মানুষ খুনের জন্য র‌্যাব-পুলিশকে দেয়া হয় রাষ্ট্রীয় পদক

0

পুলিশ ও র‌্যাবের চাকুরিতে যত বেশি খুন ততবড় পুরস্কার মিলে। মানুষ খুনে উৎসাহিত করতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের জন্য পুরস্কৃত করা হয় পুলিশ ও র‌্যাবের কর্তাদের। রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভূষিত করার মাধ্যমে মানুষ খুনে উৎসাহিত করা হয় রাষ্ট্রীয় উদ্যেগে। এই পুরস্কারের নেশায় জনগনের টাকায় পরিচালিত র‌্যাব ও পুলিশ হয়ে উঠে দানবে। যেন মানুষ খুনের স্বীকৃতি হিসাবেই দেয়া হয় রাষ্ট্রীয় পদক! পুলিশ পদকের তালিকা যাচাই করে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। যেমন, ২০১০ সালে কথিত ক্রসফায়ারে নোয়াখালিতে একজন ডাকাত খুনের জন্য রাষ্ট্রীয় পদক দেয়া হয় র‌্যাবের ইন্টিলিজেন্স উইংয়ের তৎকালীন পরিচালক লে. কর্ণেল জিয়াউল আহসানকে।

পদকের জন্য মনোনীত হওয়ার বর্ণনায় লেখা হয়, “বিচক্ষণ র‌্যাব কর্মকর্তা লে. কর্ণেল জিয়াউল আহসান গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন যে, নোয়াখালি জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসী দুর্ধর্ষ জলদস্যু ও ডাকাত দলের সর্দার আবুল বাশার মাঝি কতিপয় অস্ত্রধারীসহ নোয়াখালি জেলার হাতিয়া থানার চর এলাকায় অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত ০৬/০৭/২০১০ তারিখে অনুমান ০৫টায় তাঁর নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি চৌকস দল উক্ত সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য নাঙ্গলীয়া চরে উপস্থিত হয়। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে গুলি বর্ষণ শুরু করে। তাঁর নেতৃত্বে র‌্যাবের দলটিও আত্মরক্ষা ও সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে পাল্টা গুলি বর্ষণ করে। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় ১৫ মিনিট গুলি বিনিময় হয়। র‌্যাবের সাহসী প্রতিরোধের মুখে সন্ত্রাসীরা টিকতে না পেরে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঘটনাস্থল হতে কুখ্যাত সন্ত্রাসী আবুল বাশার মাঝির গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ সহ ১টি বন্দুক, ১টি বন্দুকের গুলি এবং চারটি লম্বা ধারালো হাসুয়া উদ্ধার করা হয়। তিনি অসীম সাহসিকতার সাথে কুখ্যাত জলদস্যু আবুল বাশার মাঝিকে গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এ অভিযানের সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ লে.কর্ণেল জিয়াউল আহসান বীরকে ‘বালাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) সাহসিকতা’পদকে ভূষিত করা হল।”
এখানে উল্লেখ্য যে, এই জিয়াই ২০১৩ সালের মে হেফাজতের আলেমদের শাপলা চত্তরে গণহত্যায় ঢাকা মেটোপলিটনের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার (বর্তমান আইজিপি) বেনজির আহমদের সাথে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

২০১১ সালে ক্রসফায়ার বা তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের জন্য পুরস্কার হিসেবে পুলিশ পদক (বিপিএম) পান র‌্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক মো. মোখলেসুর রহমান।
পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার বীরত্বের বিবরণে বলা হয়, “তার কৌশলী দিক-নির্দেশনায় ২০১১ সালে র‌্যাবের অভিযানে ১৩ জন চরমপন্হী শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। তাছাড়া নয় জন শীর্ষ চরমপন্হী র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।”
এই খুনের জন্য তৎকালীন র‌্যাবের মহাপরিচালকের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এছাড়া একই বছর (২০১১ সালে) ক্রসফায়ার বা তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের জন্য প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম) পুরস্কার পান র‌্যাবের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মনিরুল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল আহসান, মো. কামরুজ্জামান, শাহ মো. আজাদ, মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, মো. তাহেরুল ইসলাম, মো. আওলাদ হোসেন।
পিপিএম পদক দেয়ার কারণ হিসেবে তাদের সাহসিকতার বিবরণে কথিত বন্দুকযুদ্ধে ‘জলদস্যু’ ও ‘ডাকাত’ নিহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

টেকনাফ থানার বহুল আলোচিত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ কথিত বন্দুকযুদ্ধের জন্য ২০১৯ সালে পুলিশের সর্বোচ্চ পদক ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক’ বা বিপিএম পেয়েছিলেন। পদক পাওয়ার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরে ছয়টি কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করে। সব কটি ঘটনাতেই আসামি নিহত হন।

পুরস্কৃত হিসাবে মনোনীত হওয়ার বর্ণনায় প্রথম যে ঘটনার উল্লেখ করা হয় সেটি ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবরের একটি ক্রসফায়ারের ঘটনা। পুলিশের ভাষ্য ছিল, টেকনাফ থানার সাবরাং ইউপির কাটাবনিয়া সাকিনে ঝাউবাগানে অভিযানে গেলে অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে। এতে উত্তর জালিয়াপাড়া এলাকার হাসান আলী (৩৫) ও নাজিরপাড়া এলাকার মো. হোসেন প্রকাশ কামাল (২৮) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

দ্বিতীয় ক্রসফায়ারের ঘটনাটি একই বছরের ২৪ অক্টোবর। ঘটনাস্থল ছিল মহেশখালিয়া পাড়ার হ্যাচারিজোন এলাকায় জঙ্গল। ইয়াবা কারবারি মফিজ আলমকে পুলিশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় অস্ত্রসহ আটক করে। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এরপরের অভিযান একই বছরের ১৮ নভেম্বর। পুরস্কৃত হওয়ার ঘটনার বর্ণনায় লেখা হয়, দক্ষিণ লেঙ্গুর বিলের ফরিদ আলমকে নিয়ে তার সহযোগী ভুলু মাঝির বাড়িতে উপস্থিত হলে অস্ত্রধারী ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে ইয়াবা ব্যবসায়ী মো. ফরিদ আলম গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

চতুর্থ ঘটনার বর্ণনায় লেখা হয়, ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর ‘ইয়াবা ব্যবসায়ী’ হাবিব উল্লাহ ওরফে হাবিবকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করে পুলিশ। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অনুরুপভাবে দেখা যায়, সন্ত্রাস দমনের নামে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতনের জন্য অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। ২০১০ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ জয়নুল আবেদীনকে প্রকাশ্যে রাজপথে নির্যাতনের জন্য পুরস্কৃত করা হয় পুলিশ কর্মকর্তা হারুনুর রশিদকে। সে বছরই তাঁকে পুলিশ পদক দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। পুরস্কারের বর্ণনায়ও বলা হয়েছিল, রাজপথে কথিত সন্ত্রাস দমনে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।

সূত্রঃ আমারদেশ

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com