আজি এ বসন্তে

0

বসন্ত এসেছে আবারও মনমোহিনী মুগ্ধতা ছড়িয়ে। চারপাশে এর আমেজ পাওয়া যাচ্ছে। গাছে গাছে সবুজ কিশলয়, কৃষ্ণচূড়া-শিমুল-পলাশের আগুনে রঙ, শালিক-টিয়া-বুলবুলি বিহঙ্গ দলের ফুলে ফুলে উড়াউড়ি- যেন রূপের আগুনে পুড়ছে ঋতুরাজ।

বসন্ত বাংলা জমিনে হাজির হয়েছে তার রূপ-যৌবন আর দখিনা হাওয়ায় ভর করে। বসন্তের এই মনোরম মাধুর্যে প্রকৃতি আজ উতলা। মাঠে-ঘাটে, পথে-রথে, বনে-মনে, বৃক্ষে-অন্তরীক্ষে, ঘরে-বাইরে সবখানেই বসন্তের বিমোহিত সুর বেজে উঠেছে।

বসন্তকে নিয়ে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাবনা একটু ভিন্ন। তিনি ঋতুরাজ বসন্তকে মূল্যায়ন করেছেন অন্য ভঙ্গিমায়। নজরুল নিজেকে বসন্তের বার্তাবাহী গানওয়ালা পাখিদের সহযাত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

মোতাহার হোসেনকে লেখা একটি পত্রে তিনি লেখেন, ‘কোকিল, পাপিয়া, বৌ-কথা কও, নাইটিঙ্গেল, বুলবুল- বিউটিফুল বলে এদের কেউ বদনাম দিতে পারেনি। কোকিল তার শিশুকে রেখে যায় কাকের বাসায়, পাপিয়া তার শিশুর ভার দেয় ছাতার পাখিকে। বৌ-কথা কও শৈশব কাটায় তিতির পাখির পক্ষপুটে। তবু আনন্দে গান গেয়ে গেল এরাই। এরা ছন্নছাড়া কেবলই ঘুরে বেড়ায়, কোথায় যায়, কোথা থাকে। তারপর এরাই স্বর্গের ইঙ্গিত এনে দিল।’

বিরহের কবি নজরুল প্রকৃতিতে আসা বসন্ত ক্ষণকে পৃথিবীর স্বর্গ বলে অভিহিত করেছেন। কবির ছন্দময় সুরে সওয়ার হয়ে গানের ওই পাখিগুলোই পৃথিবীতে সন্ধান এনে দেয় বসন্ত নামক স্বর্গের। বসন্ত যেমন ঋতুর রাজা তেমনি প্রেমের কলিও বটে।

কবি জীবনানন্দ দাশের বসন্ত ভাবনায় হতাশার চিত্র ফুটে ওঠে। অভিমানী কবি বসন্তের প্রতিটি রাতকে তার জীবনের বিস্ময় রজনী হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন। হয়তো প্রেমিকার প্রতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়েই কবি লিখেছেন- ‘কোন এক বসন্তের রাতে / জীবনের কোন এক বিস্ময়ের রাতে / আমাকেও ডাকেনি কি কেউ এসে জ্যোৎস্নায় / -দখিনা বাতাসে / ওই ঘাই হরিণীর মতো।’ মনের মানুষের অপেক্ষায় ছিল প্রেমিক মন, কিন্তু কেউ ডাকেনি। তাই তো জ্যোৎস্নার আলোয় আলোকিত বসন্ত রাতটি কবির কাছে মূল্যহীন। মন মানুষের কোনো ইঙ্গিত না পাওয়ায় বসন্ত রজনী অভিশপ্ত রাত হিসেবে ধরা দিয়েছে কবির কাছে।

‘বসন্ত বন্দনা’ কবিতায় নির্মলেন্দু গুণ চয়ন করেছেন- ‘হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্রসঙ্গীতে যত আছে, হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে / বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি / তবুও ফুটেছে জবা, দুরন্ত শিমুল গাছে গাছে, / তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্ত পথিক।’ বসন্তকে ঘিরে যত ফুল ফোটার কথা ছিল তত ফুল ফোটেনি বাগানে। অন্য ফুল না ফুটলেও জবা, শিমুল, পলাশ আর কৃষ্ণচূড়া ঠিকই ফুটেছে। বসন্তকালে ফোটা ওই ফুলগুলোকে পথিক যেমন ভালোবেসেছেন, কবিও তেমনি। তাই শিমুলতলায় বসা বসন্ত পথিকই কবির সহযাত্রী হতে পেরেছেন।

পহেলা ফাল্গুন শহরে যেভাবে উৎসবমুখর আনন্দচিত্তে উদ্যাপিত হয়, গ্রামে তার ছিটেফোঁটাও নয়। তবে আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশ গ্রামে না থাকলেও প্রাণউজাড়ি কোকিল ডাক, অজস্র ফুলের ফুটন্ত সৌরভ, নবপত্রে সজ্জিত বৃক্ষ এবং মুক্ত বিহঙ্গের কলতানে মাতোয়ারা যৌবনদীপ্ত বসন্ত রূপের প্রকৃত মাধুর্য কেবল গ্রামে থেকেই অনুভব করা যায়।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com