করোনার লক্ষণ কিভাবে চিনবেন?
ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে করোনা ভাইরাস। চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হয় কোভিড-১৯-এর। তারপর তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে নানা দেশে। যা এখন ৭০টি দেশে ত্রাস হয়ে উঠেছে। চীনের পর সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান ও ইতালির। আক্রান্তের সংখ্যা ৯০,০০০ ছাড়িয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে এই রোগ এসে গেছে। ফলে বাংলাদেশের নাগরিকদের আরো বেশি সতর্ক হওয়া দরকার হয়ে পড়েছে।
এই রোগের সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি হলো, এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক বা ওষুধ নেই। ফলে সেরে ওঠার নিশ্চয়তাও নেই। লক্ষণ দেখেই সাধারণত চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
কাজেই এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় এখন নিজেরা সতর্ক থাকা।
করোনাভাইরাস কী?
COVID-19 – CO-এর অর্থ করোনা (Corona), V-এর অর্থ ভাইরাস (Virus) আর D-এর অর্থ ডিজিজ (disease)। 2019 novel coronavirus-ই হলো COVID-19। মারাত্মক সংক্রামক এই রোগ। ভাইরাস পরিবারের নয়া সদস্য এই করোনাভাইরাস।
কী ভাবে ছড়িয়ে পড়ে COVID-19?
মানুষ থেকে মানুষেই ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। COVID-19 ভাইরাসে আক্রান্ত কারও হাঁচি বা কাশির সময়ে মুখ যদি না ঢাকেন তাহলে হাঁচি-কাশির সেই ছিটেফোঁটা থেকে ওই জায়গায় উপস্থিত কারো করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার অনেক আশঙ্কা থাকে।
গবেষকদের পরামর্শ, এই রোগের লক্ষণ ধরা পড়ার আগেই অন্য কারো শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে COVID-19 ভাইরাস।
করোনার উপসর্গ
জ্বর দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়, এরপরে শুকনো কাশি দেখা দিতে পারে। প্রায় এক সপ্তাহ পরে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হয়। প্রতি চারজনের মধ্যে অন্তত একজনের অবস্থা মারাত্মক পর্যায়ে যায় বলে মনে করা হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে হালকা ঠান্ডা লাগা থেকে শুরু করে মৃত্যুর সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
শিশুদের উপর প্রভাব কী?
এটা একটা নতুন ভাইরাস। কাজেই শিশুদের উপর বা অন্তঃসত্ত্বাদের উপর এর প্রভাব কী, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে যে কোনও বয়সের মানুষেরই এই রোগ হতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা কম।
শিশুর সুরক্ষায় কী পদক্ষেপ?
১. সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যান। তবে এটা ফ্লু-এর সিজন। এটাও খেয়াল রাখবেন। করোনার উপসর্গ সাধারণ ঠান্ডা লাগা বা ফ্লু-এর মতোই। কাজেই উদ্বিগ্ন না-হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
২. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাঠ দিন শিশুকে। বারবার হাত ধোয়ানোর অভ্যেস করুন। হাত ধোয়ার পর স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
৩. টীকাগুলো ঠিকমতো দিয়ে রাখুন। যাতে ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়াজনিত রোগগুলোর সঙ্গে শিশুর শরীর যুঝতে পারে।
উপসর্গ দেখা দিলে কি বাচ্চাকে স্কুলে পাঠাবেন?
১. করোনার উপসর্গ দেখা দিলে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
২. অনেক লোকের সমাগম হয়, এমন জায়গায় পাঠানো থেকে বিরত থাকুন।
৩. স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে রাখুন। স্কুলে পাঠানো বন্ধ না-করে হাইজিন মেনটেইন করার কথা শেখান শিশুকে।
৪. হাঁচি বা কাশি পেলে টিস্যু পেপারে মুখ ঢাকতে বলুন। তারপর সেই টিস্যু পেপার যেন অবশ্যই শিশু ডাস্টবিনে ফেলে দেয়, তা নিশ্চিত করুন।
COVID-19 ছড়িয়ে পড়া কী ভাবে আটকাবেন এবং নিরাপদই বা থাকবেন কী ভাবে-
খুব সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চলললেই সহজে নিরাপদ থাকা সম্ভব। জেনে নিন-
১. নিজের স্বাস্থ্যবিধি নিজেই সযত্নে মেনে চলুন।
২. এই সময়ে কারো সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার কথা মাথাতেই আনবেন না।
৩. নিজের চোখ, নাক এবং মুখ নিজেই ছোঁবেন না।
৪. কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য ভালো করে সাবান দিয়ে নিজের হাত ধুয়ে ফেলুন। CDC-র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাথরুম যাওয়ার পর, খাওয়ার আগে এমনকী হাঁচি বা কাশির পরেও হাত ধুয়ে ফেলুন। অ্যালকোহল-যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন, যাতে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল থাকবে, যদি না সাবান এবং পানি খুব শিগগিরই না পান।
৫. হাঁচিকাশির সময়ে নিজের নাক ও মুখ টিস্যু পেপার দিয়ে ঢাকুন। আর সেই টিস্যু ব্যবহার করা হয়ে গেলে অতি অবশ্যই তা ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন।
৬. শরীর খারাপ লাগলে এই সময়ে কোনো মতেই বাড়ির বাইরে বেরোবেন না।
৭. যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে এই কয়েকটা দিন তাদের পাশে ঘেষবেন না। WHO-র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, যিনি হাঁচছেন বা কাশছেন তার থেকে কমপক্ষে ২ মিটার দূরত্ব বজায় রাখা উচিত।
৮. রাস্তাঘাটে যত্রতত্র থুতু ফেলা বন্ধ করুন।
৯. রাস্তাঘাটের পশুদের থেকে দূরত্ব অবলম্বন করুন।
১০. কাঁচা গোশত বা অর্ধসিদ্ধ গোশত খবরদার খাবেন না এই সময়।
১১. আর এখনই যদি জ্বর ও সর্দিকাশি খুব পরিমাণে দেখা দেয়, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডাক্তার দেখান।