অনেক অমিলেও অনন্য
প্রথম দেখায় ভালবাসা! হ্যাঁ, সিনেমা. গল্পে এমন প্রেম কাহিনীর অভাব নেই। ব্যতিক্রমও আছে। না, মুুমিনুল হক সৌরভের প্রেমের গল্প অসাধারণ কিছু নয়। তবে তাদের ভালোবাসা ‘অনন্য’ বললেও ভুল হবে না। বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক বিয়ে করেছেন ফারিহা বশির নাজিফাকে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া এই তরুণী মুমিনুলের ক্রিকেটার বন্ধু সৈকত আলীর শ্যালিকা। পরিচয়টাও সেভাবেই। কিন্তু কীভাবে সেটি প্রেমে রূপ নিয়েছে এ গল্প শোনালেন মুমিনুলই।
মুমিনুল বলেন, বন্ধু সৈকত এবং আমি বিকেএসপিতে একই সঙ্গে পড়তাম। এরপর ঢাকায় ব্যাচেলর হিসেবে একই বাসায় থেকেছি। ওর শ্যালিকা আমার বউ। সৈকতের মাধ্যমেই পরিচয় হয়। প্রথম দেখা বাসায়। এরপর একদিন রাস্তায় হঠাৎ দেখা। সেখান থেকে ধীরে ধীরে কথা হয়, দেখা হয়। বলতে পারেন প্রথম দেখাতেই ভালো লাগে। আমি এমনই একজন খুঁজছিলাম। বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিবারকে জানাই। আমার মা-বাবাও ওকে দারুণ পছন্দ করেন। এরপর গেল বছর ১৯শে এপ্রিল বিয়ে করি। হ্যাঁ, আমাদের প্রেমে অসাধারণ কিছুই নেই। যেমনটা অন্যদের থাকে!
৩ বছর সফল প্রেমের বিয়ে। এতে থাকে আলাদা উদযাপন, নিত্যনতুন উপহার। ঘুরে বেড়ানো আর বিশেষ দিন হলে তো কথাই নেই। কিন্তু একেবারেই সাধারণ মানুষ মুমিনুল এ সবে নেই। তার স্ত্রী ঠিক বিপরীত। বিশেষ দিনগুলো নিয়ে আপ্লুত। আবার ভালোবাসার জন্য নিজেকেও বদলেছেন অনেকটাই। তিনি জানেন অতি উচ্ছ্বাসহীন মুমিনুলের ভালোবাসা এমনই।
আজ বিয়ের পর তাদের প্রথম ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’তেও দু’জন থাকতে পারছেন না কাছাকাছি। চিকিৎসার জন্য ফারিহা গতকালই পাড়ি জমিয়েছেন ব্যাংককে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আসন্ন টেস্টের প্রস্তুতি নিতে অধিনায়ক মুমিনুল রয়ে গেছেন দেশে। তাহলে কীভাবে দু’জন এই বিশেষ দিনটি পালন করবেন? মুমিনুল বলেন, আসলে আমার কাছে ওর (স্ত্রী) সঙ্গে প্রতিটি দিনই ভ্যালেন্টাইন ডে’র মতো। হ্যাঁ, খারাপ তো একটু লাগবেই দূরে থাকবে, কিন্তু এটাও ভালো যে ও চিকিৎসার জন্য বাইরে যাচ্ছে। সেটি আগে প্রয়োজন। একেবারেই উদযাপন হবে না তা নয়। ভিডিও কলে কথা বলবো। এসএমএস পাঠাবো।
প্রেমে সবচেয়ে বড় ভয় থাকে হারানোর। মুমিনুলের ক্ষেত্রেও কিছুটা ছিল। তবে সবকিছু পিছনে ফেলে তারা এখন দুই দেহ এক আত্মা। মুমিনুল বলেন, আমার কিছুটা ভয় ছিল শেষ পর্যন্ত বিয়েটা হয় কিনা। কারণ আপনি জানেনতো কক্সবাজার-চট্টগ্রামের মানুষ নিজেদের অঞ্চলের বাইরে বিয়ে দিতে চায় না। বিশেষ করে ঢাকায়। কিন্তু আমার পরিবার ওকে দারুণভাবে মেনে নিয়েছে। যেমনটি চেয়েছিলাম তেমন বউ পেয়েছি। যে আমাকেই নয় আমার পরিবারকে ভালোবাসবে। নামাজ পড়বে, অনেকটা সাধারণ হবে। আমি খুশি, আমি সুখী আমি তেমনই একজন পেয়েছি।
সবার ভালোবাসা হোক নিঃস্বার্থ
মুুমিনুল ও ফারিহা দু’জনের অনেক অমিলেও দারুণ সুখী তাদেরও চাওয়া প্রতিটি মানুষের ভালোবাসা হোক নিঃস্বার্থ। দু’জনই বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের এই বিশেষ দিনে একই সুরে বলেন, এই পৃথিবীতে যেমন নিঃস্বার্থ ভালোবাসা আছে, তেমনি অনেক কষ্ট আছে, প্রতারণাও আছে। দিন দিন মানুষের মধ্যে সত্যিকারের ভালোবাসা হারিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা দু’জনই সব সময় আশা করি সবাই যেন তার ভালোবাসার মানুষটিকে সত্যিকারের ভালোবাসা দিয়েই পাশে রাখে। আর ভালোবাসা দিবস যেন একটি দিনে আবদ্ধ না থাকে। সারা বছরের প্রতিটি দিনই হোক ভ্যালেন্টাইন ডে। আমাদের পক্ষ থেকে সবাইকে এই দিনটির শুভেচ্ছা।
শুধু আমায় ভালোবাসুক
ইংরেজি মাধ্যমে পড়া ঢাকার আধুনিকতায় বড় হওয়া ফারিহা বশির নাজিফা। কিন্তু তার স্বামী বিকেএসপি’র চার-দেয়ালে বন্দি শুধুই ক্রিকেট ভালোবাসা মুমিনুল। দু’জনের এত অমিলের পরও কীভাবে এত মিল? ফারিহা বলেন, হ্যাঁ, এটি সত্যি যে, আমাদের দু’জনের অনেক অমিল। যেমন আমি বিশেষ দিনগুলোতে খুবই উচ্ছ্বসিত থাকি। যেমন জন্মদিনে। কিন্তু ও (মুমিনুল) এসবের ধারের কাছে নেই। এমনও হয়েছে আমার জন্মদিনে কোনো উপহার না নিয়েই হাজির। এবারতো আমার জন্মদিন একমাস পর পালন করেছে। তবে ওর এই বিষয়গুলো আমার ভালো লাগে। আরেকটা কথা, এখন আমি কিছুটা ওর জন্য আর ও কিছু আমার জন্য নিজেদের বদলে ফেলেছি। তবে ও নিজে যেমন উপহার দেয় না, নেয়ও না। তবে ওর এসএমএসগুলো আমার দারুণ লাগে। এক এসএমএস কতবার যে পড়ি তার হিসাব নেই।
ক্রিকেটারদের নারী ভক্তের অভাব নেই। অনেকেই ক্রিকেটার বিয়ে করতে পাগল। কিন্তু ফারিহার ক্ষেত্রে এইসব কাজ করেনি। মুমিনুলের শান্ত স্বভাবটাই যে তার বেশি আপন। তিনি বলেন, আমার গোটা পরিবারে কেউ না কেউ খেলার সঙ্গে ছিল, আছে। আমার বাবা হকি প্লেয়ার ছিলেন। আমার বড় দুলাভাই ক্রিকেটার। তাই আমার মধ্যে ওর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই সব কিছুই কাজ করেনি। যে বিষয়টা ভালো লেগেছে ও বাবা-মাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। আমার কাছে মনে হয়েছে যে তার পরিবারকে এত ভালোবাসে সে আমাকেও ভালোবাসবে অনেক। আর পছন্দ, বড় বোনকে জানিয়েছি। সে-ই আব্বু আম্মুকে বলেছেন। এখন আমরা সুখে আছি। আর একটাই চাওয়া ও যেন এভাবেই আমাকে সারাজীবন ভালোবাসে।