আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে টাকার প্রভাব বন্ধ করতে হবে: সাইফুল হক

0

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, ‘আরপিও চূড়ান্ত করার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসলে আরপিও নিয়ে প্রশ্ন আসবে। আর তখন আবার সংশোধন এর প্রয়োজন হতে পারে।’

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সিইসিকে ৩১ দফা সুপারিশ দেওয়ার কথাও জানান তিনি।

সাইফুল হক বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে টাকার প্রভাব বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনকে অনেকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখেন। এ প্রবণতা রোধ না করা গেলে আগামী নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কালো টাকার খেলা বন্ধ করা না গেলে নির্বাচন কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।’

সংসদ নির্বাচনে জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার সমালোচনায় সাইফুল হক বলেন, ‘এটা ঠিক হয়নি। নির্বাচনী ব্যয়সীমাও ৫০ লাখ টাকা করা হয়েছে, যা দেশের বাস্তবতার বিপরীত। নির্বাচনে কালো টাকা অবৈধ অর্থ ও মাফিয়া বন্ধ করতে না পারলে আগামী সংসদ কালো টাকার মালিকদের ক্লাবে পরিণত হবে। গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এই টাকার খেলাটা বন্ধ করা দরকার। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে টাকার যে ছড়াছড়ি এটা বন্ধ করতে না পারলে গোটা নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাই একমাত্র দু থেকে পাঁচ শতাংশ বা ১০ শতাংশ বিত্তবানদের মধ্যে এটা কিন্তু সীমাবদ্ধ থাকবে।’

সাইফুল হক এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো যাদের প্রতীক আছে তাদের নিজস্ব মার্কায় নির্বাচন করা উচিত। কারণ যখন আমি একটা আলাদাভাবে আমি রাজনৈতিক দল আমি নিবন্ধন নিচ্ছি যখন আমি আমার নামের পক্ষে যখন একটা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, তখন আমার রাজনৈতিক নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে আমার নিজের মার্কা নিয়ে নিজেকে নির্বাচন করা। সুতরাং সেটা করা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু আমি একইসঙ্গে এটা মনে করি, এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে কিন্তু সময়টা দেওয়া দরকার। আগামী নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসে, এটা পুরোপুরি (জোট করলেও ভোট নিজ প্রতীকে) এখন জারি করাটা খুব বিবেচনার কাজ হবে না। আমরা মনে করি আগামী নির্বাচনে নিজ প্রতীকের বাইরে কেউ যদি অন্য কোনও প্রতীকে নির্বাচন করতে চান সেই সুযোগটাও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য রাখা দরকার। এর পরবর্তী নির্বাচনে নতুন বিধান রাখতে পারে।’

অবাধ, নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের লক্ষ্যে দলটির পক্ষ থেকে যে ৩১ মতামত ও সুপারিশ দিয়েছে ইসিতে সেগুলো হলো-

নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের কার্যকরী দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকা দরকার; ভোট কেন্দ্রে কেবলমাত্র সিল দেওয়ার গোপন কক্ষ ব্যতীত সারা দেশে সমগ্র কেন্দ্রে সিসিটিভির ব্যবস্থা রাখা ও ভোটকেন্দ্রের বাহিরে বড় স্ক্রিনের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, দেশী-বিদেশী নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের প্রতিনিধিদের প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখা; ভোট কেন্দ্রে গণমাধ্যমের প্রতিনিধি/ সাংবাদিকদের অবাধ প্রবেশের ব্যবস্থা থাকা; কোনও সরকারি চাকরিজীবী চাকরি ছাড়ার পাঁচ বছরের মধ্যে কোনও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না- এমন আইন প্রণয়ন করা; রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ করতে দলীয় মনোনয়ন ফরম ৫ হাজার টাকার অধিক মূল্যে বিক্রি করা যাবে না; নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন ফরম পেতে১০ হাজার টাকার বেশী গ্রহণ করা যাবে না। সিডি/ ভোটার তালিকা ক্রয় বাবদ কোন ফি ধার্য করা যাবে না; পোস্টার বর্তমান প্রচলিত আইন অনুযায়ী হবে; নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রার্থীদের সমন্বিত যৌথ প্রচারের ব্যবস্থা করা।

এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমে সকল দলের সমান প্রচারের ব্যবস্থা থাকা; এআই কনটেন্টসহ সামাজিক গণমাধ্যমে অপতৎপরতা ও অপতথ্যের ব্যবহার ও প্রচার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা; জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর সর্বোচ্চ ব্যয় বৃদ্ধি না করা; নির্বাচনের মনোনয়ন ফরমের সাথে হলফনামা জমা নিতে হবে; নির্বাচন শেষে তিন মাসের মধ্যে হলফনামা যাচাই-বাছাই করতে হবে ও অসামঞ্জস্যে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে; রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার যথাসম্ভব নির্বাচন কমিশন থেকেই দায়িত্ব দেওয়া; নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি বছর তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশন ও দুদকে জমা দেওয়ার বিধান রাখা।

আরও রয়েছে, রাজনৈতিক দল তাদের দলীয় সদস্য ছাড়া বাইরে থেকে কেবলমাত্র পাঁচ শতাংশ মনোনয়ন দিতে পারবে। সেক্ষেত্রে মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি কোনও সংগঠিত সংঘের/ক্লাবের/প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকেন তাহলে উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করতে হবে; যেকোনো পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তার নির্বাচনী এলাকার ভোটারের জনআস্থা হারালে তাকে রিকল করার বিধান রাখা; যেকোনো পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর তার নির্বাচনী এলাকার জনগণের কাছে জবাবদিহির ব্যবস্থা রাখা; অলাভজনক দায়িত্ব হিসাবে সংসদ সদস্যরা উন্নয়ন বরাদ্দে বা নানা প্রকল্পে তাদের যুক্ত থাকার বিধান বাতিল করা; তিনশত আসনেই না ভোটের ব্যবস্থা চালু করা।

সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি বন্ধ করা। মন্ত্রীদের একাধিক গাড়ি দেওয়া যাবে না। হলফনামায় যদি ঢাকায় ফ্ল্যাট বা বাড়ী থাকে সেসব সাংসদ/মন্ত্রীর নামে সরকারি বাড়ি বরাদ্দ না দেওয়া; এমপি/মন্ত্রী কোনও স্কুল, কলেজ, মন্দির, মসজিদ, মাদ্রাসা, ক্লাব, সংঘ, সমিতি, গির্জা ইত্যাদি ধরনের কোনও প্রতিষ্ঠানের কমিটির সর্বোচ্চ পদে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারবে না; রাষ্ট্রপতি/প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি/ মেয়র কেউ যাতায়াতের সময়ে জনগণের যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটিয়ে প্রটোকলের নামে রাস্তা বন্ধ করা যাবে না; নির্বাচনে টাকার খেলা কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে;

নির্বাচনে কথিত ‘শোডাউন’ কঠোরভাবে বন্ধ করা; নির্বাচনে সন্ত্রাস, গুণ্ডামি, প্রশাসনিক ম্যানিপুলেশান, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মীয় অনুভূতির রাজনৈতিক ব্যবহার রোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া; দ্বৈত নাগরিকগণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে এবং ভোট প্রদান করতে পারবেন না; প্রবাসীদের ভোট প্রদানের উপযুক্ত ব্যবস্থা চালু করা; ভোট প্রদানে যেকোনো ধরনের বাধাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া; ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করার প্রক্রিয়া পুরোপুরি স্বচ্ছ করা; এবং গুরুতর অনিয়ম ও জালিয়াতির কারণে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের পাশাপাশি গোটা আসনের নির্বাচন বাতিলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা রাখা।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.