সরকারের গড়িমসিতে চরম ঝুঁকিতে জনগণ : বিএনপি
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দেশের জনগণকে রক্ষা করতে গড়িমসি করেছে সরকার। এ কারণে দেশের জনগণ আজ চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় কে কোন দল করে তা না দেখে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল সোমবার এসব কথা জানিয়েছেন বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান।
বিএনপির ওই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার সরকারকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত সময় পেলেও সরকার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়নি। সেনাবাহিনী নামাতে দেরি করে ফেলেছে। সরকারের গাফিলতির কারণে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে এবং নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে। সরকার দেরি করলেও দেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দলের নেতাকর্মীদের রক্ষায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে বিএনপি। জ্যেষ্ঠ নেতারা নিজেরা সতর্ক থাকার পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদেরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয় এবং দলের পূর্বঘোষিত সব ধরনের কর্মসূচি স্থগিত করে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দেশের জনগণকে রক্ষা করতে
বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের গাইডলাইন অনুসরণ করে নেওয়া হয়েছে। শুধু দলের নেতাকর্মীদেরই নয়, সর্বস্তরের জনগণকে সতর্ক করার কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে দলের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণ করা হয়। যাতে করে জনগণ করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।’
এদিকে গত শনিবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল দলমত নির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আতঙ্ক না ছড়িয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দলমত নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে কাজ করুন।’
তিনি বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে আমরা মনে করি যে, করোনাভাইরাস একটি জাতীয় ও বৈশ্বিক বিপর্যয়। সেজন্য আমরা দলমত নির্বিশেষ সব জাতি-ধর্মের মানুষের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি, আসুন আমরা এখন আতঙ্কিত না হয়ে এটাকে মোকাবিলা করি। এই মোকাবিলা করতে গিয়ে আমাদের যা যা কাজ করা দরকার সেই কাজগুলো আমরা যেন করি। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই- জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে এই বৈশ্বিক বিপর্যয়কে মোকাবিলা করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আমাদের লিফলেটে, আমাদের বক্তব্যে যেভাবে বলা হয়েছে জনসমাগম থেকে দূরে থাকা, স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া, মানুষদের সচেতন করে তোলা বিশেষ করে যারা গ্রামে আছেন তাদের সব দলের পক্ষ থেকে বলছি ‘আপনারা বাড়িতে থাকুন’। সরকারের পক্ষ থেকে বলা উচিত তাদেরÑ তোমরা হোম কোয়ারেনটাইনে চলে যাও।’
ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের প্রতি আমার অনুরোধ যে, দয়া করে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বৃদ্ধি করবেন না। মানুষের এই দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন।’
এ সময় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রাক-প্রস্তুতি না থাকার জন্য ‘সরকারের ইচ্ছাকৃত উদাসীনতা ও ব্যর্থতা’কে দায়ী করেন তিনি। পাশাপাশি করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিট, চিকিৎসকদের বিশেষ পোশাক সরবরাহ, তাদের প্রশিক্ষণসহ হাসপাতালে এই রোগের আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান ফখরুল।
করোনাভাইরাস নিয়ে নেতাকর্মীদের রক্ষায় দলের হাইকমান্ডের সতর্কতার বিষয়ে রিজভী গতকাল বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপে বৈঠক স্থগিত করেছেন অনির্দিষ্টকালের জন্য। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার স্কাইপে বৈঠক হবে। এছাড়া আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত দলের পুনর্গঠন কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।’
এরপর গত ৯ সোমবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির এক সভায় দলের সব কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সভায় সভাপতিত্ব করেন। পরদিন ১০ মার্চ মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব।