প্রেসব্রিফিং —

0

সোমবার, জানুয়ারি ২৭, ২০২০ রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয়কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের প্রেসব্রিফিং এর বক্তব্য।

সুপ্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম। সবাইকে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে, এদেশের মানুষের প্রাণপ্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখে হত্যার আয়োজন সম্পন্ন করেছেন নিশিরাতের অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে দেখে এসে তাঁর স্বজনরা কান্নাভেজা কন্ঠে জানিয়েছেন, দিন দিন দেশনেত্রীর অবস্থার আরও অবনতি হচ্ছে। সারাক্ষণ বমি করছেন। তাঁর গায়ে প্রচন্ড জ্বর। সারাক্ষণ তীব্র ব্যাথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। বাম হাত সম্পূর্ণ বেঁকে গেছে। পিজি হাসপাতালে নামকাওয়াস্তে যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। তাঁর যে ভয়াবহ অবস্থা, দ্রুত উন্নত চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে হবে। তাঁর শরীর খুবই খারাপ। শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে বেগম খালেদা জিয়া কথা বলতে পারছেন না। সেখানে ভর্তির পর এখনও তাঁর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না, কিছু খেতে পারছেন না, হাত পা নাড়াতে পারছেন না। তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না। সরকারপ্রধানের প্রতিহিংসার আগুনে দেশনেত্রী কারাবন্দি, আর এই কারাবন্দী অবস্থায় যথাযথ চিকিৎসার অভাবে তাঁর শারীরিক অসুস্থতা গভীর সংকটাপন্ন। অথচ বিএসএমএমইউ হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডও তাঁর অসুস্থতা যে দেশে নিরাময়যোগ্য নয় সেটি উল্লেখ করলেও আদালত তাঁকে জামিন দেয়নি। ন্যায়বিচারহীনতার এই বিপজ্জনক ছবি পৃথিবীতে বিরল। বিএসএমএমইউ এর পরিচালক দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে গতকাল এক সংবাদ বিবৃতি দিয়েছেন। এই বিবৃতি মূলত: শেখ হাসিনারই ফরমান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আশানুরূপ উন্নতি হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থিতিশীল রয়েছে, তাঁর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে, মুখের ঘা সেরে গেছে, দাঁতের ব্যথা ভাল হয়েছে, শারীরিক দুর্বলতার উন্নতি হয়েছে, আর্থারাইটিসের ব্যথা কমানোর জন্য আধুনিক চিকিৎসা সেবা প্রদানে তাঁকে পরামর্শ দেয়া হয় কিন্তু দেশনেত্রী নাকি আর্থারাইটিসের চিকিৎসা নিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেননি, ফলে আর্থারাইটিসের আশানুরুপ উন্নতি হচ্ছে না।

বন্ধুরা, পরিচালকের এসকল বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য, মনগড়া ও ফরমায়েশী বিবৃতি। সেখানে আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই বলেই তো কাদের সাহেবরা বিদেশে চিকিৎসা নেন। শেখ হাসিনা কারাবন্দী থাকা অবস্থায় স্কয়ার কিংবা বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। গণভবনে বসে শেখ হাসিনার তৈরী করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি বিএসএমএমইউ হাসপাতালের নামে প্রচার করা হয়েছে। সেখানে ইনিয়ে বিনিয়ে দেশনেত্রীকে সুস্থ বলে প্রচারের অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। এর প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি লাইন শুধু মিথ্যাই নয়, একজন চিকিৎসকের পেশাদারী এথিক্সের পরিপন্থী। পরিচালক নিজে একজন ডাক্তার হয়ে এরকম কুৎসিত মিথ্যাচার করতে পারেন যেটি এই মহান পেশাকে কলঙ্কিত করে। দেশের চারবারের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে পরিচালকের বিবৃতি গণভবনে তৈরী, আমি এই জীবন্ত কল্পকাহিনীর বিবৃতি ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করছি।

বন্ধুরা,
আপনারা জানেন, দখলদার ভোটলুট, ব্যাংক লুটের সরকার সত্যকে ভয় পায়। তারা কখনোই সত্য প্রকাশ করবে না এটাই স্বাভাবিক। দেশনেত্রীর অসুস্থতা নিয়ে সরকারী চাপের মুখে গণমাধ্যমে সব সংবাদ প্রকাশিত না হলেও বিশ^ব্যাপী গণমাধ্যমে আসল ঘটনা প্রকাশিত হচ্ছে। সম্প্রতি সুইডেনের সংবাদ মাধ্যম নেত্র নিউজে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাবন্দী বিএনপি নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া “পঙ্গু অবস্থায়” আছেন এবং দৈনন্দিন কাজের জন্য তিনি অপরের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে এই তথ্য দিয়েছে তাঁর চিকিৎসার জন্য গঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের একটি মেডিক্যাল বোর্ড। সুপ্রীম কোর্টের রেজিষ্ট্রার জেনারেলের কাছে বিএসএমএমইউ এর ভাইস চ্যান্সেলরের স্বাক্ষরিত একটি চিঠির সাথে মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্টটি পাঠানো হয় ২০১৯ সালের ১১ই ডিসেম্বর। পরদিন, অর্থাৎ ১২ই ডিসেম্বর, আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার এই ভয়াবহ পঙ্গু অবস্থার প্রতিবেদন পাওয়া সত্বেও জামিনের আবেদন বাতিল করে দেয় সরকারের সর্বোচ্চ মহলের হস্তক্ষেপে। নেত্র নিউজ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্টটির একটি রিডাক্টেড কপিও (স্পর্শকাতর অংশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে এমন) প্রকাশ করে।
আমরা সরকারকে বলবো-আজই দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে উন্নত হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসার সুযোগ প্রদান করা হোক। তাঁকে বেচে থাকার সুযোগ দিন।

সুহৃদ সাংবাদিকবৃন্দ,
গতকাল দুপুরে গোপীবাগ এলাকায় ধানের শীষের প্রচারণায় আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর অফিস থেকে সরকারদলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অতর্কিতে হামলা ও গুলি চালালে ইশরাক হোসেনসহ ২০/২৫ জন নেতাকর্মী এবং সাংবাদিকরা গুরুতর আহত হয়। গুরুতর আহতদের রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গণমাধ্যমে এই খবর ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। অথচ পুলিশ উল্টো ১৫০ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। মেয়র প্রার্থী ইশরাক ও নেতাকর্মীদের ওপর এই হামলা ভোটের দিন ভোট ডাকাতির পূর্ব-মহড়া। জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে এই হামলা। দেশে যে আইনের শাসনের বদলে পুলিশী শাসন চলছে তা গতকালের হামলা ও মামলায় তা আবারও প্রমানিত হলো। গতকাল আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কাপুরুষোচিত ও বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি করছি।

ধন্যবাদ সবাইকে। আল্লাহ হাফেজ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com