রুবার মা আফরোজা বেগম রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে আছেন। রিয়াজ তাৎক্ষণিত এ ঘটনা রুবাবে জানায়।
রুবা তার মায়ের ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখতে পান, ডাইনিং রুমে তার মায়ের (আফরোজা বেগম) ও গেস্ট রুমে কাজের মেয়ে দিতির রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে। তখন ওই বাসায় বাচ্চু ও নতুন কাজের মেয়েকে পাওয়া যায়নি। রুবার মায়ের রুমে রক্ষিত আলমারির তালা খোলা ও মালামাল ছড়ানো-ছিঁটানো অবস্থায় মেঝেতে পড়েছিল।
বাসার সিকিউরিটি গার্ড নুরুজ্জামান জানান, নতুন কাজের মেয়েটি সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের দিকে গেট দিয়ে বাইরে চলে গেছে। রুবার ধারণা, বাচ্চু ও নতুন কাজের মেয়ে অজ্ঞাত সহযোগীদের সহায়তায় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটের মধ্যে তার মা ও কাজের মেয়ে দিতিকে ধারালো ছুরি দিয়ে শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে এবং গলা কেটে হত্যা করে। পরবর্তীকালে তারা স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ পালিয়ে যায়। বাচ্চু, নতুন কাজের মেয়ে, কেয়ারটেকার বেলাল প্রিন্সসহ বিল্ডিংয়ের নিরাপত্তা কর্মীরা এতে জড়িত থাকতে পারে বলে রুবা এজাহারে উল্লেখ করেন।