শীত সবচেয়ে বেশি নেমে গেছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে
শীত পড়েছে সারা দেশে। তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি নেমে গেছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে। খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে হাড় কাঁপানো শীত পড়েছে। চুয়াডাঙ্গা ও রাজশাহী জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। এ ছাড়া ডিসেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহের শুরুতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে এবং তা এ বছরের শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। শীত পড়লেই শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত নানা রোগ-শোকে আক্রান্ত হয়ে থাকে। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন, শীতের শুরুতেই শিশু ও বৃদ্ধরা উষ্ণ পরিবেশে থাকলে অথবা রাখা হলে শীতের রোগগুলো থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। তাপমাত্রা কমে গেলে কৃষকরাও ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
গত কয়েক দিন যাবত দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়ায় দিনের কয়েক ঘণ্টা সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে আসতে বাধা পাচ্ছে। দিনের একটি বিশেষ সময় ঠিক মতো গরম হতে না পারায় ঠাণ্ডা জেঁকে বসেছে। এ সময়ে উপমহাদেশের উচ্চ চাপ বলয়ের একটি অংশ ভারতের বিহার রাজ্যের কাছাকাছি পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করছে। এর একটি প্রভাব বাংলাদেশে খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে পড়েছে। এ ছাড়া ভূপৃষ্ঠ ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ায় ঊর্ধ্বাকাশে জেট স্ট্রিমের প্রবাহও অপেক্ষাকৃত নিচে নামমে শুরু করেছে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় চলে যাওয়ার পর দক্ষিণ থেকে অপেক্ষাকৃত আর্দ্র বায়ু বাংলাদেশসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রবাহিত হতো তা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারণে বাংলাদেশে হঠাৎ করেই ঠাণ্ডা পড়েছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আজ শনিবার দিনের বেলার তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও গত রাতের (শুক্রবার দিবাগত রাত) তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে দিনের বেলা তাপমাত্রার তেমন পরিবর্তন না হলেও ঠাণ্ডা অনুভূতি বাড়তে পারে কুয়াশা চলমান থাকায়।
গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গার আশ-পাশের অঞ্চলগুলোতেও নিম্ন তাপমাত্রা কাছাকাছি পর্যায়ে ছিল। রাজশাহী বিভাগের সবগুলোর অঞ্চলের নিম্ন তাপমাত্রা ছিল অনেক কম। রাজশাহীতে নিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঈশ্বরদীতে ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বদলগাছীতে ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর বিভাগের নিম্ন তাপমাত্রা ১২.৫ থেকে ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। অন্য দিকে ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অপর দিকে টাঙ্গাইল, ফরিদপুর ও মাদারীপুরে নিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গোপালগঞ্জে ছিল ১১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল ইউরোপিয়ান স্যাটেলাইটের আবহাওয়া মডেল বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, আগামী ২৩ ডিসেম্বরের পর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। বৃষ্টি না থাকায় এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কম থাকায় কিছু ফসলের ক্ষতি হতে পারে। যেমন শীতে আলু গাছে পাতা শুকিয়ে যেতে পারে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায়। অন্য দিকে বোরো ধানের বীজতলাও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শীত আসলেই ঠাণ্ডাজনিত কারণে কাশি, জ্বর, হাঁপানি হতে পারে। এমনকি ঠাণ্ডা থেকে অনেকের নিউমোনিয়াও হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা এ সময় বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। তারা বলছেন, কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হলে শীতের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। চিকিৎসকরা বলছেন, শীতে উত্তমরূপে শরীর ঢেকে রাখতে হবে। গরম পানি দিয়ে গোসল করে দ্রুত শরীর শুকিয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া কখনো ঠাণ্ডা কিছু না খাওয়া এবং ঘন গরম জাতীয় পানীয় পান করা হলে অধিকাংশেরই ঠাণ্ডাজনিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। তা ছাড়া তিন দিনের বেশি কাঁশি হলে এবং তিন দিনের বেশি জ্বর থাকলে নিজে চিকিৎসা না করে অবিলম্বে হাসপাতালে অথবা ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। শুরুতেই রোগের চিকিৎসা হলে বড় ধরনের সমস্যা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।