ঈদে বেতন-বোনাস নিয়ে শঙ্কা
করোনাভাইরাসের কারণে ক্রেতা দেশগুলো একের পর এক অর্ডার বাতিল করায় তৈরি পোশাক বা গার্মেন্টস খাতে আগামী ঈদে বেতন-বোনাস দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২৯৬ থেকে ৩০০ গার্মেন্টসের অর্ডার বাতিল করা হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানতে পেরেছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত শনিবার পর্যন্ত ১০৭৯ কারখানার ১৫০ কোটি ডলার মূল্যের রপ্তানি অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে। প্রতি মুহূর্তেই ক্রেতারা অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করছেন। এসব কারখানায় কাজ করেন সোয়া সাত লাখ শ্রমিক। এ অবস্থায় পোশাক খাত সুরক্ষায় করণীয় নির্ধারণ ও শ্রমিকদের বেতনভাতা অব্যাহত রাখার উপায় নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের নিয়ে আজ জরুরি বৈঠকে বসছেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, তৈরি পোশাক খাতে করোনাভাইরাসের প্রভাব সম্পর্কে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। তাতে এ খাতের ২৯৬ থেকে ৩০০টি কারখানার অর্ডার বাতিল হওয়ার তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এভাবে অর্ডার বাতিল হতে থাকলে কারখানাগুলো সচল রাখা সম্ভব হবে না। এছাড়া আগামী মাসে শুরু হতে যাওয়া রমজান ও পরের মাসে ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ বাণিজ্য সচিবের সভাপতিত্বে বস্ত্র ও পাট সচিব, শ্রম সচিবসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রধানদের নিয়ে সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সভায় পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরাও উপস্থিত থাকবেন।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, চীন লকডাউন হওয়ার পর আমদানি বন্ধের সময়ও আমাদের তেমন সংকট ছিল না। যে পরিমাণ কাঁচামাল মজুদ ছিল, তা দিয়ে আরও কিছুদিন গার্মেন্টগুলো সচল রাখা যেত। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে যেসব দেশে রপ্তানি করব সেখানে। কোনো ক্রেতাই এখন আর পোশাক নিচ্ছে না।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও নিউএজ গ্রুপের কর্ণধার আসিফ ইব্রাহীম বলেন, গত শনিবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ১০৭৯টি কারখানার ১৫০ কোটি ডলারের রপ্তানি অর্ডার বাতিল হয়েছে। এ সংকট মোকাবিলায় বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ও পর্ষদ সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব জানতে বিজিএমইএ একটি পোর্টাল চালু করেছে। ওই পোর্টালে যেসব কারখানা সংযুক্ত হয়েছে, তাদের মধ্য থেকে প্রায় ৩০০ কারখানার অর্ডার বাতিল হয়েছে। তবে এখনো সব কারখানা ওই পোর্টালে সংযুক্ত হয়নি। তিনি বলেন, ক্রেতারা যে পরিমাণ অর্ডার বাতিল করছেন, স্থগিত করছেন তার চেয়ে বেশি। রপ্তানি অর্ডার পাওয়ার পর আমরা ফেব্রিক সংগ্রহ করে তা নির্ধারিত মাপ অনুযায়ী কেটে থাকি। ক্রেতারা আমাদের অনুরোধ করছেন ফেব্রিক এখনই না কাটার জন্য। তারা সরাসরি অর্ডার বাতিল না করে আমাদের বলছেন, দু-তিন সপ্তাহ পর তারা চূড়ান্ত করবেন অর্ডার থাকবে নাকি বাতিল হবে। মোট অর্ডারের ৮০ শতাংই এভাবে স্থগিত করা হচ্ছে। তৈরি পোশাক রপ্তানি শিপমেন্ট প্রায় বন্ধ বলা যায়।
তিনি বলেন, রপ্তানি বা শিপমেন্ট না হলে আমরা রপ্তানি মূল্য পাব না। আর রপ্তানি মূল্য না পেলে শ্রমিকদের বেতনভাতা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। বিশেষ করে আগামী মে মাসে, রমজান ও ঈদের সময়ে। শ্রমিকদের বেতনভাতা অব্যাহত রাখতে সরকারের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো উপায় নেই। সব দেশই ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোকে সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। আমাদের দেশেও তা প্রয়োজন।
পারভেজ বলেন, পোশাক খাত দেশকে অনেক দিয়েছে, এবার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে দেশের কাছে এ খাতের প্রত্যাশা অনেক।