নির্দলীয় সরকারের অধীনে ইসি গঠনের পর নির্বাচন করতে হবে: বিএনপি মহাসচিব

0

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনোদিন কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নিদর্লীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে সেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই কমিশনের অধীনে নির্বাচনের মাধমে জনগণের সরকার গঠিত হবে।

গতকাল শনিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে নগরীর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে আয়োজিত বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী দিয়েও গাইবান্ধার নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। দুপুরেই নির্বাচন বন্ধ দিয়ে আবারো প্রমাণ হয়েছে যে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। তাই আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। এবং সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালে কেউ ভোট দিতে পারেনি। আবার প্রমাণিত হয়েছে গাইবান্ধার উপনির্বাচন। বলেছিল নতুন নির্বাচন কমিশন দিয়েছি এই নির্বাচন কমিশনের ধনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমরা আগেই বলেছিলাম সরকার পরিবর্তন না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। ১৩৮০টি সিসিটিভি লাগিয়ে, পুলিশ, র‌্যাব এমনকি সেনাবাহিনী দিয়েও সেই নির্বাচন হয়নি। দুপুরেই সে নির্বাচন বন্ধ করে দিয়েছে।

আওয়ামী লীগকে চোরের দল আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, কথাটি আমার নয়, দুর্ভিক্ষের সময় ওদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানই বলেছিলেন। আওয়ামী লীগের আমলে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। আবার তারই কন্যা দুর্ভিক্ষের কথাই বলছেন। চুরি আর সন্ত্রাস আওয়ামী লীগের মুদ্রাগত ও প্রকৃতিগত দোষ। উন্নয়ন ও কুইক রেন্টালের মানে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে পাচার করছে। আওয়ামী লীগ কথায় কথায় লাঠি নিয়ে আসে, হুংকার দেয়।

তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, হুংকার দিয়ে আর লাভ হবে না। সাধারণ মানুষ এখন সচেতন।

ফখরুল বলেন, সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে সংবাদপত্রে স্বাধীনতা খর্ব করেছে। ফেসবুক নিয়ন্ত্রণ করতেই ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন করেছে। বর্তমানে জ্বালানি তেলে, চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য লাগামহীন। ১০ টাকায় চাল, ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার কথা বলে কিছুই করতে পারে নাই। বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করায় মানুষ সঠিক বিচার পায় না। বিএনপি’র পাঁচজন বীরসেনা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য প্রাণ দিয়েছেন। তাদের রক্তদানকে বৃথা যেতে দেয়া হবে না।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য সারাজীবন যিনি চেষ্টা চালিয়েছেন, সংগ্রাম করেছেন, তাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। সেই দেশনেত্রীর জন্য ময়মনসিংহের বন্ধুরা মঞ্চে একটি চেয়ার খালি রেখেছেন। সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মির্জা ফখরুল।

সমাবেশে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ দেখিয়েছে, এখন ময়মনসিংহের মানুষ দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন করে। এদেশের মানুষ এখন জেগে উঠছে, জেগে উঠবে। ইনশাআল্লাহ আপনাদের সবার সমবেত প্রচেষ্টায় এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করব। এই হোক আমাদের আজকের শপথ।

তিনি বলেন, আজকে আমি যখন ময়মনসিংহে রওয়ানা দিলাম। গাজীপুর পার হওয়ার পর মনে হলো হরতাল চলছে নাকি কারফিউ চলছে। রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই, ট্রাক নেই। কিছু ছোট ছোট ট্রাকে আমাদের কিছু নেতাকর্মীরা আসছে। এরপরে শুনলাম মাঝখানে লাঠিসোঁটা নিয়ে নাকি ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে। তারপর যখন কাছে পৌঁছলাম, দেখলাম সোনার ছেলেরা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেছে। আমাদের ছেলেরা তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে আজকের সভা প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের মানুষ কোনো বাধা মানবে না। তারা অবশ্যই এই দেশকে মুক্ত করে ছাড়বে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমরা এখানে এসেছি আমাদের দেশকে আবার সঠিক জায়গায় ফিরিয়ে আনতে। আজকের এই সমাবেশে দেখছেন চেয়ারটা খালি আছে। এটা কার জন্য? দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জন্য। তিনি এখন কারাবন্দী। তিনি আমাদের দলের প্রধান। তিনি গণতন্ত্রের জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তাকে এখন মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। সেজন্য আমরা এই চেয়ারটা খালি রেখেছি আমাদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সম্মেলনে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com