গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের সকলের সংসদে থাকা উচিত: নাহিদ
তিনি বলেছেন, আগামী সেখানে সংস্কার পরিষদ হবে। নতুন সংবিধানের জন্য কাজ করা হবে। গণঅভ্যুত্থানের অংশীজনদের সকলের সংসদে থাকা উচিত।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে আয়োজিত ইউনিভার্সিটি টিচার্স ফোরামের (ইউটিএফ) অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
নাহিদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের জায়গা থেকে জুলাই সনদের অর্ডার ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দিতে হবে। জুলাই সনদে নোট অব ডিসেন্ট বলে কিছু থাকবে না। যা ঐক্যমত হয়েছে, বাকিটা জনগণ ঠিক করবে। জুলাই সনদের আইনিভিত্তির মাধ্যমে আমরা নির্বাচনের দিকে যাব।
অনুষ্ঠানে ইউনিভার্সিটি টিচার্স ফোরামের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম এবং সদস্যসচিব হিসেবে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. শামীম হামিদী রয়েছেন।
অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে নাহিদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের একটা প্রেক্ষাপট ছিল অর্থনৈতিক সংকট; বিশেষত তরুণরা সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী ছিল। আমাদের সামনে দুটি অপশন ছিল, সরকারি চাকরি বা বিদেশে যেতে হবে। কিন্তু এই সরকারি চাকরিতেও কোটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়ালো।
তিনি বলেন, এখন নির্বাচন আসছে, অনেক রাজনৈতিক দল ‘এত কোটি’ চাকরির ব্যবস্থা করার কথা বলছেন। তরুণরা কেউ আর বেকার থাকবে না। কিন্তু এই কথাগুলো যখন আমরা বলি, আমরা যেন মিন করে বলি। আমরা কোনো প্রক্রিয়ায় কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করব, কোনো প্রক্রিয়ায় তরুণদের ক্ষমতায়িত করব, এটার প্রস্তাবনা কেউ হাজির করতে পারছে না।
‘আমরা ২৪ দফার ইশতেহারে শিক্ষা ইশতেহার দিয়েছি। তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য বিনিয়োগ, উদ্যোক্তা তৈরি ও চাকরি সবই লাগবে, কিন্তু গড়ায় হাত দিতে হলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় হাত দিতে হবে— যোগ করেন নাহিদ।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে চাইলে ইতিহাসের পেছনের দিকে আমাদের পড়াশোনা করতে হবে। কোনো সময়ের মধ্য দিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়ে উঠেছিল। বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে গড়ে উঠেছিল। ঢাবি এ ধরনের একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে সামনে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। বঙ্গভঙ্গ রদের পরে পূর্ব বাংলার মুসলমানদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বোঝানো হয়েছিল। কিন্তু কলকাতাসহ উচ্চবর্ণের হিন্দুরা এর বিরোধিতা করেছিল।
তিনি বলেন, একটি ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়ে উঠেছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আমাদের তাবৎ রাষ্ট্র, আইন সব প্রতিষ্ঠানই একটি উপনিবেশিত সমাজের মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ফলে আমাদের আগের যে শিক্ষাব্যবস্থা ছিল, তার সাথে একটা বিচ্ছেদ ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমাজ-সংস্কৃতির সংযোগ কমেছে। আগামীতে কীভাবে সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক তৈরি করা যায়, তা আমাদের ভাবতে হবে।
নাহিদ বলেন, ১৬ বছরে শিক্ষাব্যবস্থার বেহালদশা ছিল। সব প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা হয়েছে। দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। মেধার মূল্যায়ন ছিল না। কেউ প্রমোশন পাবেন কি-না, উপাচার্য, প্রোক্টর, প্রাধ্যক্ষ হবে কি না, তা দলীয় পরিচয়ের ওপর নির্ভর করত। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক উপাচার্য তার আত্মীয়-স্বজনদের চাকরি দিতে নতুন নতুন ডিপার্টমেন্ট খুলেছেন।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী কাঠামো এখনও রয়ে গেছে। শিক্ষা নিয়ে কোনো কমিশন হয়নি। কিন্তু অন্য যে কমিশন হয়েছে, তা নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। মাত্র ছয়টি কমিশন, যেগুলো সাথে নির্বাচন ও রাজনীতি সম্পর্কিত; সেগুলো নিয়েই সবার আগ্রহ। আলোচনাকে আমরা এর বাইরে আনতে পারিনি। এখন সেই আলোচনায়ও ঐকমত্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তনের জন্য মুখিয়ে আছে। পরিবর্তন ছাড়া অভ্যুত্থান, নির্বাচন, ঐকমত্য কমিশন সবই ব্যর্থ হবে। অভ্যুত্থানের সুফল যদি প্রত্যেক মানুষ না হয়, কেবল রাজনৈতিক দল, কিছু মুষ্টিমেয় ব্যক্তি হয়, তাহলে এটা কোনো পরিবর্তন হলো না। জনগণ আবার রাস্তায় নামবে।