গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন বাতিল: বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনার নাটক না তো!
জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচন নির্বাচন কমিশন বাতিল প্রসঙ্গে ড. বদিউল আলম বলেছেন, এটা নাটকের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী নির্বাচনে আনার টোপ কিনা সেটা আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে পারি না। তবে এটা হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তার মতে, সরকার প্রমাণ করার চেষ্টা করছে তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে, আর ইসি প্রমাণ করার চেষ্টা করছে তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক। অর্থাৎ দুই দিকেই উইন উইন। তিনি বলেন, সরকারের জয় হলো তারা দেখাচ্ছে এই নির্বাচন কমিশন তাদের অনুগত না। আর ইসি দেখাচ্ছে তারা নিরপেক্ষ। দৈনিক নয়া দিগন্তকে গতকাল বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিশ্লেষণ হলো, একদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) অতি তৎপর হয়ে ভোট বাতিল করেছে, আর সরকারি দল তাদেরকে তুলোধুনো করছে। শুধু তাই নয়, সরকারি দল প্রমাণ করার চেষ্টা করছে তাদের প্রতি ইসি অবিচার করেছে। ৩০ জন প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর নিয়ে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে নির্বাচন সঠিক হয়েছে। তিনি বলেন, ইসি গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনে একটা নজিরবিহীন কাজ করেছে। অনিয়ম দেখামাত্রই তারা ভোট বন্ধ করে দিয়ে ভালো কাজ করেছে। তাদের বোধোদয় হয়েছে। তারা ধন্যবাদ পাওয়ার কথা।
এটা নাটক কি না জানতে চাইলে ড. মজুমদার বলেন, আমরা বলতে পারবো না। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনটা ফুরিয়ে গেছে বলা হচ্ছে। কিন্তু এটা সঠিক না, বরং এর উল্টো। গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচনের বার্তা হলো, একটা উপনির্বাচনও দলীয় সরকারের অধীনে হলে সে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। তিনি বলেন, অতীতে ১১টি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে চারটি নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হয়েছে। সেটা সুষ্ঠু হওয়ার কারণে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। আর ৫টি হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা, সেখানে যারা ক্ষমতায় ছিল তারাই ক্ষমতায় টিকে গেছে। উপনির্বাচন প্রমাণ করলো দলীয় সরকারে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, বরং আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। বানচাল হওয়ার আশঙ্কা আছে।
এ উপনির্বাচনের সাথে মাগুরা নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরো কত নির্বাচনের সম্পর্কই তো খোঁজা যায়। এতে আবার প্রমাণ হলো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪৫ হাজার বুথ হবে। এখানে সিসি ক্যামেরা বসিয়ে তারা কতটার খোঁজ নিতে পারবে। এটা হলো একটা উদ্ভট চিন্তা। তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করলো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের কথা শোনে নাই। তাহলে কি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে? আরপিও অনুযায়ী দুই থেকে সাত বছর কারাদণ্ড হওয়ার কথা তাদের, তারা কি সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারবে? দেখিয়ে দিক যদি পারে। দেখি কয়জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে?
ইসি ইভিএমকেও পুনর্বাসন করার চেষ্টা করেছে। ইভিএমে যে অন্তর্নিহিত সমস্যা আছে সেটা। ডাকাতরা যে স্যুটকোট পরে আসে। ওই যে সুন্দর বিল্ডিংয়ে বসে। সেই ডাকাতদের কথা আমাদের ভুলানোর চেষ্টা করছে। ইভিএম নিয়ে কারসাজি করা যায়। ভুলভাল ফলাফল দিতে পারে। কারসাজি করতে পারে। সেই ইভিএমকে তারা পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছে।