গাঢ় হলুদ রঙের কাপড়ে পেঁচানো প্রিয় নেত্রীর হাত! দেখানো তো দূরের কথা, বলবেও না কেউ !

0

বাবুল তালুকদারঃ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজানো একটি মামলায় দুই বছরের অধিক সময় ( ৭৭৫ দিন ) নির্দয় কারাভোগের পর আজ তিনি জামিনে মুক্তি পেলেন। যে মানুষটি পায়ে হেঁটে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি আজ বাড়ি ফিরে আসলেন হুইলচেয়ারে পঙ্গু অবস্থায়! তিনি এখন হাঁটতে পারছেন না, দাঁড়াতে পারছেন না, বাঁ হাতটিও অকেজো হয়ে ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে! 

গতকাল থেকেই তিনি মুক্তি হতে পারেন সেই আশায় আমরা পিজি হাসপাতালে সাংবাদিকরা রাতদিন ডিউটি করতে লাগলাম, করোনার ভয় কে অগ্রাহ্য করে আজো সকাল থেকে আমরা উপস্থিত হয়েছিলাম সদলবলে! শুধু আমরাই নয় দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে দলের শত শত নেতাকর্মী জড়ো হয় হাসপাতালটিতে । সাথে পুলিশ, নিরাপত্তারক্ষী ও উৎসুক জনতার ভিড় ক্রমশ বাড়তেই থাকলো। এভাবে কাজ করা হয়ে গেল বড় মুশকিল, উপায়ন্তর না দেখে আমি উঠে গেলাম চিলেকোঠায় একটি রডের উপর, দাঁড়িয়ে রইলাম পুরো ২ ঘন্টা। এদিকে সকাল- দুপুর গড়িয়ে বিকেল এ আসলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ টি!

কিন্তু একি! শত মানুষের ভিড় ঠেলে নেত্রীর হুইলচেয়ার টি যখন সামনে আসলো আমি ছবি তোলা বন্ধ করে কিছুক্ষণের জন্য তাকিয়ে রইলাম, এতো ভিন্ন এক নারী , কষ্টের তীব্র যন্ত্রনা যেন চোখে মুখে ভেসে উঠেছে তাঁরই প্রতিচ্ছবি। সবাই যখন তার চেয়ারটি ধরে সামনে নিয়ে আসছে ঠিক তখন তিনি ব্যস্ত নিজের বাঁ হাতটি ঢেকে রাখতে। বোঝা যাচ্ছিল না আসলে কি হয়েছে হাতে ? গাঢ় হলুদ রঙের কাপড়ে হাত পেঁচায়ে রেখেছিলেন! 

” ঠিক তখনই আমার স্মরণে আসে একটি ঘটনা, বছর পাঁচেক আগের কথা, গুলশান কার্যালয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সঙ্গে চেয়ারপরসনের শুভেচ্ছা বিনিময় একটি অনুষ্ঠানে আমি যখন ছবি তুলে চলে যাব, ( ছবিটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিলিজ করতে ) এমন সময় নেত্রী আমাকে ডেকে বললেন, বাবুল তুমি যেওনা কাজ আছে। আমি মাথা নেড়ে বললাম জী। অনুষ্ঠান শেষ হতেই তিনি আমাকে ডাকলেন , আমি কাছে যেতেই তিনি তার বাঁ হাত টি আমার সামনে এনে বললেন কয়েকটি ছবি তুলো, আমি বুঝতে পারলাম না ! তখন তিনি বললেন, আমার হাতে ব্যথা, লন্ডনে ডাক্তারের কাছে বর্তমান হাতের অবস্থার কয়েকটি ছবি পাঠাতে হবে। আমিও দেরি না করে বিভিন্নভাবে মোট সাতটি ছবি তুলি,  এবং পরদিন সে ছবিগুলো তাকে পৌঁছে দেই।”

যাইহোক আমি পিজি হাসপাতালের ছবি তোলা শেষ করে পিছু নিলাম নেত্রীর গাড়ির, এ সময় রাস্তার দুই পাশে মানুষ এক নজর দেখার জন্য তাকিয়ে ছিল, কেউ কেউ হাতে তালি দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছিলো । কিন্তু বাংলামটর ক্রস করে কাওরান বাজার পৌঁছলেই ঘটলো বিপত্তি, নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ, যদিও তারা নিয়ম ভেঙেই গিয়েছিল নেত্রীকে অভিনন্দন জানাতে। তারপরও  যথারীতি র‌্যাংগস ভবন,  বনানী ও গুলশানের বাধা পেরিয়ে যে কজন আসতে পেরেছিল তারাই দলীয় স্লোগান দিয়ে বাড়িতে স্বাগত জানায় প্রিয় নেত্রীকে। 

এরইমধ্যে নেত্রীর গাড়ি গুলশানের বাড়িতে প্রবেশ করে সাথে আমিও , পরিবারের সদস্যরা তাকে স্বাগত জানাতে দাঁড়িয়েছিল, গাড়ি থেকে নামতে ডান হাত উপরে তুলতেই বাঁ হাতের হলুদ কাপড়টা সরে গেল নিচে, অমনি তিনি বললেন কাপড় তুলে দাও হাতে, আমি হাতটির দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না ! (…….. নাইবা বললাম) শুধুমাত্র চিকিৎসার অভাবেই এমনটি হয়েছে ! ফাতেমা কাপড় তূলে দিল। 

সবাই যখন সালাম দিচ্ছিলো তাকে, তিনি সালামের উত্তর নিচ্ছিলেন হাত নেড়ে। শত কষ্টের মাঝেও মুখে বললেন, কেমন আছো তোমরা? আমিও সামনে এগিয়ে সালাম দিলাম তিনিও উত্তর নিলেন হাত নেড়ে। 

পরিশেষে বলবো, আজ ২৫ মার্চ, সেই ভয়াল কালো রাত আর এই ২৫ মার্চেই ভাগ বসালেন অন্য একটি নতুন ইতিহাস। বাংলাদেশের তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিলাভ। 

প্রিয় নেত্রী, তুমি বড়ই অভাগা দেশে জন্ম নিয়েছো! তোমার প্রাপ্য সম্মান ও অধিকারটুকু আমরা তোমায় দিতে পারলাম না, ক্ষমা করো মোদের ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com