বিধবা নারীর অধিকার

0

অনেক সমাজব্যবস্থায় বিধবা হওয়ার কারণে নানা অবর্ণনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় নারীদের। সমাজে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কারের কারণে বিধবাদের নিগৃহীত ও স্বাভাবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।

কিছু মুসলিম সমাজেও বিধবাদের অপয়া মনে করা হয়। ফলে, তাদের জীবন আর স্বাভাবিক হয়ে ওঠে না। মূলত ধর্মকে না বোঝার কারণে এমনটি হয়ে থাকে। সত্যিকার অর্থে সব কুসংস্কার দূর করে বিধবাদের সত্যিকারের মান-মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করেছে ইসলাম।

এতিম বাচ্চার দেখাশোনা বা এ ধরনের কোনো শরিয়তসম্মত অপারগতা না থাকলে বিধবা নারীর ইদ্দতের পরে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়াকে দোষ মনে করা অজ্ঞতা এবং অনৈসলামিক রীতি। আর বংশের লোকেরা তাকে বিয়ে বসতে বাধা দেওয়া হারাম। নবীজি (সা.)-এর সম্মানিত স্ত্রীরাও [আয়েশা (রা.) ছাড়া] কেউ কুমারী ছিলেন না; বরং কেউ বিধবা ছিলেন আর কেউ তালাকপ্রাপ্তা ছিলেন। (তাকমিলায়ে ফাতহুল মুলহিম : ১/৯৭)

সাহাবায়ে কেরামও বিধবা নারীদের বিয়ে করেছেন। এটা ইসলামে প্রশংসনীয়; এটাকে দোষণীয় মনে করা চরম অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতা।

কুমারী নারীর চেয়ে বিধবা নারীর বিয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তার বিয়ে না হলে অনেক সময়ই শারীরিক সুস্থতা, ইজ্জত, কখনো দ্বীন ধর্ম এমনকি সবকিছুই বরবাদ হয়ে যায়। (তাফসিরে ইবনে কাছির, সুরা নুর : ৩২) ৩/২৮৭; তাফসিরে তাবারি : ১৮/১২৫)

বিধবা হওয়ার পর সামাজিক মর্যাদা এবং নিরাপত্তার জন্য আবার বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। যা ইসলাম অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পবিত্র কোরআনের বেশ কয়েক জায়গায় বিধবা নারীদের ইদ্দতের পরে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে উৎসাহিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুবরণ করবে, তাদের স্ত্রীদের কর্তব্য হলো চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করা। এরপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে তখন তারা নিজেদের ব্যাপারে বিধিমতো ব্যবস্থা নিলে তাতে কোনো পাপ নেই।’ (সুরা বাকারা : ২৩৪) আয়াতটিতে বিধবা নারীর ইদ্দত পালনের অধিকার প্রসঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে।

সম্পদের অধিকার

বিধবা নারীর সর্বপ্রধান অধিকার হলো মৃত স্বামীর উত্তরাধিকার লাভ। যেখানে নারীরা কোনো সম্পত্তিরই মালিক হতে পারত না; বরং নিজেরাই পণ্য হিসেবে বিক্রিত হতো সেখানে স্বামীর মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে বিধবা স্ত্রীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে ইসলাম। সেক্ষেত্রে কোনো সন্তান থাকলে স্ত্রী এক অষ্টমাংশ এবং না থাকলে এক-চতুর্থাংশ সম্পত্তির মালিক হবেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের সন্তান না থাকলে তাদের (স্ত্রীদের) জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পদের এক-চতুর্থাংশ, তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পদের এক-অষ্টমাংশ। তোমরা যে অসিয়ত করবে তা দেওয়ার পর এবং ঋণ পরিশোধের পর।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১২)

বিধবা স্ত্রী সন্তানহীন হলে অথবা অন্যত্র বিয়ে করলেও সে মৃত স্বামীর সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে, যদিও বিষয়টি নিয়ে সমাজে কুসংস্কার রয়েছে।

দেনমোহর বিধবা নারীর অধিকার। স্বামী দেনমোহর পরিশোধ না করে মারা গেলে স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে অন্যান্য ঋণের মতো আগে দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে। তারপর বাকি সম্পত্তি ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।

বিধবা নারীকে সহযোগিতা

বিধবার প্রতি যত্ন ও তাদের অধিকারের বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা! নারীদের জোরপূর্বক উত্তরাধিকারের পণ্য হিসেবে গ্রহণ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয় এবং তোমরা তাদের যা প্রদান করেছ তার কোনো অংশ তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়ার জন্য তাদের আটকে রেখ না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে জীবনযাপন কর, এমনকি তোমরা যদি তাদের পছন্দ নাও কর। এমনও তো হতে পারে যা তোমরা অপছন্দ কর, তাতেই আল্লাহ অনেক কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।’ (সুরা নিসা : ১৯)

বিধবা নারীর দায়-দায়িত্ব পালন করা, তাদের সহযোগিতা করা, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, সহানুভূতি প্রদর্শন করা অনেক বড় পুণ্যের কাজ। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, ‘বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড়ে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মতো অথবা রাতে নামাজে দ-ায়মান ও দিনে রোজা আদায়কারীর মতো।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩)

বিধবা নারীদের বিয়ে করার মাধ্যমেও তাদের সহযোগিতা করা যেতে পারে। চারটা পর্যন্ত বিয়ে করার যেহেতু শরিয়ত অনুমতি দিয়েছে, এজন্য সবদিক ঠিক থাকলে বিধবা নারীকে বিয়ে করে তাদের সহযোগিতা করা যেতে পারে। একজন বিধবা নারীকে সহযোগিতা করার পুণ্য অর্জন করা যাবে।

পুরস্কার

রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি ও (নিজের যত্ন না নেওয়ায়) চেহারায় দাগ পড়া নারী পরকালে এভাবে থাকব (অথবা তিনি বলেছেন, শাহাদাত ও মধ্যমা আঙুলের চেয়ে বেশি দূরত্ব থাকবে আমাদের মধ্যে)। সে হলো সেই নারী যার স্বামী মারা গেছে এবং তার বংশীয় মর্যাদা ও সৌন্দর্য থাকার পরও সে নিজেকে বিরত রাখে এতিম সন্তানদের জন্য- যতক্ষণ না সন্তানরা (স্বাবলম্বী হয়ে) পৃথক হয়ে যায় অথবা মারা যায়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২৪৯)

সন্তানের দায়িত্ব

সন্তানের দায়িত্ব শুধু বিধবা নারীর নয়। ইসলাম বিধবা নারীকে সন্তানের একক দায় থেকে মুক্তি দিয়েছে। ইসলামি শরিয়ত মতে, সম্পদ ও ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে পিতার অবর্তমানে দাদা সন্তানের অভিভাবক এবং তার অবর্তমানে ইসলামি রাষ্ট্রের বিচারক অভিভাবক নির্ধারণ করে দেবেন। অবশ্য মা সন্তান প্রতিপালন করবে যতক্ষণ না সে অন্যত্র বিয়ে করে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি সন্তানের ব্যাপারে বেশি হকদার যতক্ষণ না তুমি অন্যত্র বিয়ে কর।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২২৭৬)

সন্তান প্রতিপালনের অজুহাতে নারীর জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করার সুযোগ নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কোনো মাকে তার সন্তানের জন্য এবং কোনো পিতাকে তার সন্তানের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করা হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩৩)

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com