যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন আমি বিচার চাইতেই থাকবো: অরিত্রীর বাবা

0

ছয় বছর আগে ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর শিক্ষকদের ‘অপমান সহ্য করতে না পেরে’ আত্মহত্যা করেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারী। অর্ধযুগ কেটে গেলেও মেয়ের বিচার নিয়ে সংশয়ে অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী। হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘মেয়ে হারানোর ব্যথা নিয়ে ছয়টি বছর কাটালাম। বিচার চাইতে গিয়ে নিজের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য ন্যায়বিচার পেলাম না। সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও রায়ের পর্যায়ে এসে আমাদের হতাশ হতে হলো। ছয় বার রায়ের তারিখ পড়লেও অদৃশ্য কারণে তা ঘোষণা করা হলো না। কিন্তু কেন রায় দিলো না, এখন আমার মেয়ের আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলার বিচার পাবো কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছি। তবে যতদিন বেঁচে আছি, ততদিন আমি বিচার চাইতেই থাকবো।’

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) ঢাকার কোর্ট রিপোর্টার্স ইউনিটির (সিআরইউ) কার্যালয়ে অরিত্রীর আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলার বিচার চেয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা দায়ের করেন তার বাবা দিলীপ অধিকারী। মামলাটি তদন্ত করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখাপ্রধান জিনাত আক্তারকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে ডিবি পুলিশ। ২০১৯ সালের ১০ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা (তৎকালীন) জজ রবিউল আলম, সাক্ষ্যগ্রহণও হয়। পরবর্তী সময়ে মামলাটি ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ-১২ এর বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালতে পাঠানো হয়।

গত ২৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের তারিখ ধার্য করেন। তবে রায়ের তারিখ ৬ দফা পেছানো হয়। সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই রায় ঘোষণার তারিখে আদালত স্বঃপ্রণোদিত হয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) পুনরায় মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলার তদন্তে তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতি পেয়েছেন মর্মে আদেশে উল্লেখ করেন বিচারক।

ঘটনার বিবরণ তুলে অরিত্রীর পিতা বলেন, আমার আদরের সন্তান অরিত্রী। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির একজন মেধাবী ছাত্রী ছিল। স্কুলের শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনা, শাখা প্রধান জিনাত আক্তার, অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নাজনীন ফেরদৌস আমাদের সামনে অরিত্রীর সঙ্গে নির্মম ও নির্দয় আচরণ করায় এবং বারবার টিসি (ট্রান্সফার) দেওয়ার হুমকি দেয়। এতে অরিত্রী মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পরে এবং ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর সে আত্মহত্যা করে।

মেয়ে হারানো এ বাবা আক্ষেপ করে বলেন, ‘পিবিআইতে খোঁজ নিয়েছি, তবে চার মাসের বেশি সময় পার হলেও এই সংস্থা তদন্তের কোনও আদেশ পায়নি। আজ অবধি কোনও অগ্রগতি নেই। এভাবে যদি সময় চলে যায়, তাহলে কীভাবে আমি ন্যায়বিচার পাব? আমি বিচার নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছি। ন্যায়বিচারের আশায় ছয়টি বছর পার করলাম। এই বিচার পেতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে। আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ন্যায়বিচার চাইছি।’

আসামিপক্ষের আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে দিলীপ অধিকারী বলেন, এ মামলার আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন মোশারফ হোসেন কাজল। যিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের একজন পিপি ছিলেন এবং বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় লড়েছেন। আমার মেয়ের আত্মহত্যা প্ররোচনায় মামলার স্বাক্ষীদের তিনি বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন। বিচার কাজে বাধা প্রদান করেন। তার কারণে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এখন ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com