ভারত সীমান্তে চীনের ফের বিশাল সেনা সমাবেশ
সীমান্ত নিয়ে ভারতের সাথে চীনের বিরোধের বিষয়টি ফের আলোচনায় এসেছে। সম্প্রতি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং স্বীকার করেন, চীনের পিপল’স লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) বিপুল সদস্য চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) পেরিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। গ্লোবাল টাইমস ও সিসিটিভি।
এরই মধ্যে চীনের সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস এবং সরকারি সিসিটিভি চ্যানেল রোববার জানিয়েছে, ভারতের সাথে সীমান্ত নিয়ে বিবাদের মধ্যেই প্রায় কয়েক হাজার প্যারাট্রুপার-সহ সীমান্তে বিশাল সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে চীন। প্রয়োজনে সীমান্ত অঞ্চলে দ্রুত ভারী সামরিক যান ও বাহিনী পাঠানোর ব্যবস্থা পরীক্ষা করে নিতেই পিএলএলের এই তোড়জোড় বলছে চীনা সংবাদমাধ্যম দু’টি।
চীনা সংবাদমাধ্যমের খবরকে উদ্ধৃত করে সোমবার এসব তথ্য জানায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। তবে চীনা সংবাদমাধ্যমে যখন এই খবর প্রকাশিত হচ্ছে, সেই সময় নয়া দিল্লি জানিয়েছে, পূর্ব লাদাখে সপ্তাহব্যাপী সীমান্ত সঙ্কট দূর করতে ভারত ও চীনের মধ্যে সামরিক ও কূটনৈতিক আলোচনা বহাল থাকবে।
শনিবারই লাদাখে চীন সীমান্ত-সংলগ্ন নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে মলডোতে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসে ভারত ও চীনের সামরিক প্রতিনিধিদল। তবে তার ফলাফল কী দাঁড়িয়েছে, তা জানায়নি দুই পক্ষই। তবে সীমান্তের কোন অংশে ওই বিশাল সেনা সমাগম ঘটানো হয়েছিল, তা অবশ্য ফাঁস করেনি চীনা সংবাদমাধ্যম। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ভারতকে কড়া বার্তা দিতেই শনিবার এ বিশাল কুচকাওয়াজের ব্যবস্থা করা হয়। চীনা সংবাদমাধ্যম বলছে, ওই দিনের সামরিক মহড়ায় বেসামরিক বিমান সংস্থা, বাণিজ্যিক পরিবহন ব্যবস্থা ও রেলের সাহায্যে মধ্য চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে পিএলএ বিমানবাহিনীর কয়েক হাজার প্যারাট্রুপারকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে দেশের উত্তর-পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের কোনো অজ্ঞাত গন্তব্যে পাঠানো হয়। তাদের সাথেই পাঠানো হয়েছে ট্যাঙ্ক, ভারী সশস্ত্র সামরিক যান এবং বিপুল সামরিক রেশন। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই বিশাল বাহিনী ও সরঞ্জাম গন্তব্যে পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছে সিসিটিভি চ্যানেল।
এর আগে ১৪ মে লাদাখে একই রকম সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করেছিল বেইজিং। তখন থেকে সীমান্ত নিয়ে বিরোধের বিষয়টি ফের প্রকাশ্যে আসে। গত সপ্তাহে গ্লোবাল টাইমস জানায়, সীমান্ত অতিক্রম করে রাতের অন্ধকারে শত্রুশিবিরে অতর্কিতে হানা দেয়ার উদ্দেশ্যে ৪৭০০ মিটার উচ্চতায় বাহিনী পাঠিয়েছে পিএলএলের তিব্বত সামরিক ঘাঁটি। সবমিলিয়ে ভারত-চীন সীমান্ত বিরোধ ঘিরে রীতিমতো যুদ্ধকালীন প্রস্তুতির ব্যবস্থা করে ফেলেছে বেইজিং।
ভারত চীনের অ্যাপসভিত্তিক প্রযুক্তি যুদ্ধ : লাদাখ সীমান্তে ভারত-চীন দ্বন্দ্ব শুরু হওয়ার পর থেকে গুগল প্লে স্টোরে চীনের বাইটড্যান্স টেক ফার্মের তৈরি টিকটক অ্যাপসের র্যাংক ৫ নম্বর থেকে সোজা ১০ নম্বরে চলে গেছে। বলা হচ্ছে, এই অ্যাপসটির প্রচুর ব্যবহারকারী ভারতের। আর সে কারণেই এমনটি হয়েছে। চীনবিরোধী চিন্ত-চেতনা দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে বেড়ে যাওয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে এবং সে কারণেই চীনের এই অ্যাপসের বিরুদ্ধে অন্য অ্যাপসও তৈরি করা হচ্ছে দেশটিতে। ‘রমুভ চায়না অ্যাপ’ এমন একটি স্লোগান জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভারতে। কিন্তু যেভাবেই বলা হোক না কেনো, চীনের তৈরি অ্যাপস ব্যবহার একেবারে বন্ধ করছে না ভারত। গত বছরে ভারতে সবচাইতে বেশি ডাউনলোড হওয়া ১০ অ্যাপসের মধ্যে ৫টি ছিল চীনের তৈরি। ভারতের বুকে চীনের অ্যাপসগুলোর এই প্রভাব প্রমাণ করে চীন নিজেদের অ্যাপসের মাধ্যমে ফেসবুক, অ্যাপল এবং গুগলের ওপর নিজেদের কর্তৃত্ব প্রদর্শনে কতটা তৎপর।
চীনের হুয়াওয়ে কোম্পানি তাদের অ্যাপ স্টোর উন্নয়নের জন্য ভারতের সফটওয়্যার নির্মাতাদের সহায়তা নিচ্ছে। এই জন্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের গ্লোবাল ফান্ড গঠন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই সাথে হুয়াওয়ে মোবাইলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অ্যাপস তৈরির জন্য ভারতের ১৫০টির বেশি ফার্মের সাথে আলোচনা করে যাচ্ছি চীন। আর অ্যাপসের মার্কেট বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, চীনবিরোধী এই চেতনাকে কাজে লাগিয়ে ভারতের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব অ্যাপস তৈরি করতে পারে।
বর্তমানে চীনের বেশ কিছু সোশ্যাল অ্যাপস বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে নিউজডক এবং ডেইল হান্টের মত কিছু অ্যাপস চীনবিরোধী বিভিন্ন পোস্ট মুছে দিচ্ছে বা তা ছড়িয়ে দেয়া রুখে দিচ্ছে। তাদের বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মানুষের মত পরিবর্তনে এই অ্যাপসগুলো ভূমিকা রাখছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ছাড়াও ভারতের অধিকাংশ গেমিং অ্যাপসের সাথে ‘ট্যানসেন্ট’ সম্পৃক্ত যার মাধ্যমে কিউকিউকয়েন ব্যবহার করা হয়। এই কয়েনের মাধ্যমে ভারত থেকে অবৈধভাবে অর্থ পাচারের সুযোগ তৈরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়। সম্প্রতি বেইজিং ভিত্তিং কুনলুন প্রতিষ্ঠানের ডেটিং অ্যাপস ‘গ্রিন্ডার’ ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বলা হচ্ছে এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
টিকটক ও জুম অ্যাপসের মাধ্যমেও চীনে ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহ তা তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। একবার যদি হুয়াওয়ের অ্যাপ গ্যালারি জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়, তাহলে সরকার নিরাপত্তা হুমকির কথা বলেও চীনের এই সকল অ্যাপস ব্যবহার থেকে কাউকে রুখতে পারবে না। চীনের মতো ভারতে এভাবে অ্যাপস তৈরি ও ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্যমান আইনের কারণে।