‘নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র’
নিজের ও এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। অন্যভাবে বলতে গেলে এই অঞ্চলে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ (নিজের ও অন্যান্য দেশের বিভিন্ন ধরনের অপরাধ দমনে ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভূমিকা পালনকারী) দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেন ভূমিকা রাখতে পারে সেটি করতে সহায়তা করতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। এই তথ্য জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাক্সওয়েল মার্টিন।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) মার্কিন দূতাবাসে ‘ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি এবং বাংলাদেশে এর প্রভাব’ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এই বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি। ম্যাক্সওয়েল মার্টিন বলেন, ‘আমরা মনে করি এ অঞ্চলের সব দেশের নিজেদের সুরক্ষা এবং অন্যদের সহায়তা করার সক্ষমতা থাকা উচিত। আমরা এ ধরনের টেকসই ও ইতিবাচক নিরাপত্তা কাঠামো দক্ষিণ এশিয়ায় দেখতে চাই।’
তিনি জানান, ফোর্সেস গোল ২০৩০ বাংলাদেশের একটি উদ্যোগ এবং আমরা এটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করি। এর কারণ হচ্ছে আমরা চাই বাংলাদেশ দায়িত্বশীলভাবে এ অঞ্চলে নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার দেশে পরিণত হোক।
আমরা দেখেছি বাংলাদেশ নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে যাতে করে এ অঞ্চলে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। নিজের এবং এই অঞ্চলে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশটা সক্ষমতা অনেক গুণ বাড়িয়েছে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পেরে আমরা গর্বিত, তিনি জানান।
মার্কিন এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয় যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা দিচ্ছে।
ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক
ম্যাক্সওয়েল বলেন যে আমরা জানি বাংলাদেশ এ অঞ্চলের দেশগুলো এবং পৃথিবীর অন্য দেশগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলে এবং এটিতে কোনও সমস্যা নেই।
তিনি বলেন, আপনারা হয়তো খেয়াল করেছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কণ্ঠস্বর অনেক জোরালো এবং এটি সব ধরনের সম্পর্কের একটি অংশ। কিন্তু আমরা বহুমাত্রিক বিষয়ের দিকে জোর দিচ্ছি, যেমন অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক সহযোগিতা।
ভারতের লেন্স নয়
ভারতের লেন্স দিয়ে নয়, বরং নিজেদর লেন্স দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকে বলতে চেষ্টা করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ভারতের লেন্স দিয়ে দেখে। কিন্তু আমি মনে করি এটি ঠিক নয়। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক সম্পূর্ণ দ্বিপক্ষীয়, যেখানে আমরা একে অপরের সঙ্গে কাজ করি।
নিরাপত্তা ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের নৌ বাহিনীর সবচেয়ে বড় দুটি জাহাজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেওয়া। এর মধ্যে একটি জাহাজ গত বছরের জুনে মিয়ানমারে ঘূর্ণিঝড়ের পরে ত্রাণ সহাযতা দিয়েছিল। এই ধরনেরই নিরাপত্তা সহযোগিতা আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে চাই যেখানে এই অঞ্চলের মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে।
ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটিজি নিয়ে অনেকের ভেতরে ভুল ধারণা রয়েছে। কিন্তু আমরা চাই এটি যেন সবাই পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে, তিনি জানান।
কোয়াড কোনও জোট নয়– এই তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি একটি গ্রুপ যেখানে সমমনা কয়েকটি দেশ নিজেদের ভেতর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এ কারণে আমি মনে করি কোয়াড নিয়ে বাংলাদেশের ভয় পাওয়া উচিত নয় এবং আমার ধারণা বাংলাদেশ ভয় পায় না।