বিশ্বে করোনা শনাক্ত রোগী ২০ লাখ ছাড়িয়েছে, শেষ ১৩ দিনে শনাক্ত ১০ লাখ
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে শনাক্ত লোকের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়াল। এর মধ্যে প্রথম তিন মাসে হয়েছে ১০ লাখ। আর গত ১৩ দিনে হয়েছে বাকি ১০ লাখ। এ সময়ে গড়ে প্রতিদিন শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৭৭ হাজার। ৪ এপ্রিল সর্বোচ্চ এক লাখের বেশি লোকের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর সর্বশেষ ১০ এপ্রিল শনাক্ত হয় ৯৬ হাজারের বেশি। এরপর থেকে গত কয়েক দিন আগের চেয়ে করোনা শনাক্তের সংখ্যা কমেছে।
ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীন থেকে শুরু হলেও জানুয়ারির শেষে নানা দেশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে মহামারি করোনাভাইরাস। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। তিন মাসের মাথায় ২ এপ্রিল ১০ লাখ ছাড়ায় করোনা শনাক্ত। এরপর ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে করোনা শনাক্তের সংখ্যা। এ সময় সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত পাওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে।
আজ বুধবার সাড়ে আটটা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য বলছে, ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চলে করোনা সংক্রমিত হয়েছে। এতে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৯৮৪। আর বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৭১ জন।
বিশ্বজুড়ে করোনা শনাক্তের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শুরুতে করোনা শনাক্তে চীন এগিয়ে থাকলেও ধীরে ধীরে প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রে চলে আসে ইউরোপ। ইতালি, স্পেন, জার্মানি, যুক্তরাজ্যের মতো দেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে করোনা মোকাবিলায়। তবে এপ্রিলে সব ছাপিয়ে শীর্ষে চলে আসে উত্তর আমেরিকার শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র। এখন এ দেশটিতেই করোনা শনাক্ত ও আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে বুধবার পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬ লাখ ৯ হাজার ৬৯৬ জনের। আর দেশটিতে করোনায় প্রাণহানি ২৬ হাজার ছাড়িয়েছে।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের পর করোনা শনাক্ত হওয়া শীর্ষ পাঁচটি দেশ ইউরোপের। এর মধ্যে স্পেনে শনাক্ত ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৩৩ জন ও মৃত্যু ১৮ হাজার ৫৭৯ জন, ইতালিতে শনাক্ত ১ লাখ ৬২ হাজার ৪৮৮ ও মৃত্যু ২১ হাজার ৬৭ জন, জার্মানিতে শনাক্ত ১ লাখ ৩২ হাজার ৩২১ ও মৃত্যু ৩ হাজার ৫০২ জন, ফ্রান্সে শনাক্ত ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৬২ ও মৃত্যু ১৫ হাজার ৭৫০ জন, যুক্তরাজ্যে শনাক্ত ৯৪ হাজার ৮৫২ ও মৃত্যু ১২ হাজার ১৩১ জন।
এর পরের তিনটি দেশ এশিয়ার চীন, ইরান ও তুরস্ক। এর মধ্যে চীনে নতুন শনাক্তের হার এখন অনেক কম। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চীনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮৩ হাজার ৩৫৫ জনের ও মারা গেছে ৩ হাজার ৩৪৬ জন। দেশটিতে ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে গেছে ৭৮ হাজারের বেশি করোনা রোগী। আর ইরান ও তুরস্কে এখনো বাড়ছে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। এখন পর্যন্ত ইরানে শনাক্ত হয়েছে ৭৬ হাজার ৩৮৯ ও মারা গেছে ৪ হাজার ৭৭৭ জন এবং তুরস্কে শনাক্ত ৬৫ হাজার ১১১ ও মারা গেছে ১ হাজার ৪০৩ জন।
সুস্থ হওয়ার সংখ্যায় সবার ওপরে রয়েছে চীন। বিশ্বজুড়ে ৫ লাখ ১ হাজার ২০৬ জন সুস্থ হয়েছে। এর মধ্যে চীনে সুস্থ হয়ে উঠেছে ৭৮ হাজার ৩০৭ জন। এরপর সবচেয়ে বেশি সুস্থ হয়েছে জার্মানিতে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সেরে উঠেছে ৭২ হাজার ৬০০ জন। আর যুক্তরাষ্ট্রে সুস্থ হয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩৩ জন, স্পেনে ৭০ হাজার ৮৫৩ জন, ইতালিতে ৩৭ হাজার ১৩০ জন, ফ্রান্সে ২৯ হাজার ১২১ জন।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য বলছে, চার দিন ধরে টানা করোনা শনাক্ত বাড়ছে বাংলাদেশে। এ সময়ে পরীক্ষার সংখ্যাও আগের চেয়ে বেড়েছে। বুধবার পর্যন্ত দেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩১ জন। এর মধ্যে আজ সর্বোচ্চ ২১৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত দেশে ৫০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আর সুস্থ হয়েছে ৪৯ জন।