ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে ২২ কোটি টাকার চাল আত্মসাৎ, দুই এমপিসহ ১৬ জনের নামে অভিযোগপত্র

0

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে সরকারি বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ করে প্রায় ২২ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে দুই সাবেক সংসদ সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে চার দফায় তদন্ত শেষে সম্প্রতি এই অভিযোগপত্র গাইবান্ধা সিনিয়র জজ আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য আগামী ১৩ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল হালিম।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ২,২৫৩টি ধর্মীয় অনুষ্ঠান, লিল্লাহ বোর্ডিং, শিশু সদন ও অনাথ আশ্রমে আগত মুসল্লিদের খাদ্য সরবরাহের জন্য বরাদ্দকৃত ৫ হাজার ৮২৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ আসে।

কিন্তু গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের যোগসাজশে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌর কাউন্সিলর এসব চাল আত্মসাৎ করেন।

এ ঘটনায় ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট দুদকের রংপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হোসাইন শরীফ বাদী হয়ে মহিমাগঞ্জ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ প্রধান, পিআইওসহ ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

তবে তদন্ত শেষে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ১০ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারা হলেন: সাবেক মহিমাগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ প্রধান, পিআইও জহিরুল ইসলাম, কামদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশাহেদ হোসেন চৌধুরী, কাটাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, শাখাহার ইউপি চেয়ারম্যান তাহাজুল ইসলাম, রাজাহার ইউপি চেয়ারম্যান লতিফ সরকার, রাখালবুরুজ ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন, কোচাশহর ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, শালমারা ইউপি চেয়ারম্যান আমির হোসেন ও গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর গোলাপী বেগম।

মামলার বাদী হোসাইন শরিফ বলেন, যাদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে তারা ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় মর্মে কমিশনে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এরপর মামলাটি চার দফায় তদন্ত করা হয়েছে। সেখানে তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। পরে কমিশন থেকে তাদের নাম বাদ দিয়েছেন।

দীর্ঘ চার বছর ১১ মাস ১২ দিন তদন্ত শেষে ওই মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এরমধ্যে এজাহার নামীয় ৯ জন ও নতুন ৭ জন।

এজাহার নামীয়রা হলেন— উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান (তৎকালীন) আকতারা বেগম, সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আহম্মেদ, দরবস্ত ইউপি চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম, তালুককানুপুর ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান, নাকাই ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কাদের প্রধান, ফুলবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মোল্লা, গুমানীগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ মোস্তফা জগলুল রশিদ, কামারদহ ইউপি চেয়ারম্যান (তৎকালীন) শরিফুল ইসলাম এবং শিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী।

এদিকে মামলার তদন্তকালে আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত থাকায় সাবেক দুইজন এমপিসহ নতুন ৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তারা হলেন, গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের আবুল কালাম আজাদ, গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনের উম্মে কুলসুম, স্থানীয় খাদ্য ব্যবসায়ী ফয়জুল ইসলাম, সাবেক গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল আহাদ, গোলাপবাগ খাদ্য গুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক, কামদিয়া খাদ্য গুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার বর্মণ এবং মহিমাগঞ্জ খাদ্য গুদামের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী আরজুমান নাহার।

দুদকের তদন্তে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা জাতীয় সংসদ সদস্য পদ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ইউএনও ও পিআইপর ওপর প্রভাবখাটিয়ে তার অনুসারী ইউপি চেয়ারম্যানরা বর্ণিত জিআর বরাদ্দকৃত চাল বিতরণের নামে আত্মসাৎ করে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.