কতবার মুখে হাত দিলে জীবাণু ছড়ায়, কী করবেন?
গোটাবিশ্বে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস। চীন থেকে গোটা বিশ্বে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসে এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৩৯৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
শুধু ইতালিতেই গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৬২৭ জন। এনিয়ে দেশটিতে ৪ হাজার ৩২ জন মারা গেল।
করোনাভাইরাস খুবই দ্রুতগামী সংক্রমণ ভাইরাস। হাত না ধোয়া ও সংক্রমনিত হাত দিয়ে নাক, মুখ ও চোখে স্পর্শ করলে এই ভাইরাস দ্রুত গলায় ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে। তাই করোনার সংক্রমণ হতে রক্ষা পেতে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। তবে আমরা অনেকেই জানি না যে কতবার মুখে হাত দিলে জীবাণু ছড়ায়।
নোংরা হাত একবার মুখের সংস্পর্শে বিভিন্ন রোগ ছড়ায়। তাই বারবার হাত ছোঁয়া থেকে বিরত থাকুন। নোংরা হাতের আঙুলে অসংখ্য জীবাণু সুপ্ত অবস্থায় থাকে। এতে শরীরের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ার জন্য মাত্র একবারই নাক, চোখ বা মুখে আঙুলের স্পর্শ যথেষ্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার সংক্রমক রোগ বিশেষজ্ঞ ডন মুনি বেকার বলেন, ভাইরাস শ্বাসতন্ত্রে সরাসরি আঘাত করে। ফলে শ্বাসতন্ত্রকে প্রভাবিত করে ও ভাইরাস শ্লেষ্মার মাধ্যমে (পিচ্ছিল নিঃসরণ বা মিউকাস) শরীরে প্রবেশ করে। এসব শ্লেষ্মা থাকে নাক–মুখের গহ্বর ও ঠোঁটে। তাই অপরিষ্কার হাত এ ধরনের সংক্রমণের জন্য যথেষ্ট।
করোনাভাইরাসের এই সময়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) একটি বিষয় মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। তা হলো কারণে বা কারণ ছাড়াই মুখে হাত দেয়ার অভ্যাস। আর এই অভ্যাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনাভাইরাস।
কতবার মুখে হাত দেই
একজন মানুষ দিনে কতবার মুখে হাত দেয় এ বিষয়ে একটি জরিপ করেছে সিডনি ইউনিভার্সিটি। ২০১৫ সালে জরিপটি করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টি ২৬ জন হবু চিকিৎসকের ওপর একটি ভিডিও জরিপ চালায়।
এতে দেখা যায়, একজন মানুষ প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ২৩ বার তার মুখে হাত দেয়। এখানে মুখ বলতে ব্যক্তির ঠোঁট, জিহ্বা, নাক, কপাল, গাল, চোখ ও থুতনিকে বোঝানো হয়েছে। গত সপ্তাহেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনাভাইরাস–সচেতনতা প্রসঙ্গে ঘোষণা দেন যে তিনি কয়েক সপ্তাহ ধরে নিজের মুখ স্পর্শ থেকে বিরত রয়েছেন।
তিনি নিজের মুখকে ভীষণ মিস করছেন। কিন্তু গত সোমবার তোলা তার একটি ছবি গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে দেখা যায়, তিনি বাঁ হাতের তর্জনী গালে ঠেকিয়ে বসে আছেন।
মুখ স্পর্শ করবেন যেভাবে
ভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সবাইকে মুখে হাত দেয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। তবে একেবারে মুখে হাত না দিয়ে তো চলা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে চিকিৎসক ডন মুনি বেকার একটি টিপস দিয়েছেন। আর তা হলো টিস্যু বা রুমাল ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা।
তাই হাঁচি বা কাশির ক্ষেত্রে টিস্যু ব্যবহার করুন। এই অভ্যাস ব্যক্তি ও তার কাছের মানুষকে সংক্রমণ এড়াতে সহায়তা করবে।
হাত পরিষ্কার করবে যেভাবে
করোনা প্রতিরোধে অবশ্যই হাত পরিষ্কারের পদ্ধতি জানতে হবে। এই নিয়ম নিজে মেনে চলতে হবে ও আপনার চারপাশের মানুষে জানাতে হবে।
আসুন জেনে নেই যেভাবে হাত পরিষ্কার করবেন-
১.সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।
২. যদি পানি না থাকে তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। এই স্যানিটাইজারে অ্যালকোহলের পরিমাণ কমপক্ষে ৬০ শতাংশ থাকতে হবে।
৩. হ্যান্ড স্যানিটাইজার জীবাণুমুক্ত করলেও ময়লামুক্ত করতে পারে না। এ জন্য হাত পরিষ্কারের ক্ষেত্রে সাবান-পানিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৪. টয়লেট ব্যবহারের পর ও হাঁচি-কাশি হাতের স্পর্শে এলে হাত পরিষ্কারের বিকল্প নেই।