কোয়ারেন্টিনে অর্থনীতি
করোনার প্রভাবে যে শুধু মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বা প্রাণহানি হচ্ছে তা নয়, থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতি। প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতেও। চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লেও এতদিন দেশের পুঁজিবাজারে তেমন প্রভাব পড়েনি।
তবে গত ৮ মার্চ দেশে তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পর পুঁজিবাজারে আতঙ্ক বেড়েছে। আর এ আতঙ্কের কারণে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, মানুষের পাশাপাশি করোনার ভয়ে দেশের অর্থনীতিকেও কোয়ারেন্টিনে রাখতে হচ্ছে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, করোনাভাইরাস খারাপ অবস্থায় গেলে ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ ৩০২ কোটি ১০ লাখ ডলার পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সেবা খাতে। আগামী ১ বছরে চাকরি হারাতে পারে দেশের প্রায় ৯ লাখ মানুষ। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে এডিবি।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, করোনাভাইরাস মহামারীর জের ধরে শিগগির বিশ্ব অর্থনীতিতে ঘনিয়ে আসতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়। শুরু হতে পারে ভয়াবহ মন্দা। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকেও বড়সড়ো অর্থনৈতিক ধাক্কার মুখে পড়তে হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে রফতানি আয় এমনিতেই পড়তির দিকে। জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪ দশমিক ৭৯ ভাগ। অব্যাহতভাবে কমছে পোশাক রফতানিও। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র এ পণ্যটির প্রধান বাজার। করোনাভাইরাসের কারণে সেখানকার বাজারে এরই মধ্যে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ইতালিতে মানুষ ঘর থেকেই বের হতে পারছে না, যেখানে ১৪৩ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে বাংলাদেশ গত বছর। ধীরে ধীরে একই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে গোটা ইউরোপে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির বেশিরভাগ সূচকই নিম্নমুখী। এর মধ্যেও ভালো করছিল রেমিটেন্স। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ১০৪২ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ ভাগ বেশি। করোনার মহামারী অবস্থা চলতে থাকলে এই গতি ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাবে বাংলাদেশের জন্যে।
দেশের অর্থনীতির প্রধান দুই চালিকাশক্তি রফতানি ও রেমিটেন্স। রফতানি আয় কমে গেলে দেশের শিল্পকারখানাগুলোয় শ্রমিকদের চাকরি চলে যাওয়ার উপক্রম হবে। অন্যদিকে প্রবাসীরা টাকা পাঠানো কমিয়ে দিলে তাদের পরিবার দেশে আগের মতো খরচ করতে পারবে না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যে। কমে যাবে বেচাকেনা, চাহিদা কমে গেলে পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতির মুখে পড়বে। আবার বেড়ে যাবে আমদানিকৃত পণ্যের দাম। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অস্থিরতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক আবিষ্কার না হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণ বড় চ্যালেঞ্জ হবে বাংলাদেশের জন্য।