পাহাড়ের রহস্যময় সৌন্দর্য

0

পাহাড় আল্লাহতায়ালার এক নয়নাভিরাম উপহার। পৃথিবীর প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) এই পাহাড়ের মাঝেই বসতি স্থাপন করেছিলেন। ইতিহাসে সে পাহাড়কে বলা হয় আদম পাহাড়। যেখানে আজও তার পদচিহ্ন আল্লাহতায়ালার কুদরত প্রকাশ করছে। পাহাড় আর প্রকৃতি যেন একে অন্যের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। বাতাসে উড়ে আসে শুভ্র মেঘ। পাহাড়ের চূড়া ছুঁয়ে যায় আলতো পরশে। পর্বতের গহিনারণ্য ভেদ করে জেগে ওঠে পূর্ণিমার চাঁদ। তখন রাতভর চলে জোছনার খেলা। পাহাড়ের এ সৌন্দর্য দেখলে মনে হয় এ যেন রূপকথার এক স্বপ্নপুরী।

গাছের ডালে ডালে হাজারো পাখির কলতানে মুখরিত যে পাহাড়ের আঙিনা সে পাহাড়ের আকশছোঁয়া চূড়ায় যেন লুকিয়ে আছে অজানা কোনো রহস্য। তাই বলা যায়, পাহাড় এক রহস্যময় সৌন্দর্যের নাম। আর এই সব সৌন্দর্য শুধুই মানুষের মঙ্গলের জন্য। কেননা পৃথিবীর মূল বিষয়বস্তুই হচ্ছে মানুষ। মানুষ যে ভূম-লের পৃষ্ঠে বিচরণ করছে, তার স্থিতি রক্ষার্থেই আল্লাহতায়ালা পাহাড় সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আমি পাহাড়কে পেরেকরূপে সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা নাবা, আয়াত : ৭)

অন্যত্র ইরশাদ করেন, ‘আমি পৃথিবীতে এজন্য ভারী বোঝা (পাহাড়) রেখে দিয়েছি, যেন তাদের নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে  না পড়ে।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৩১)

পাহাড়ের কথা পবিত্র কোরআনে আরও অনেকবার এসেছে। পাহাড়ের গুরুত্ব বোঝাতে পবিত্র কোরআনে তুর পাহাড়ের নামে একটি সুরারও নামকরণ করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহতায়ালা জমিন সৃষ্টি করলে তা নড়াচড়া শুরু করে, তিনি তখন পাহাড় সৃষ্টি করলেন। এর ফলে জমিনের স্থিতিশীলতা কায়েম হয়।’ (সুনান আত-তিরমিজি, হাদিস : ৩২৯১)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহতায়ালা শনিবার মাটি সৃষ্টি করেছেন, আর রবিবারে পাহাড়-পর্বত।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৯৬৫)

পাহাড়কে বলা হয় অক্সিজেন ফ্যাক্টরি। কারণ, পাহাড় পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করে। বিজ্ঞানের ভাষায়, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে আসতে চাইলে পাহাড় বাধা প্রদান করে। পাহাড়ের লেয়ার ভেদ করে অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে আসতে পারে না বলে পরিবেশ মারাত্মক দূষণের হাত থেকে রক্ষা পায়।

পাহাড়ের সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্ক মাছ-পানির মতো। পানি ছাড়া যেমন মাছ বাঁচতে পারে না, তেমনি পাহাড় ছাড়াও পরিবেশ সুস্থ ও নিরাপদ থাকতে পারে না। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের দেশে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়। উঁচু-নিচু ঢেউতোলা এসব সবুজ পাহাড়ের বুক বেয়ে আঁকাবাঁকা মেঠোপথে চলতে কার না ভালো লাগে? আমাদের পাহাড়গুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি তাদের নামগুলোও ভারি সুন্দর। আবার নামের সঙ্গে মিশে আছে কোনো না কোনো ইতিহাস।

আমাদের চিম্বুক চূড়াকে বলা হয় বাংলাদেশের দার্জিলিং। এ পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেই যেন আকাশ ছোঁয়া যায়। পাহাড়ের চারদিকে তাকালে মনে হয়, এ যেন এক অন্য পৃথিবী। এ পৃথিবীর সীমানা বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। যতদূর চোখ যায়, শুধু সবুজ আর সবুজ। দিগন্ত বিস্তৃত সবুজবর্ণের এ সারি সারি পাহাড়ের হাতছানি মনকে অন্যরকম করে দেয়। যতদূর চোখ যায় কেবলই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। আমাদের এ ভূম-লের তিনদিকে পানি আর একদিকে সমতল ভূমি। পানি আর সমতল ভূমির ভারসাম্য রক্ষার্থেও পাহাড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা (মানুষ) কি পাহাড়ের প্রতি লক্ষ করে না? যে, কীভাবে তা স্থাপিত হয়েছে?’ ( সুরা গাশিয়াহ, আয়াত : ৮৮)

পাহাড়ের আরেক সৌন্দর্যের নাম ঝরনা। সূর্যের আলো ঝরনার গায়ে পড়তেই সাত রঙের রংধনু হেসে ওঠে। মেঘমুক্ত দিনে রঙধনুর এ খেলা চলে দিনভর। আবার মেঘাচ্ছন্ন পাহাড় দেখতেও কিন্তু ভারি চমৎকার। চমৎকার এ পাহাড় আমাদের শুধু মনের আনন্দই জোগায় না, বরং পাহাড়ের মতো দৃঢ় ও অটল থাকারও শিক্ষা দেয়। তাছাড়া আমাদের জন্য অঢেল সম্পদও বিলিয়ে দেয়। পবিত্র কোরআনও সে কথাই বলে, ‘তিনি পৃথিবীর উপরিভাগে অটল পর্বতমালা সৃষ্টি করেছেন, আর তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চারদিনের মধ্যে তাতে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন…।’ (সুরা হামিম সাজদাহ, আয়াত : ১০)

পাহাড় আল্লাহতায়ালার অনন্য সৃষ্টিগুলোর মধ্যে একটি। এটি পরিবেশকে রক্ষা করে, আর পরিবেশ মানুষকে সুস্থ রাখে। আফসোস! সেই মানুষই এখন পাহাড় কাটায় লিপ্ত। এর ফলে পাহাড়ের স্বাভাবিকতা বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর পরিবেশ। দেখা দিচ্ছে করোনার মতো বিপর্যয়।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, বিংশ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে একবিংশ শতাব্দীর এ সময় পর্যন্ত পাহাড় নিধনের মাত্রা ব্যাপক হারে বেড়েছে। আর বর্তমানে যেন পাহাড় কাটার উৎসব চলছে। এই পাহাড় নিধনের ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে পড়ছে, যার ফলে নানান রোগ-বালাই আর দুর্যোগের সৃষ্টি হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের পাহাড়ধ্বস ঘটেছে ১৭০ বার। এর প্রধান কারণগুলোর একটি হলো পাহাড় কাটা। আমাদের বোঝা উচিত সমুদ্র ও নদীর মতো পাহাড়ও আমাদের কারও ব্যক্তিগত সম্পদ নয়।

পবিত্র কোরআনের বাণীকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করে পরিবেশ রক্ষার্থে পাহাড়কে বাঁচাতে হবে। আসুন, আমরা সবাই পাহাড় রক্ষায় এগিয়ে আসি। পাহাড়কে ভালোবাসি। পাহাড়কে ভালোবাসা নবীজি (সা.)-এরও সুন্নত। হাদিসে এসেছে, মহানবী (সা.) কোনো সফর থেকে ফেরার সময় মদিনার সীমান্তে ওহুদ পাহাড় চোখে পড়লে তার চেহারায় আনন্দের আভা ছড়িয়ে যেত। তিনি বলতেন, ‘এই ওহুদ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও ওহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২/৫৩৬)

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com