নিজেদের গৃহবন্দি করেছেন বিশ্বজয়ী আকবররা
দক্ষিণ আফ্রিকায় ফাইনালে শক্তিধর ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ শিরোপা কুড়ায় যুব টাইগাররা। গত ১২ই জানুয়ারি দেশে ফিরে আকবর আলীর নেতৃত্বাধীন যুব ক্রিকেট দল পেয়েছে বীরের সংবর্ধনা। বদলে গেছে তাদের জীবনযাত্রাও। তাদের প্রায় সবাই সুযোগ পেয়েছেন ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে খেলার। কিন্তু হঠাৎ করেই সব এলোমেলো। বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা করোনা ভাইরাস আঘাত হেনেছে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বন্ধ করে দিয়েছে সব ধরনের ক্রিকেট। এমনকি ফিটনেস ঠিক রাখতে জিমে যাওয়া নিয়েও রেখেছে বিধিনিষেধ।
দেশে ফেরার পর থেকেই আকবরদের ঘিরে ছিল সাধারণ মানুষের ভিড়। তবে এখন এসব এড়িয়ে কার্যত বাসায় বন্দি থাকতে হচ্ছে তাদের। তবে এমন অবস্থায় সবাইকে ধৈর্য্য ধরে নিজেদের নিরাপদ রাখতে অনুরোধ করেছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আকবর আলী, তানজিম হাসান সাকিব ও পেসার শরিফুল ইসলাম। এ নিয়ে আকবর বলেন, ‘সে সময় আসলে বাসায় অনেক মানুষ জন আসছিল, আর এখন আমি নিজেও কারো সঙ্গে দেখা করছি না। বাসায় থাকার চেষ্টা করছি সবসময়। আর আমার মনে হয় মানুষজনও এখানকার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে যে এখন বের না হওয়া ভালো। এছাড়াও আমি বলবো যে সবাই সাবধানতা মেনে চলার চেষ্টা করবেন। আর দোয়া করবেন একে অপরের জন্য।’
হঠাৎ করেই খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছন্দপতন হয়েছে আকবরদের ক্রিকেটের পথ চলায়। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন এটা মেনে চলতে হচ্ছে বলেই জানান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক। আকবর বলেন, ‘এখানে আসলে তেমন কিছু করার নাই। শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো বিশ্বে খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে। তো আশা করছি যে যত দ্রুত সম্ভব যেন এটা ঠিক হয়ে যায়। এর থেকে বেশি কিছু করার নেই আমাদের।’ তবে একেবারে যে বসে আছেন তাও নয়। বাসাতেই ফিটনেস নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান আকবর। তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করছি একটু রানিং করার। যে সময়টাতে মাঠে তেমন কেউই থাকে না। একদম ভোরে বা এমন এক সময় যখন আসলে মাঠে তেমন কেউ থাকে না। আর বাসায় যে ওয়ার্কআউটগুলো করা যায় সেগুলো করছি।’
ক্রিকেট ছাড়া কঠিন, তবুও… -শরিফুল ইসলাম
ক্রিকেটারদের জন্য ঘরে বসে থাকা খুব কঠিন। কিন্তু এখন মেনে নেয়া ছাড়া করারই বা কি আছে। এই বাস্তবতাকে মেনেও নিয়েছেন পেসার শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমি একজন পেশাদার ক্রিকেটার তো ক্রিকেট ছাড়া থাকতে মনে হচ্ছে কিছু একটা মিস করছি। সবসময় চাচ্ছি যেন করোনা ভাইরাস মুক্ত হয় আমাদের দেশ। যাতে আমরা আবার মাঠে ফিরতে পারি।’ তবে তাদের সামনে এখন অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ফিটনেস ধরে রাখা। তাই সারাদিন গৃহবন্দি থাকলেও ফিটনেস ধরে রাখতে বের করেছেন অন্য উপায়ও। একেবারে ভোরে গ্রামের রাস্তা ফাঁকা থাকে। সেই সুযোগে দৌড়ানোর কাজটা করছেন শরিফুল। তিনি বলেন, ‘গ্রামের রাস্তা সাধারণত ভোর থেকে সকাল আটটা নয়টা পর্যন্ত ফাঁকা পাওয়া যায়। এরপর গাড়ি চলাচল শুরু হয়। তো ছয়টার দিকে রানিং শুরু করি, যতটুকু করা যায়। যতটুকু দৌড়ালে নিজের ফিটনেস ধরে রাখা যায়।’
যে ভয় পাচ্ছেন সাকিব
করোনা নিয়ে আতঙ্কে আছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পেসার তানজিম হাসান সাকিবও। তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাস যদি বাংলাদেশে মহামারি আকার ধারণ করে তবে সেটা ভীষণ বিপদজনক হবে সবার জন্য। একে তো এটার তেমন কোনো চিকিৎসা নাই। উন্নত বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে যদি মহামারি আকার ধারণ করে তবে খুবই ভয়াবহ অবস্থা হয়ে যাবে। আর আমি মনে করি সিদ্ধান্তটা খুবই ভালো নিয়েছে (খেলাধুলা স্থগিত)।’ তবে থেমে গেলেতো হবে না। ক্রিকেটার বলে কথা। তাই বাসাতেই নিজেদের ফিট রাখার কাজ করছেন বলে জানান এই পেসার। তিনি বলেন, ‘আমরা আপাতত হোম ওয়ার্কআউটগুলো করছি। সবসময়ই আমাদের ট্রেনার আপডেট দিচ্ছে কিভাবে কী করা যায়। জিমে যাওয়া নিষেধ কারণ এটাতে অনেক রিস্ক। জিনিসগুলো অনেক জন ব্যবহার করে। তো করোনা ভাইরাস সাধারণত হাত থেকে ছড়ায়।’
তাদের বাসায় মানুষের ভিড় কমে যাওয়ায় স্বস্তিও প্রকাশ করেছেন এই তরুণ ক্রিকেটার। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি বলবো এখন অনেক শান্ত লাগছে। এখন আর কেউ আগের মতো বাড়িতে আসছে না। বন্ধুরা ফোন দিচ্ছে তবে আমি সেভাবে বের হচ্ছি না। আসলে এখন পরিবারকে বেশি সময় দিচ্ছি, বেশ ভালো লাগছে।’