দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে সরকারের কাছ থেকে কোনো রকমের সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। দেশনেত্রী খুবই অসুস্থ। আমরা বারবার তার মুক্তির দাবি করেছি, জামিন চেয়েছি এবং মুক্তির মধ্য দিয়ে তার চিকিৎসার দাবি জানিয়েছি। তাদের (সরকার) কাছ থেকে কোনোরকমের সাড়া পাইনি।
মানবিক কারণে অতি দ্রুত খালেদা জিয়াকে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
গতকাল শনিবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ সব কথা বলেন। পুলিশের বাধার মুখে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ মিছিল করতে না পেরে এ সমাবেশ করে দলটি।
সমাবেশে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সরকার মনে করছে নির্যাতন-নিপীড়ন, গ্রেফতার-গুম করে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে দাবিয়ে রাখবে, দমিয়ে রাখবে। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করে যে, এভাবে দমননীতি নিয়ে, নির্যাতন-নিপীড়ন করে জনগণের যে ন্যায্য দাবি তা কখনও দমন করা যায় না।
বিএনপি মহাসচিব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে নেতাকর্মীদের সমাবেশ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা তাদের (সরকার) কোনো সুযোগ দিতে চাই না। দয়া করে এখান থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ঘরে যাবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার একটা দখলদারী সরকার, বেআইনি সরকার। জনগণের কোনো ম্যান্ডেট তাদের নেই। ম্যান্ডেট ছাড়াই তারা জোর করে ক্ষমতায় একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার জন্য সমস্ত নির্যাতনের পথ বেঁছে নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে তারা গুম করেছে, খুন করেছে, নির্যাতন করেছে। আমাদের প্রায় ৩৫ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করেছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। তাকে আজকে ২ বছর ৭ দিন ধরে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে।
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে দেশনেত্রী কারাগারে নয়, আজকে সারা বাংলাদেশকে কারাগার করা হয়েছে। আজকে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছেন, দেশের মানুষ নিপীড়িত-নির্যাতিত।
তিনি বলেন, আজকে দেশ এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এই অবস্থা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে আগে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আজকে আমরা কর্মীদের যে সাহস দেখেছি এভাবে যদি আপনারা রাস্তায় থাকেন ইনশাআল্লাহ অচিরেই দেশনেত্রীকে আমরা মুক্ত করতে পারব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি যে ভালোবাসা এটাকে বুকে নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের লাঠিপেটা করুক প্রতিবাদ থামবে না। জেলখানায় ভরুক প্রতিবাদ থামবে না। আমাদেরকে গুম করুক প্রতিবাদ থামবে না। এই প্রতিবাদ চলতেই থাকবে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা মায়ের (খালেদা জিয়া) মুক্তির জন্য সমবেত হয়েছি। মায়ের মুক্তির সংগ্রাম কেউ থামাতে পারে না। কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না। মায়ের মুক্তি, গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও স্বাধীনতার মুক্তি। মায়ের মুক্তির আন্দোলনে আমাদের যোগ দিয়ে মাকে মুক্ত করতে হবে।
যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিবউন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও মহানগরের কাজী আবুল বাশার ও আহসানউল্লাহ হাসানের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস-চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, মহানগরের বজলুল বাসিত আনজু, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, কৃষক দলে হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ।
সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কর্মীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে বক্তব্য শুনেন। তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।
আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির শামা ওবায়েদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আজিজুল বারী হেলাল, মীর সরফত আলী সুপু, আমিনুল হক, শিরিন সুলতানা, আবদুস সালাম আজাদ, মীর নেওয়াজ আলী, শামীমুর রহমান শামীম, শহীদুল ইসলাম বাবুল, খন্দকার মাশুকুর রহমান, হারুনুর রশীদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, দেওয়ান মো. সালাহউদ্দিন, খন্দকার আবু আশফাক, সাখাওয়াত হোসেন খান, মজিবুর রহমান, সদ্য সমাপ্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন প্রমুখ।