পাকিস্তানের জন্য যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে তুরস্ক

0

তুরস্কের সাথে পাকিস্তানের এই প্রকল্প চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আর কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১১ মার্চ। এই প্রকল্পের অধীনে পাকিস্তানী নৌবাহিনীর জন্য এডিএ শ্রেণীর করভেটের আদলে চারটি ফ্রিগেট তৈরি করা হবে। দুটো জাহাজ নির্মাণ করা হবে ইস্তাম্বুল নেভাল শিপইয়ার্ডে আর বাকি দুটি নির্মাণ করা হবে পাকিস্তানের করাচি শিপইয়ার্ডে।

টার্কিশ ডিফেন্স অ্যাণ্ড অ্যাভিয়েশান ইন্ডাস্ট্রি এ যাবতকালে যত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, সেগুলোর মধ্যে এটা ছিল সবচেয়ে বেশি মূল্যের। অন্যদিক থেকেও চুক্তিটি ঐতিহাসিক, কারণ এই প্রথম নিজস্ব ডিজাইনের যুদ্ধজাহাজ রফতানি করেছে তুরস্ক। ২০১৯ সালের ১৪-১৫ অক্টোবর এমইটিইউ কালচার অ্যাণ্ড কংগ্রেস সেন্টারে যে নবম নেভাল সিস্টেম সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে ন্যাশনাল ডিফেন্স মন্ত্রণালয়ের শিপইয়ার্ডের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল রিয়ার অ্যাডমিরাল মেহমেত সারি পিএন মিলজেম প্রকল্প নিয়ে বক্তৃতা করেন। এ সময় তিনি বলেন, “আমরিকানরা সব ধরনের নেতিবাচক বাধা সৃষ্টি করা সত্বেও আমরা পাকিস্তানের কাছ থেকে ১ বিলিয়ন ইউরোর প্রকল্পটি পেয়েছি এবং এটার সূত্র ধরে হেলিকপ্টার (টি১২৯বি অ্যাটাক) প্রকল্পেরও একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে”।

প্রকল্পের প্রধান ঠিকাদার মিলিটারি ফ্যাক্টরি অ্যাণ্ড শিপইয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট ইনকর্পোরেশানের (এএসএফএটি) দেয়া সময়সূচি অনুযায়ী প্রথম জাহাজটির নির্মাণকাজ তুরস্কে টি০+৫৪তম মাসে শেষ হবে। দ্বিতীয় জাহাজটি ৬০তম মাসে পাকিস্তানে শেষ হবে, তৃতীয় জাহাজটি ৬৬তম মাসে তুরস্কে এবং শেষ জাহাজটি ৭২তম মাসে পাকিস্তানে শেষ হবে। প্রথম জাহাজের নির্মাণকাজ এবং চতুর্থ জাহাজ হস্তান্তের মধ্যে ছয় বছর সময় রয়েছে। জিন্নাহ শ্রেণীর শেষ ফ্রিগেটটি ২০২৫ সালে করাচিতে হস্তান্তর করা হবে এবং সেটা পাকিস্তানী নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হবে।

পাকিস্তান নৌবাহিনী ২০১৯ সালের ৮-১২ ফেব্রুয়ারি আমান-২০১৯ নৌ মহড়ার আয়োজন করে। আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরে আয়োজিত ওই নৌ মহড়ায় অংশগ্রহণ করেছিল ডিফেন্স টার্কি ম্যাগাজিন। মহড়ায় বিশেষ অতিথি হিসেবে পাকিস্তান নৌবাহিনীর কমাণ্ডার অ্যাডমিরাল আব্বাসী টিসিজি গোকচেয়াদা ফ্রিগেট জাহাজ পরিদর্শন করেন এবং ঘোষণা দেন যে, জিন্নাহ শ্রেণীর করভেট জাহাজে ভার্টিক্যাল লঞ্চিং সিস্টেম (ভিএলএস) সংযুক্ত করা হবে। তবে কতগুলো জাহাজে ভিএলএস যুক্ত করা হবে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তিনি জানাননি।

জিন্নাহ শ্রেণীর ফ্রিগেটে আরও কিছু সুক্ষ্ম সাব-সিস্টেম যুক্ত করা হবে, যেগুলো এডিএ শ্রেণীর করভেটে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে হাভেলসান অ্যাডভেন্ট কমব্যাট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএস), আসেলসান এআরইএস-২এন ইএসএম, হিজির টর্পেডো কাউন্টারমেজার্স সিস্টেম, স্মার্ট-এস এমকে২ থ্রিডি সার্চ রাডার, ইয়ালতেস প্রোডাক্ট এপকিস ইন্টিগ্রেটেড প্ল্যাটফর্ম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, এবং মেতেকসান ডিফেন্স বিষয়ক ইয়াকামোস হাল-মাউণ্টেড সোনার সিস্টেম। জিন্নাহ শ্রেণীর ফ্রিগেটে একইসাথে নেভাল ইনফরমেশান এক্সচেঞ্জ সিস্টেম (এনআরএক্সএস) যুক্ত করা হবে, যেটা পাকিস্তান নৌবাহিনীর জন্য তৈরি করেছে মিলসফ্ট। সেই সাথে থাকবে নিজস্ব প্রযুক্তির ডাটা-লিঙ্ক সিস্টেম ‘লিঙ্ক গ্রিন’। পাকিস্তান নৌবাহিনী সারা দেশজুড়ে যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি করেছে, যেটাকে রেডলাইন বলা হয় এবং এটার মাধ্যমে নিক্স-সংযুক্ত প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে যোগাযোগ করা যায়।

এদিকে, প্রধান ঠিকাদার আসফাত এবং আসেলসান ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ১৭৯.৯ মিলিয়ন ইউরোর একটি চুক্তি করেছে। যে চুক্তির অধীনে জিন্নাহ শ্রেণীর ফ্রিগেটগুলোতে আসেলসান প্রডাক্ট সিস্টেম ও সরঞ্জামাদি সংযুক্ত করা হবে। চুক্তি অনুযায়ী আসেলসান ২০২২-২৩ সালের মধ্যে তাদের সরঞ্জামাদি সরবরাহ করবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com