ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ গ্রহণের পথে সরকার
ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ গ্রহণের পথে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। একদিকে রাজস্ব আদায় কম, অন্যদিকে বাড়তি খরচ মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ব্যাপক হারে ঋণ নেয়া হচ্ছে। চলতি বছরে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিচ্ছে তা গত ৪৮ বছরের মোট ঋণের চেয়ে বেশি।
এছাড়া ব্যাংক ব্যবসায় সাধারণ মানুষের লাভ না হলেও ব্যাংক মালিকরা ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। বৃহস্পতিবার এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউট (পিআরআই) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) যৌথভাবে কর্মশালাটির আয়োজন করে।
এতে সহায়তা দিয়েছে ফ্লাইড রিচ নাউম্যান ফাউন্ডেশন ফর দ্য ফ্রিডম (এফএনএফ)। রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মশালার বিষয়বস্তু ছিল ‘দ্য ম্যাক্রো ইকোনমি অ্যান্ড এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন।’
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিআরআইর চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার, নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এবং সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক ড. এমএ রাজ্জাক। বক্তব্য রাখেন এফএনএফের বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ড. নাজমুল হোসেন।
কর্মশালাটি পরিচালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দিয়ে উন্নত দেশে যাওয়া সম্ভব নয়। যারা কর দেয় তাদেরই মাথায় শুধু মুগুর মারার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু যারা করের আওতার বাইরে কিন্তু কোটি কোটি টাকার মালিক তাদের কিছু বলাও হচ্ছে না।
তাছাড়া সুনির্দিষ্ট কয়েকটি খাত থেকেই শুধু কর আদায়ের চেষ্টা করা হয়। যেমন ব্যাংক, টেলিকম ইত্যাদি খাত। আমদানি রফতানির ক্ষেত্রে ব্রিটিশ আমলের নিয়ম অনুযায়ী কর আদায় হচ্ছে। ফলে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। দেশে জিডিপির অনুপাতে ট্যাক্স রেশিও মাত্র ৮ দশমিক ৬ শতাংশ।
এটি বাড়ছে না। সরকারের ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হয়নি। ট্যাক্স পলিসি ভালো না হওয়ায় বৈষম্য বাড়ছে। ব্যাপক রাজস্ব ঘাটতি, ব্যাপক রাজনৈতিক কমিটমেন্টের অভাব রয়েছে। যেমন ভ্যাট নিয়ে এনবিআর যা করেছে তার সবই জিরো।
তিনি বলেন, সরকার যেভাবে প্রতি সপ্তাহে ১০-২০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পাস করছে এতে অনেক অর্থের প্রয়োজন। তাছাড়া অনেকে অল্প টাকায় প্রকল্প শুরু করে পরে বেশি টাকায় সংশোধন করা হচ্ছে। অর্থাৎ এডিপিতে সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরিয়ে আসার মতো। এ অবস্থা থেকে বের হতে হবে।
রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৪৫ শতাংশ। এখন পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৭ শতাংশ। ফলে সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। এনবিআরকে এ অবস্থায় রেখে এসডিজি, প্রেক্ষিত পরিকল্পনাসহ কোনো পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
সরকারের খরচ যেভাবে বাড়ছে এতে করে এক সময় টাকা শেষ হয়ে যাবে। ঋণ নেয়ার জায়গাও থাকবে না। ফলে বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ব্যাংক জনগণের জন্য লাভজনক নয়, মালিকদের জন্য লাভজনক।
ব্যাংক মালিক ও পরিচালকরা একে অন্যের ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসা বাড়াচ্ছেন। আবার পরস্পর যুক্তি করে ঋণ পরিশোধও করেন না।
ড. জাইদী সাত্তার বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে যারা করের আওতার বাইরে রয়েছেন। কিন্তু কর দেয়ার যোগ্য তাদের কাছ থেকে কর আদায় করতে হবে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যাপক চাপের মধ্যে পড়বে।
এখন থেকেই ব্যাপক প্রস্তুতি দরকার। ড. এমএ রাজ্জাক বলেন, ২০২৪ সালের পর বাংলাদেশে এলডিসি থেকে বেরিয়ে গেলে প্রধানত তিনটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জে পড়বে। এগুলো হল- আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সুবিধা কমবে। দেশের অভ্যন্তরে পলিসি সাপোর্টের সুযোগ সংকুচিত হবে এবং উন্নয়নে স্বল্প সুদের অর্থায়ন থাকবে না।
তিনি জানান, ২০২৪ সালের পর ৪৭টি দেশে ডিউটি ফ্রি/কোটা ফ্রি সুযোগ হারানোর চ্যালেঞ্জে পড়বে দেশ। তবে ২০২৭ সাল পর্যন্ত শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নে বর্তমান সুবিধা অব্যাহত থাকবে। তার মধ্যে আবার ব্রেক্সিটের কারণে ইউকের বাজারে কি হবে সেটি এখনও বলা যাচ্ছে না।
এ মুহূর্তে সরকারকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিসহ বিদ্যমান সুবিধা অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থায় কার্যকর ভাবে লবিং অব্যাহত রাখতে হবে।