বিএনপিকে কোনো বাধাই আর আটকে রাখতে পারবে না: মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ময়মনসিংহে বিএনপির সমাবেশে বাধা দিতে আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচির ডাক দেওয়া থেকেই প্রমাণ হয় আওয়ামী লীগ কখনো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তারাই সব সময় সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার কাজ করেছে।
তবে বিএনপি থেমে থাকবে না, কোনো বাধাই আর বিএনপিকে আটকে রাখতে পারবে না।
গতকাল শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
ফখরুল বলেন, এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশ এখন একনায়কতন্ত্র দেশ হয়ে গেছে। এটা গণতান্ত্রিক দেশ নয়। এই পরিস্থিতিতে লিবারাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি হিসেবে এর মধ্যেই যতটা সম্ভব কাজ করার চেষ্টা করেছি। গত ২-৩ মাস ধরে আমরা যে আন্দোলনগুলো করছি, প্রত্যেকটা আন্দোলনই অত্যন্ত জনসম্পৃক্ত। আমরা আন্দোলন করছি, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে, জনগণের সমস্যাগুলো নিয়ে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের দাবিতে, আমাদের অধিকারগুলোকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য আমরা আন্দোলন করছি।
তিনি বলেন, সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আমরা আমাদের কর্মসূচি নিয়ে গেছি। দ্বিতীয় ধাপে আমরা বিভাগীয় সমাবেশ করছি। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে আমরা শেষ করেছি। যদিও ওই সমাবেশে আসার পথে পথে আমাদের নেতা-কর্মীদের আক্রমণ করা হয়েছে। গাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এমনকি গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। আমাদের এই আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে আমাদের ৪ জন নিহত হয়েছেন। পরবর্তীতে যশোরের একজনকে আওয়ামী দুর্বৃত্তরা নির্যাতন করে হত্যা করেছে। সেগুলোকে কেন্দ্র করে অথবা তারাই গোলযোগ তৈরি করে সেটাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় আমাদের আসামির সংখ্যা নতুন করে ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আমাদের যে অধিকার; সভা করার অধিকার, মিছিল-সভা করার অধিকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাই এবং সেভাবেই আমরা এগুতে চাই। কোনো বাধাই আমরা মানবো না এবং দেশের মানুষ মানবে না। চট্টগ্রাম, জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের সমাবেশ দিয়ে সেটা প্রমাণিত হয়েছে। আগামীকাল ময়মনসিংহে একটি সমাবেশ আছে। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ তার আসল চেহারা নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। তারা আলাদা একটি সমাবেশ ডেকেছে এবং সেটা ময়মনসিংহ শহরেই ডেকেছে। যেটার কোনো কারণ ছিল না। আমাদের সমাবেশ অনেক আগে ঘোষণা করা। আমাদের প্রচার-প্রচারণা চলছে। আবারও কৃষ্ণচূড়া চত্বরে সমাবেশ ডাকার অর্থ হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। সন্ত্রাস তারাই সৃষ্টি করে এবং তারাই বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার কাজ করেছে, করেই যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক হলো, সেটা রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা নিয়ে করছে। রাষ্ট্রকে তারা সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আমরা যারা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছি, তারা সংগ্রাম চালিয়ে যাব। এবার কোনো বাধাই আমাদের বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন যদি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হয়, তাহলে সে নির্বাচন বাংলাদেশে হবে না। বিএনপি তো অংশগ্রহণ করবেই না, সে নির্বাচন হবে না বাংলাদেশে। তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না।
আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ রাষ্ট্রে বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্রে বিশ্বাস করলে ওরা সংবিধানে বিশ্বাস করতো। সংবিধানে যেসব বিধান এখনো আছে, সেখানে পরিষ্কার করে বলা আছে একজন নাগরিকের সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার আছে, তার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। আমি জানি না, উনারা আমাদের বক্তব্যগুলো ঠিকমতো বুঝতে পারেন কি না।