ঘুম হোক প্রশান্তির

0

রাত ও দিন আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। দিনের উজ্জ্বল আলো আর রাতের অন্ধকার তার বড়ত্বের প্রকাশ। সৃষ্টির প্রথম থেকে রাতদিন নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছে। রাত ফুরাতেই দিন এবং দিনের শেষে রাত হাজির হচ্ছে। সমগ্র বিশ্বজগতের স্রষ্টা আল্লাহতায়ালা রাতদিনের একমাত্র নিয়ন্ত্রক। রাতদিনের ওপর নির্ভর করে মানুষের জীবন যাপিত হয়। মানুষের আয়ু অতিবাহিত হয়।

দিন ও রাত্রির পরিবর্তন সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি কী দেখ না যে, আল্লাহ রাতকে দিবসে এবং দিবসকে রাতে প্রবেশ করান।’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ২৯) এখানে বলা হচ্ছে, রাত ক্রমশ দিনে এবং দিন ক্রমশ রাতে প্রবেশ করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাত ও দিন হয়। প্রসঙ্গত, পৃথিবী গোলাকার বলেই রাতদিন হতে পারে এবং দিন রাত হতে পারে।

আল্লাহ মানুষের জন্য রাতকে বানিয়েছেন বিছানা। সারাদিনের ক্লান্ত দেহের প্রশান্তির নিয়ামক। অস্থিরতা শেষে স্বস্তির ওষুধ। ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে মানুষ সব ক্লান্তি-কসুর ভুলে যায়। মানুষের দেহাবয়বে ফিরে আসে উদ্যমতা ও চঞ্চলতা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের বিশ্রামের জন্য নিদ্রা দিয়েছি, তোমাদের জন্য রাতকে করেছি আবরণস্বরূপ, আর দিনকে বানিয়েছি তোমাদের কাজের জন্য।’ (সুরা নাবা, আয়াত : ৯-১১)

অন্য আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তিনি রাতকে মানুষের প্রশান্তির উপায় হিসেবে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৯৬)

মানুষের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে আল্লাহ রাতকে ঘুমানোর বিছানা বানিয়েছেন। কিন্তু আজকের মানবসমাজ গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। বিভিন্ন অহেতুক কাজে সময়ক্ষেপণ করে। অকারণে দেরি করে ঘুমায়। অনেকে আবার দীর্ঘ রাত পর্যন্ত ইন্টারনেটে বুঁদ হয়ে থাকে। কারও কারও ঘুমোতে সকাল হয়ে যায়।

অধিক রাত জাগরণ মানুষকে চিন্তা-চেতনায় মননে ও শরীরে অসুস্থ করে তোলে। জীবন থেকে কেড়ে নেয় কর্মোদ্যোগী শক্তি। আল্লাহতায়ালা মানুষের সুন্দর জীবন যাপন, কর্ম ও চিন্তায় বেড়ে ওঠার জন্য রাতে ঘুমোতে বলেছেন। প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) নির্দেশ করেছেন এশার নামাজ পড়ে রাতের প্রথম ভাগে ঘুমানোর জন্য। ‘রাসুল (সা.) এশার নামাজ এক-তৃতীয়াংশ রাত পরিমাণ দেরি করে পড়া পছন্দ করতেন। আর এশার আগে ঘুমানো এবং এশার পর না ঘুমিয়ে গল্পগুজব করা অপছন্দ করতেন।’ ( সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯৯)

প্রয়োজনের তাগিদে রাত জাগার অনুমোদন করেছে ইসলাম। তবে সেক্ষেত্রে ইসলামের নিয়মকে উপেক্ষা করা যাবে না। রাত জাগা যেন ফজর নামাজ কাজা হওয়ার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। রাত জাগলে অনেক সময় ফজর নামাজ কাজা হয়ে যায়। কেউ জাগ্রত হতে পারলেও নামাজে মন দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। শরীর দুর্বল হয়ে আসে। ঘুমের অভাবে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ব্যক্তি, পারিবারিক ও জনজীবনে অশান্তি দেখা দেয়। কাজকর্মে খেই হারিয়ে ফেলে। চিন্তার দৈন্যতা তৈরি হয়।

তাই মানুষের কল্যাণ রয়েছে রাতে ঘুমানোর মধ্যে। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে পারলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শরীরের ওজন ঠিক ও নিয়ন্ত্রণে থাকে। কাজকর্মে উদ্যমতা ও সৃষ্টিশীলতা আনয়নে সহায়তা করে। মন-মস্তিষ্ক ভালো থাকে। চেহারার সৌন্দর্য বাড়ে।

রাতে ঘুমানোর জন্য ইসলাম কিছু সুন্দর নিয়ম-কানুন দিয়েছে। ঘুমানোর পূর্বে অজু করা, ডান কাতে শোয়া যা হৃৎপি-কে ভালো রাখে। ঘুমের আগে দোয়া পাঠ করা ও ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর মিসওয়াক করার কথা বলেছেন প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.)।

ইসলামি বিধান অনুসারে ঘুমাতে পারলে জীবন কল্যাণকর হয়ে ওঠে। ঘুমানোর পূর্বে অজু করা সওয়াবের কাজ। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তুমি যখন বিছানায় যাওয়ার ইচ্ছে করবে, তখন নামাজের অজুর মতো অজু করবে। তারপর ডান কাত হয়ে শোবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩১১; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৮৮২)

হাদিসে ডানকাতে শোয়ার কথা বলা হয়েছে। ডান কাতে শোয়ার দ্বারা হৃৎপি- ভালো থাকে। হার্ট দুর্বল এমন রোগীদের ডান পাশে ফিরে শোতে পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা। ডাক্তার কৃষ্ণ লাল বার্মা গবেষণা করে বলেন, ‘যে সব রোগীকে ডানে কাত করে শোয়ানো হয়েছে, তারা দ্রুত আরোগ্য লাভ করেছে।’

হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) রাতে যখন শয্যায় যেতেন, গালের নাবালে হাত রাখতেন। তারপর বলতেন ‘আলহুম্মা বিইছমিকা আমুতু ওয়া আহইআ।’ ঘুম থেকে যখন উঠতেন বলতেন ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহ ইয়ানা বা’দামা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশূর।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৩১৪)

ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর মিসওয়াক করা রাসুল (সা.)-এর অভ্যাস ও আমল ছিল। হুজায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় রাসুল (সা.) রাতে ঘুম থেকে জাগরত হওয়ার পর মিসওয়াক দিয়ে নিজের পবিত্র মুখ ও হাত পরিষ্কার করতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫৫)

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com