আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য হচ্ছে ক্ষমতায় এসেই গণতন্ত্রের লাশ ফেলে দেয়া: রিজভী
আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য হচ্ছে ক্ষমতায় এসেই গণতন্ত্রের লাশ ফেলে দেয়া জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার গণতন্ত্রের মূল নীতিকে সমাধিস্থ করে এক সর্বগ্রাসী অত্যাচারী রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের মনে ঈদের কোনো আনন্দ নেই। বিশেষ করে মধ্যম ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এবারের ঈদ সবচেয়ে নিরানন্দ ও বেদনাদায়ক।
রিজভী বলেন, পবিত্র রমজান প্রায় শেষ পর্যায়ে, আর দুই তিন দিন পর উদযাপিত হবে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিন্তু ডামি নির্বাচনের ‘বাকশাল টু’ সরকারের ভয়াবহ দু:শাসনে পড়ে এ পবিত্র রমজানেও নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করছে সাধারণ মানুষ। নিত্যপণ্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সঙ্কট তো আছেই। এছাড়াও অবৈধ সরকারের লুটপাটের অর্থনীতির কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ ক্রমসম্প্রসারিত হচ্ছে। বাকস্বাধীনতা প্রয়োগের জন্য অনেক মানুষকে জুলুম ভোগ করতে হচ্ছে। সভা-সমাবেশ-মিছিল করার অধিকার আওয়ামী লীগ এখন এককভাবে ভোগ করছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে এরা কলুষিত করে ক্ষমতা দখলে রেখেছে। আওয়ামী সন্ত্রাস মাত্রাছাড়া হয়ে উঠেছে।
রোববার (৭ এপ্রিল) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য হচ্ছে ক্ষমতায় এসেই গণতন্ত্রের লাশ ফেলে দেয়া। অত্যাচার, লুটতরাজ সর্বক্ষেত্রেই বিদ্যমান। এরা ক্ষমতাসীন হয়ে রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা ও গায়েবি মামলা, হামলা, জেল, জুলুম, খবরদারী, অত্যাচার, উৎপীড়ন, খুন, গুম, লুণ্ঠন, দুঃশাসন চালিয়ে আসছে। জবরদস্তিমূলক ক্ষমতা ধরে রেখে অবৈধ আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী প্রায় ১৬ বছরে ক্রমবর্ধমান স্বৈরশাসনের নানামুখী ফরম্যাট পরিবর্তনের মাধ্যমে দেড় লাখের বেশি হয়রানিমূলক মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং দেশনায়ক তারেক রহমানসহ প্রায় ৫০ লাখের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করেছে। রাজনৈতিক আচরণের রীতি ও শালীনতাকে উপেক্ষা করে প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে সাবেক চারবারের প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়েছে, এখনো তিনি মুক্ত নন। যে মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে, তাতে তার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই। তাকে চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, গণতন্ত্র-ভোটাধিকারের দাবিতে আন্দোলনের অপরাধে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে এখনো কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ এখন ভয়ঙ্কর আতঙ্কের দেশ। ডামি নির্বাচনের পর অনেককে জামিন দিলেও আবারো নতুন নতুন মামলায় কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী হাজার হাজার মানুষকে গুম, খুন, গুপ্তহত্যার শিকার করা হয়েছে। তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত কেউই এই গায়েবি মামলা ও সরকারি নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে রেহাই পায়নি। দেশ যেন এখন কাঁটাতারের বেড়াঘেরা এক অবরুদ্ধ জনপদ।
তিনি বলেন, সরকারের সাজানো মিথ্যা মামলায় জর্জরিত বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত প্রায় সকল নেতাকর্মী। কারো কারো বিরুদ্ধে চার শ’ থেকে পাঁচ শ’ মামলাও রয়েছে। একদিকে মামলার চাপ আরেক দিকে ব্যবসা বাণিজ্যসহ সব হারিয়ে অনেকটা নি:স্ব হয়ে পড়েছে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীরা। এছাড়াও এখনো যারা কারবান্দি রয়েছেন, এমন নেতাকর্মীর সংখ্যাও কম নয়। কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে এবারো ঈদ করতে হচ্ছে দলটির অজস্র নেতাকর্মীকে। অবৈধ ও ডামি নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে রাজনৈতিক মামলায় বন্দি এসব নেতাকর্মী।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ আটক রাজবন্দীদের পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগেই নি:শর্ত মুক্তির জোর আহবান জানান রিজভী। সেই সাথে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানসহ সকল বিএনপি নেতার মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে বলেও দাবি করেন।
তিনি বলেন, গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে পুলিশ পরিকল্পিতভাবে হামলা করার পর থেকে গণতন্ত্রের প্রতি ঈর্ষাতুর ও বিদ্বিষ্ট প্রধানমন্ত্রী বিএনপির কর্মসূচি ঠেকাতে সারাদেশে গণহারে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। ওই সময় বিএনপির মহাসচিবসহ এবং অনেক শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে বন্দি করা হয়। ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের পর বেশিরভাগের জামিনে মুক্তি মিললেও পরে আবারো নতুন মামলায় অনেককে কারাগারে পাঠানো হয়। ডামি নির্বাচন করতে একদিকে চলে গ্রেফতার নির্যাতন, আরেকদিকে শুরু হয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুরোনো মামলার সাজার রায়। প্রায় এক শ’ মামলায় কমপক্ষে ১৮ শ’ নেতাকর্মীকে আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়।