নতুন কালুরঘাট সেতুর নকশা জটিলতা, পুরনোতে দায়সারা সংস্কার
৫৭ লাখ টাকার কাজ শেষ হওয়ার পর এক মাসও যায়নি। এরইমধ্যে কালুরঘাট সেতুতে আবারও বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
উঠে গেছে কাঠের পাটাতন, ভেঙে গেছে রেলিং। অথচ ১০ দিন যানবাহন চলাচল বন্ধ করে সংস্কার করা হয় সেতুটি। প্রশ্ন উঠেছে, ওই ১০ দিন তাহলে কী কাজ করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান?
কালুরঘাট সেতু মেরামতের জন্য ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশল বিভাগ। সেতু মেরামতের কাজ পায় এবি কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তারা গত ১৩-২৩ জুলাই সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত প্রতিদিন যানবাহন চলাচল বন্ধ করে সেতুটি সংস্কার করে।
অভিযোগ রয়েছে, ওই সময়ে ১৩-১৯ জুলাই কোনো কাজই হয়নি। ২০ জুলাই থেকে লোক দেখানো কিছু কাজ হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে সংস্কারের জন্য ৫-৭ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। বাকি টাকা রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে আত্মসাৎ করার চেষ্টা চলছে।
ওই সময়ে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দিয়েছেন সেলিম চৌধুরী নামের এক আইনজীবী। তিনি রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সরদার সাহাদাত আলীর কাছে চিঠি পাঠিয়ে এর প্রতিবাদ জানান।
শনিবার (২৯ আগস্ট) সরেজমিন দেখা যায়, কালুরঘাট সেতুতে আগের মতোই বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। পাটাতন উঠে গেছে। আগের গর্তগুলোতে বিটুমিন দিয়ে ভরাট করা হলেও সেগুলো উঠে গেছে। কয়েকটি জায়গায় রেলিং ভেঙে গেছে। ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনজীবী সেলিম চৌধুরী বলেন, সেতু মেরামতের নামে পুরো টাকাটাই খেয়ে ফেলছে তারা। গত ১৩-২৩ জুলাই কোনো কাজই করেনি। এ বিষয়টি আমি স্থানীয় এমপিকে লিখিত আকারে জানিয়েছি। তিনি রেলওয়ের জিএমের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ১৯৩০ সালে নির্মিত কালুরঘাট সেতুতে ১৯৫৮ সাল থেকে ট্রেনের পাশাপাশি যানবাহনও চলাচল করছে। একমুখী চলাচলের কারণে দুইপাশে যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি সেতুর ওপর চাপ বেড়েছে। তাই বারবার মেরামত করে সেতুটি সচল রাখার ব্যবস্থা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেতুটির বয়স হয়েছে ৯০ বছর। ২০০১ সালে সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়।
সর্বশেষ ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে সেতুটি মেরামত করা হয়। এর আগে ২০০৪ সালেও এটি মেরামত করা হয়েছিল। এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত ছোটখাটো মেরামতকাজ করতে হয় বয়সের ভারে ন্যুব্জ এই সেতুর।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. সবুক্তগীন বলেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে এখনও টাকা দিইনি। তারা একবছরে যতবার ভেঙে যাবে ততবার সেতুর সংস্কার করবে। আমরা পরিদর্শনে গিয়ে সেতুতে আবারও গর্ত সৃষ্টি হওয়ার প্রমাণ পেয়েছি। বর্ষাকাল হওয়ায় সংস্কারকাজ করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি থামলে আবারও সেতুটি সংস্কার করা হবে।
প্রসঙ্গত, চান্দগাঁও ও মোহরা এলাকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ এ সেতুর ওপর নির্ভরশীল। কালুরঘাট সেতুর জায়গায় নতুন করে একটি দ্বিমুখী সড়ক ও রেলসেতু নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন সেতুর বিষয়ে সুরাহা না হলে সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রয়াত সংসদ সদস্য মঈন উদ্দীন খান বাদল।
ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি প্রকল্পের অধীনে কালুরঘাটে পুরনো রেল সেতুর স্থানে নতুন ‘রেলওয়ে কাম রোড সেতু’ নির্মাণের নকশা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে শুধু রেল সেতু নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়ায় প্রকল্পটির কাজে ধীরগতি দেখা দেয়।
পরবর্তীতে স্থানীয় পর্যায়ে সড়ক ও রেল সেতু নির্মাণের দাবি উঠলে পুরনো নকশায় সেতুটি নির্মাণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে। প্রস্তাবিত নকশায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেতুর উচ্চতা ধরা হয়েছে ৭.২ মিটার। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেতুর উচ্চতা হতে হবে ১২.২ মিটার। এতে সেতুর বর্তমান নকশা তৈরি নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে রেলওয়ের সেতু বিভাগ।