‘দেশ ও জাতি এখন বড় দুঃসময় ও কঠিন সময় পার করছে’

0

দেশ ও জাতি এখন বড় দুঃসময় ও কঠিন সময় পার করছে বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী ও সংগঠনের নেতারা। তারা বলেন, জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে ডা: জাফরুল্লাহর মতো দেশপ্রেমিক, আজীবন মুক্তিযোদ্ধার বড় প্রয়োজন ছিল।

গতকাল শনিবার (২০ এপ্রিল) গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আয়োজিত নাগরিক স্মরণসভায় এসব কথা বলেন তারা।

সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী পুরো জাতির অভিভাবক ছিলেন। আজীবন বিপ্লবী মানুষ ছিলেন। তিনি নিজেই ছিলেন বিপ্লব। নিজের জীবনে কখনো তিনি ‘না’ বলতে শিখেননি। তার জীবনে কখনো পরাজিতবোধ ছিল না। আজীবন যুদ্ধ করে গেছেন সমাজকে পরিবর্তনের জন্য, মানুষের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘এখন দেশ ও জাতি বড় দুঃসময় পার করছে, কঠিন সময় পার করছে। দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অঙ্গনে ভয়াবহ রকম আক্রমণ চলছে। নিগৃত হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে এদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ।
এই দুঃশাসনের অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য হাত-পা ছুড়ছি। যারা রাজনীতি করি, রাজনৈতিক কর্মী আছি তারা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছি। নির্বিচারে নির্যাতিত হচ্ছি, অনেকে জীবন দিচ্ছেন, প্রাণ দিচ্ছেন। তারপরেও এই দানবকে সরানো যাচ্ছে না। এটা বাস্তবতা। এর জন্য সকল জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। সবাইকে এক হয়ে সোচ্চার হয়ে শুধু রাজপথে নয়, সোচ্চার কণ্ঠে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ঝাঁকি দিতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভয়াবহ দুঃশাসনের মধ্যে পড়েছে দেশ। অবলীলায় হত্যা করা হয়, গুম করা হয় এখানে। বিচার ব্যবস্থা, জনগণের ভোটাধিকার ধ্বংস করা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলা হয়েছে। সব মানুষকে দাসানুদাসে পরিণত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার লেশমাত্র নেই এখানে। সেই চেতনাকে ফিরিয়ে আনতে হলে নতুন করে সবাইকে চিন্তা করতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে ডা: জাফরুল্লাহর প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

ব্র্যাকের চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার জীবনে চারটি বিষয়ে মূলত কাজ করেছেন। এর মধ্যে স্বাস্থ্য সেবায়- যেখানে সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে রাস্তায় বসে পড়তেন সেখানে তিনি মনোযোগী ছিলেন। নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি নারীর সম্মান নিয়ে তিনি সচেতন ছিলেন। নীতি সার্বভৌমত্ব হচ্ছে স্বাধীন দেশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেটায় অসম্ভব রকমের ঘাটতি রয়েছে। তিনি সেখানে কাজ করেছেন। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিষয়ে তিনি সবসময়ে উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। এছাড়া দেশের সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি দিনের পর দিন দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত তার পদচারণা ছিল। ডা: জাফরুল্লাহর জীবনে কোনো বিচ্যুতি হয়নি, তবে তার অনেক আকাঙ্ক্ষাও পূরণ হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কার্যকরী কৌশলী জোয়ার দরকার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই জোয়ার সৃষ্টি করলে দেশ এগিয়ে যাবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘অকুতভয় ডা: জাফরুল্লাহকে দেশের জন্য প্রয়োজন ছিল। তিনি সত্যের পক্ষে ছিলেন, দেশের পক্ষে ছিলেন। মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন লড়াই করে গেছেন। দেশে মুখোশধারী মুক্তিযোদ্ধার বাইরে তিনি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘যারা এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তারা এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান জানায়নি। দেশে এখন গুণি মানুষের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকাটাই কঠিন। বাংলাদেশ এখন দখলদারিত্বে পরিণত হয়েছে। সকল রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে পড়েছে।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী মেরুদণ্ড শক্ত করে রাষ্ট্র ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে মানুষের জন্য কথা বলেছেন, সবাইকে সাহস যুগিয়েছেন। এক দিনের জন্যও তিনি হতাশ হননি। এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তিনি সবাইকে এক কাতারে নিয়ে এসেছিলেন। ২০১৪ সালের পর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তিনি রাজনীতি না করলেও প্রতিবাদে সক্রিয় ছিলেন।’

রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ স্মরণসভার আয়োজন করে ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণসভা আয়োজন কমিটি।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com